• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্মিত হলো চিত্রা সেতু


ফরহাদ খান, নড়াইল মার্চ ২৮, ২০১৭, ০১:৩০ পিএম
নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্মিত হলো চিত্রা সেতু

নড়াইল: নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হয়েছে চিত্রা সেতুর নির্মাণ কাজ। মহান স্বাধীনতা দিবসের দিন থেকেই যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে নড়াইলবাসীর স্বপ্নের চিত্রা সেতু। এক মাসের বেশি সময় আগে শেষ হয়েছে সেতুর নির্মাণ কাজ।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে নড়াইল শহরের সাবেক ফেরিঘাট এলাকায় ২৮ কোটি ২০ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মিত হয়েছে। সেতুটি চালুর ফলে নড়াইল শহরের সাথে লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলাবাসী এবং প্রতিবেশি জেলা গোপালগঞ্জ ও যশোরসহ ঢাকার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়েছে। এ সেতু দিয়ে বাস, ট্রাক, কার, মাইক্রোবাসসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল করবে। এদিকে, নড়াইল-যশোর সড়কের মাছিমদিয়া এলাকায় প্রায় নয় বছর আগে ‘এসএস সুলতান সেতু’ (প্রথম চিত্রা সেতু) চালু হয়।

নড়াইল সদরের রঘুনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সঞ্জিত মজুমদার বলেন, দ্বিতীয় চিত্রা সেতু চালুর ফলে জেলা শহরের সাথে গ্রামাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়েছে। বিশেষ করে স্কুল, কলেজ, মাদরাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সহজে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করছেন। কৃষিপণ্যসহ তরিতরকারি ও সবজি পরিবহনও সহজ হয়েছে। নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ডালিয়া পারভীন বলেন, চিত্রা সেতু চালুর ফলে শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থাই সহজ হয়নি, এটি শহরবাসীর বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত নিয়েছে। নদীর শান্ত-স্বচ্ছ পানি, আর নদীর পাড়ের গাছপালার ঘেরা পরিবেশের মধ্যে নির্মিত সেতুটি আরো আকর্ষণীয় হয়েছে। বিশেষ করে বৈদ্যুতিক আলোয় রাতের বেলা অন্যরকম পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। বিকেল থেকেই সবাই ভিড় করছেন এখানে। পরিবারসহ ঘুরতে এসে অনেক আনন্দ পেয়েছি। বিভিন্ন যানবাহনের চালকেরা জানান, নড়াইলের লোহাগড়া এবং কালিয়া উপজেলা থেকে জেলা শহরে প্রবেশ করতে প্রথম চিত্রা সেতুর ওপর দিয়ে প্রায় আট কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হতো। সেতুটি চালুর ফলে সময় ও জ্বালানি তেলের সাশ্রয় হয়েছে।

নড়াইল প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি সুলতান মাহমুদ বলেন, চিত্রা নদীর সাবেক ফেরিঘাট এলাকায় সেতু নির্মাণের দাবিতে প্রায় এক যুগ ধরে বিভিন্ন পেশার মানুষ আন্দোলন করে আসছিলেন। বর্তমান সরকার জনগণের সেই দাবি বাস্তবায়ন করেছে। স্বাধীনতা দিবসে নড়াইলবাসীর বড় উপহার যেন এই সেতুটি। অ্যাডভোকেট তারিকুজ্জামান লিটু বলেন, সেতুটি চালুর ফলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, আদালত চত্বর, নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, বালিকা বিদ্যালয়, শহর প্রাথমিক বিদ্যালয়, চৌরাস্তা বাজারসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ সহজ হয়েছে। খেয়া মাঝি আবুল হোসেন (৬৫) বলেন, সেতু চালুর ফলে দীর্ঘদিনের নৌকা পারাপার বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ৬০ জন মাঝি বেকার হয়েছেন। সরকারের কাছে ঋণ সহায়তা বা বিকল্প কর্মসংস্থানের দাবি করছি আমরা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক আবিদুর রহমান জানান, ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তবে, নির্ধারিত সময়ের আগে ২৬ মার্চ যানবাহন চলাচলের জন্য সেতুটি উন্মুক্ত হয়েছে। সেতুর মূল দৈর্ঘ্য ১৪০ মিটার। এর বাইরে দুই পাশে ফ্লাইওভারের মতো দেখতে ভায়াডাক্টের দৈর্ঘ্য ২৩৭ দশমিক ৫০ মিটার। সেতুর প্রস্থ ৫ দশমিক ৪৬ মিটার বা ১৮ ফুট। পানির স্তর থেকে সেতুর উচ্চতা ৭ মিটার। দুই পাশে অ্যাপ্রোচ সড়ক আছে ৪৩১ মিটার। ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এমবিইএল-ইউডিসি (জেভি) সেতুটি নির্মাণ করেছে। এলজিইডি নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু ছায়েদ জানান, সেতুটি নির্মাণে ৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও প্রায় ২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আগামি ৩০ এপ্রিল চিত্রা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এক্ষেত্রে এক মাসের বেশি সময় আগে নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এ সেতু দিয়ে বাস, ট্রাক, কার, মাইক্রোবাসসহ সব ধরণের যানবাহন চলাচল করবে। যানবাহন থেকে টোল আদায় করা হবে কি না, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানাতে পারেননি তিনি। তবে, বর্তমানে কোনো প্রকার টোল ছাড়াই যানবাহন চলাচল করছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন যানবাহনের চালকেরা।

জেলা প্রশাসক হেলাল মাহমুদ শরীফ বলেন, মহান স্বাধীনতা দিবসে সেতুটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হলেও পরবর্তীতে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। আশা করছি, প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। তবে, এখনো তারিখ নির্ধারণ হয়নি। শেখ রাসেলের নামে সেতুটির নামকরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এদিকে, গত রোববার (২৬ মার্চ) বিকেলে চিত্রা সেতু উন্মুক্তের সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক হেলাল মাহমুদ শরীফ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বিশ্বাস, পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সিদ্দিকুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কাজী মাহবুবুর রশীদ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল আরিফ, ম্যাজিস্ট্রেট এএফএম আবু সুফিয়ান, নড়াইল পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর হোসেন বিশ্বাস, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কালাম হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবাস চন্দ্র বোস, সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দীন খান নিলু, লোহাগড়া উপজেলা আ’লীগ সভাপতি সিকদার আব্দুল হান্নান রুনু, আ’লীগ নেতা মঞ্জুরুল করিম মুন, সৈয়দ আইয়ুব আলী প্রমুখ।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!