• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নিবন্ধন বাতিল ঝুঁকিতে ২৮ রাজনৈতিক দল


বিশেষ প্রতিনিধি মার্চ ৯, ২০১৭, ০৯:৪৫ পিএম
নিবন্ধন বাতিল ঝুঁকিতে ২৮ রাজনৈতিক দল

ঢাকা: আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলে ক্ষমতার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির নিবন্ধন বাতিল হবে কি না-তা নিয়ে রাজনীতিতে তুমুল বিতর্ক চলছে। শক্ত অবস্থান নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বক্তব্য দিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। নির্বাচনে না এলে নিবন্ধন বাতিল হবে-এমনটা ধরে নিয়েই বিএনপি নির্বাচনে আসবে বলেই মনে করছে আওয়ামী লীগ।

কিন্তু বিএনপি মনে করছে নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি সরকারের ‘নির্বাচনী ফাঁদ’। একই সঙ্গে তারা এমন মন্তব্যও করছে যে, বিএনপির নিবন্ধন বাতিল হলে সব রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল হবে। তবে নিবন্ধন বাতিল না হওয়ার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত দলটি কোনো আইনগত যৌক্তিকতা দেখাতে পারেনি। অপরপক্ষে আইনগত যুক্তি তুলে ধরেই বিএনপির নিবন্ধন বাতিলের কথা বলছে আওয়ামী লীগ।

ফলে রাজনৈতিক অঙ্গনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিএনপির নিবন্ধন বাতিল নিয়ে এক ধরনের কৌতূহল দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে- নির্বাচনে অংশ না নিলে আদৌ কি নিবন্ধন বাতিল হবে; নাকি বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে এটি সরকারের একটি কৌশলমাত্র? একই সঙ্গে বিএনপি নিবন্ধন বাতিলের বিষয় নিয়ে যেভাবে দায়সারা গোছের বক্তব্য দিচ্ছে, তাতে এ প্রশ্নও উঠছে যে, তা হলে কি নির্বাচনে অংশ না নিলেও আইনের ফাঁকফোকর গলে নিবন্ধন অক্ষুণ্নই রাখতে পারবে দলটি?

এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কথা হয় নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তা এবং আইনজ্ঞদের সঙ্গে। এ-সংক্রান্ত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) বিশ্লেষণ করে বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০০৮ সালের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২ সংশোধন করে কোনো দল পরপর দুবার নির্বাচনে অংশ না নিলে তাদের নিবন্ধনের অযোগ্য ঘোষণার বিধান সংযোজন করা হয়।

সে ক্ষেত্রে আগামী নির্বাচনে অংশ না নিলে বিএনপির নিবন্ধন বাতিল হতে পারে। তবে পরপর দুবার জাতীয় নির্বাচনে অনুপস্থিত থেকেও নিবন্ধন বাতিল না হওয়ার উদাহরণ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে অবশ্য ওই সব রাজনৈতিক দল উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে আইনের আওতার মধ্যেই ছিল। তবে এদিক থেকেও পিছিয়ে বিএনপি। কারণ বর্তমান সরকারের সময় অনুষ্ঠিত কোনো উপনির্বাচনেও অংশ নেয়নি দলটি।

অবশ্য নিবন্ধন বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের হাতে উল্লেখ করে আইনজ্ঞরা এ কথাও বলেছেন, শেষ মুহূর্তে কমিশন শুনানির ব্যবস্থা করবে। সেখানে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার পক্ষে যুক্তি গ্রহণযোগ্য হলে রক্ষা পেতে পারে দলটি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সে সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, যেসব রাজনৈতিক দল বিগত (দশম) সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি, সেসব দলকে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। নতুবা আইনানুযায়ী ওই সব রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আপনা-আপনি বাতিল হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে স্পষ্ট করে উল্লেখ রয়েছে, পরপর দুবার নির্বাচনে অংশ না নিলে নিবন্ধন থাকবে না।

ফলে দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেয়া বিএনপিসহ ইসির নিবন্ধন বাতিলের ঝুঁকিতে রয়েছে অন্তত দুই ডজন রাজনৈতিক দল। বিগত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ ২৮ রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করে। আর নির্বাচনে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ মোট ১২ রাজনৈতিক দল। ফলে ওই ২৮টি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন টিকিয়ে রাখতে হলে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতেই হবে।

এসব বিবেচনায় নিবন্ধন রক্ষা করতেই আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে- এমনটি ধরে নিয়েই নির্বাচনের পথে এগোচ্ছে সরকার। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা প্রায় প্রতিদিনই বিএনপিকে নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি স্মরণও করে দিচ্ছেন।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে, এমন ঝুঁকি নিয়ে বোকার মতো নির্বাচনে বিএনপি না আসার সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমার মনে হয় না। তা ছাড়া কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক কিংবা না করুক, সংবিধান অনুযায়ী যথা সময়ে নির্বাচন হবে বলেও মন্তব্য করেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। এর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপির মতো একটা দলের নিবন্ধন বাতিল করাটা এত সহজ নয়। তা ছাড়া, আগামী নির্বাচনে সরকারকে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের দাবি মানতে বাধ্য করে বিএনপি নির্বাচনে যাবে।

তিনি এমনও মন্তব্য করেন যে, বিএনপির নিবন্ধন বাতিল হলে অনেক দলেরই নিবন্ধন থাকবে না। আর বিএনপির নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি দলটিকে নির্বাচনে নিতে সরকারের ‘নির্বাচনী ফাঁদ’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন।

আইনজ্ঞরা জানান, নির্বাচনী আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) আইনের ৯০ এইচ (১) (ই) ধারা বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হবে। এ ধারার কারণে বিএনপি নির্বাচনে আসতে বাধ্য হবে। আরপিও ৯০ এইচ (১) ধারায় রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিলের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। পাঁচটি কারণে কমিশন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে। এই ধারার (ই) উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল হবে, যদি কোনো রাজনৈতিক দল পরপর দুটি সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেয়।

অবশ্য নিবন্ধন বাতিলের ক্ষেত্রে কোনো দল যদি ৯০ এইচ (১) (ই) ধারা লঙ্ঘন করে, সে ক্ষেত্রে দলটির নিবন্ধন সরাসরি বাতিল হবে না। পরপর দুবার নির্বাচনে অংশ না নেয়া দলটিকে শুনানিতে অংশ নেয়ার সুযোগ দেবে। কমিশনের কাছে দলটির বক্তব্য গ্রহণযোগ্য না হলেই কেবল তারা নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত নেবে।

এর আগে নবম ও দশম সংসদের সাধারণ নির্বাচনে অংশ না নিয়েও খেলাফত মজলিসের নিবন্ধন বাতিল না হওয়ার নজির রয়েছে। তবে দলটি মূলত উপনির্বাচনে অংশ নেয়ার মাধ্যমে নিবন্ধন বাতিলের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেয়েছে।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/আকন

Wordbridge School
Link copied!