• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে প্রধানমন্ত্রীই সর্বেসর্বা


এমএ ইউসুফ নভেম্বর ১৯, ২০১৬, ১২:১২ পিএম
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে প্রধানমন্ত্রীই সর্বেসর্বা

দেশের রাজনীতিতে হঠাৎ নতুন কোনো ইস্যু না এলে বড় বিষয় আগামী সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আলোচনায় এসেছে নতুন নির্বাচন কমিশন। আর কমিশনকে কেন্দ্র করে এই আলোচনায় কারা নিয়োগ পাচ্ছেন, তার চেয়ে বড় আলোচনা কোন প্রক্রিয়ায় নিয়োগ পাবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য কমিশনাররা। তবে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে যে প্রধানমন্ত্রীই সর্বেসর্বা- এ নিয়ে সংশয় নেই বিশেষজ্ঞ মহলে।

তারা বলছেন, নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যদিও প্রতিষ্ঠানটির প্রধানসহ অন্য কমিশনারদের নিয়োগ দেন খোদ রাষ্ট্রপতি। তারপরও দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে প্রধানমন্ত্রীকেই দিয়েছে প্রশ্নহীন ক্ষমতা। যে ক্ষমতায় প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শেই এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকেন রাষ্ট্রপতি।

এই পরিস্থিতিতে সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যথার্থ অর্থে একটি স্বাধীন ও দলনিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনে দরকার সুনির্দিষ্ট আইন। যার প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ রয়েছে খোদ সংবিধানেই।

সংবিধানে নির্বাচন কমিশনসহ অন্যান্য সাংবিধানিক পদগুলোতে আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন বলে উল্লেখ আছে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি ও প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ ছাড়া অন্য সব কাজে সরকার প্রধানের পরামর্শ নেয়ার বাধ্যবাধকতা দিয়েছে সংবিধানই। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে কী পরামর্শ দিয়েছেন তা নিয়ে আদালতে কেউ প্রশ্ন পর্যন্ত তুলতে পারবেন না।

তাই নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে পরোক্ষভাবে প্রধানমন্ত্রীই যে সর্বেসর্বা- এ নিয়ে সংশয় নেই ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানের। তিনি বলেন, একটা দীর্ঘ সময় নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন না উঠলেও গত কয়েক টার্মে বড় প্রশ্ন উঠেছে। তাই এখন আইন প্রণয়ন করা উচিত। আগামী নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের আগে পর্যাপ্ত সময় আছে। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে একটি ভালো আইন এই সময়ের মধ্যে করা সম্ভব।

সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদের ৩ দফা অনুযায়ী, ‘এই সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুসারে কেবল প্রধানমন্ত্রী ও ৯৫ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্ট্রপতি তাঁহার অন্য সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্য করিবেন।’

এই অনুচ্ছেদে থাকা একটি ‘শর্ত’ রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ প্রদানের ক্ষমতাকে প্রশ্নহীন সুরক্ষা দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘তবে, শর্ত থাকে যে, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে আদৌ কোন পরামর্শদান করিয়াছেন কি না এবং করিয়া থাকিলে কী পরামর্শ দান করিয়াছেন, কোনো আদালত সেই সম্পর্কে কোনো প্রশ্নের তদন্ত করিতে পারিবেন না।’

সব বিরোধী দলই সরকারের কাছে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি জানায়। কিন্তু, পর্যায়ক্রমে ক্ষমতায় আসা প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের কোনোটিই নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগে আইন প্রণয়ন করেনি। টানা দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দায়িত্বে হাসিনা সরকার থাকলেও তারা সাংবিধানিক এ দায়িত্ব পালনে সক্রিয়তা দেখাচ্ছেন না।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, এ ব্যাপারে আইন প্রণয়নের কোনো দরকার আছে বলে মনে করি না। কমিশন গঠনের দায়িত্ব মহামান্য রাষ্ট্রপতির। রাষ্ট্রপতি সংবিধান অনুযায়ী উদ্যোগ নেবেন। এ বিষয়ে বিতর্ক থাকার কোনো অবকাশ দেখি না।

সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো ‘আইনের’ বিধানাবলি-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন।’

অথচ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানের এই অনুচ্ছেদে থাকা নির্দেশ গত ৪৪ বছরে কোনো সরকার পালন করেনি। সরকারগুলোর উদাসীনতার কী কারণ থাকতে পারে? জানতে চাইলে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, ক্ষমতায় থাকলে সব সরকারের মনেই সুপ্ত একটি বাসনা কাজ করে। আইন করলে নিজেদের ক্ষমতা সংকুচিত হয়ে পড়বে- এই ভাবনায় তারা সরকারে থাকলে চুপ থাকে। আর বিরোধী দলে গেলে সংবিধানের দোহাই দেয়।

কিন্তু আইন না থাকলেও রাষ্ট্রপতির আদেশের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনে কোনো দোষ দেখেন না হাসিনা সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। তিনি বলেন, আমাদের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির আদেশও ‘আইন’। তাই সার্চ কমিটি গঠন করে রাষ্ট্রপতির আদেশের মাধ্যমে ইসি গঠনে কোনো সমস্যা নেই।

সংবিধানের ১৫২(১) অনুচ্ছেদে ‘আইন’-এর অর্থ হিসেবে ‘আইন, অধ্যাদেশ, আদেশ, বিধি, প্রবিধান, উপ-আইন, বিজ্ঞপ্তি ও অন্যান্য আইনগত দলিল এবং বাংলাদেশে আইনের ক্ষমতাসম্পন্ন যে কোনো প্রথা বা রীতি’-কে বোঝানো হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট আরেক প্রশ্নের জবাবে শফিক আহমেদ বলেন, আইন করলে ভালো। আর এ জন্য সরকার যদি মনে করে তাহলে আগামী নির্বাচনের আগেই এমন একটি আইন করার জন্য যথেষ্ট সময় রয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, সার্চ কমিটি নামে কোনো কিছু সংবিধানে নেই। এগুলো সরকারের ভাঁওতাবাজি। এসব কমিটির আড়ালে মূলত প্রধানমন্ত্রীর নিরঙ্কুশ ক্ষমতাকেই হালাল করার কৌশল নেয়া হয়। যেমনটা নেয়া হয়েছিল রকিব উদ্দিন মার্কা কমিশনের বেলায়।

তিনি বলেন, আইন প্রণয়ন করে সমস্যার সমাধান করা যায়। আবার সরকার যদি সব রাজনৈতিক দলের মত গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়, তাতেও বাধা থাকে না।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!