• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
সংসদে প্রধানমন্ত্রী

নিজের ভাগ্যে কী ঘটবে, কোন দিন তা চিন্তা করিনি


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ১৩, ২০১৭, ০১:১৬ এএম
নিজের ভাগ্যে কী ঘটবে, কোন দিন তা চিন্তা করিনি

ঢাকা : প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা নয়, আজকে ক্ষমতা আমার ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য নয়। ক্ষমতা ভোগ করার জন্য রাজনীতি করি না। দেশের জন্য, দেশের জনগণের জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। আমি রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে ছিলাম। আমি নিজে প্রধানমন্ত্রী ছিলাম এবার নিয়ে তিনবার। নিজের জন্য কী করব সে কথা জীবনেও চিন্তা করিনি। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়েছি, আল্লাহর রহমতে তারাও আমাকে সাহায্য করে। ওরা একজন আইসিটি, একজন অটিজম নিয়ে কাজ করে বিশ্বের নজর কেড়েছে। আমার বোনের মেয়ে বৃটেনে দ্বিতীয়বার এমপি হয়েছে।’

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার (১২ জুলাই) বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে মহিলা এমপি ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। বক্তব্যের এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীকে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়তে দেখা যায়।  

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়েছি। আমি ও আমার বোনের ৫টি ছেলে মেয়ে- তাদেরকে একটা কথা বলে দিয়েছি। লেখাপড়া শিখেছ, ওইটুকুই তোমাদের সম্পদ। তারাও প্রতিটি কাজে আমাদের সহায়তা করছে। কখনো বিরক্ত করে না, এই ব্যবসা দিতে হবে সেই ব্যবসা দিতে হবে। এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে। এই ধরনের বিরক্ত কখনোই তারা করেনি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি গ্রামের পর গ্রাম হেঁটেছি। সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। কখনও দুর্ভিক্ষ হয়েছে, দুর্ভিক্ষ পিড়িত এলাকায় গিয়েছি। কখনও ঝড় হয়েছে সেখানে রিলিফ দিতে গিয়েছি। পেয়েছি সাধারণ মানুষের ভালোবাসা। কত মা-বোন ছুটে এসেছে, কাছে টেনে নিয়েছে, বুকে টেনে নিয়েছে। মাটির ঘরে বসিয়েছে। উঠোনের রাস্তায় ডাব কেটে দিয়ে বলেছে, মা এটা খাও। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে শুধু বলেছে, বাবা জীবনটা দিয়ে গেছে তুমিও পথে নেমেছো মা? তুমি পথে নামছো আমাদের জন্য?
তিনি বলেন, আমি মানুষের সাথে মিশেছি। পেয়েছি সাধারণ মানুষের ভালোবাসা। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আরো বলেন, এই যে ভালবাসার পরশ, মা-বাবা হারানোর বেদনাতো সেখান থেকেই ভুলে গেছি। সেখান থেকেই শক্তি পেয়েছি। এই মানুষগুলোর জন্যইতো আমার বাবা জীবন দিয়েছেন। তাই এদের জন্য জীবনের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে আমি প্রস্তুত। কোনো ব্যাক্তিগত আকাঙ্ক্ষা নয়, আজকে ক্ষমতা আমার জন্য ব্যাক্তিগত আকাঙ্ক্ষা পুরণের জন্য না। আমি রাষ্ট্রপতির মেয়ে ছিলাম, প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে ছিলাম। মন্ত্রীর মেয়ে ছিলাম। আমার বাবা ৫৪ সালে মন্ত্রী ছিলেন। নিজের জন্য বাবা কিছু চান নি। তিনি জনগণের জন্য রাজনীতি করে গেছেন। আমিও ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করি না। আমি নিজে প্রধানমন্ত্রী ছিলাম ২বার। এইবারসহ ৩বার। কখনও নিজের ভাগ্যে কি করব, সে কথা জীবনেও চিন্তা করি নি।  

ক্ষমতাকে মানুষকে সেবা করার সুযোগ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেবক হিসেবে দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগটা পাচ্ছি। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বারবার নির্বাচিত করে দেশের মানুষকে সেবা করার সুযোগ করে দিচ্ছে।

এর আগে ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পির প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন,আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়নের মহাসড়কে অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য জনগণকে এগিয়ে চলার শক্তি যোগাচ্ছে। উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় লাল সবুজের নিশানা নিয়ে আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আজকের ১৬ কোটি জনগণের আস্থা ও সমর্থনের প্রতীকে পরিণত হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের আগেই উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পরিণত হবে। আত্মসম্মানবোধ নিয়ে আমাদেরকে বায়ান্নো ও একাত্তরে অর্জিত গৌরবের পথ ধরে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। জনগণকে সরকারের কাজে সম্পৃক্ত করে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতায় সরকার বদ্ধপরিকর।

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে চীন হতে সাবমেরিন কেনার তথ্য জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীন হতে সাবমেরিন ক্রয় বাংলাদেশের একটি জাতীয় স্বার্থকেন্দ্রিক একটি সিদ্ধান্ত এবং এর ফলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বহির্বিশ্বে কোনও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে না বলে বিশ্বাস করি।

সরকার দলের মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা জানান, সরকারের গৃহীত পদক্ষেপে দেশে আইনশৃঙ্খলার যথেষ্ট উন্নয়ন ঘটেছে এবং দেশের জনগণ সুফল পেতে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে এবং অনুকরণীয় দৃষ্টিান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডসহ উদ্ভুত সমস্যা মোকাবিলার লক্ষ্যে পুলিশের আলাদা উপযোগী ইউনিট গঠন করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে বলেও তিনি জানান।

এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার বিভিন্ন দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে যে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তাতে বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক, শান্তিপ্রিয়, প্রগতিশীল এবং দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হয়েছে। এ লক্ষ্যে আমাদের সমন্বিত কার্যক্রম আগামি দিনগুলোতে অব্যাহত থাকবে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সম্মান, ভাবমূর্তি ও অবস্থান আরও উন্নত ও সুদৃঢ় হবে।

আয়েন উদ্দিনের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে (১৫ জুন পর্যন্ত) বাংলাদেশ থেকে মোট ৪৬ লাখ ৭৯ হাজার ২২৯ জন কর্মী বিদেশে গেছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!