• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচন ঘিরে জমজমাট ইফতার রাজনীতি


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ৫, ২০১৭, ০৩:০৩ পিএম
নির্বাচন ঘিরে জমজমাট ইফতার রাজনীতি

ঢাকা : আজ এই দলের আয়োজন তো কাল ওই দলের। বিশেষ করে নিজ জোটের রাজনৈতিক দলগুলোর যেন আরো ঘনিষ্ঠ হওয়ার সময়। মৌসুমি এ আয়োজনটি চলে রমজানের ইফতার ঘিরে। তবে এবারের ইফতার আয়োজন মূলত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। তাই এ মাসটিকেই দেশের মূল রাজনৈতিক দলগুলো শরিকদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের মোক্ষম সময় হিসেবে নিয়েছে।

এছাড়া রমজান মাসে সাংগঠনিক যোগাযোগ বৃদ্ধি ও সুসংহত করতে উপজেলা, থানা এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়েও ইফতারের আয়োজন করছে রাজনৈতিক দলগুলো। এতে করে ভ্রাতৃত্ববোধ বাড়ার পাশাপাশি নেতাকর্মীরাও উজ্জীবিত হবে বলে মনে করেন দলগুলোর নেতারা।

ফাইল ছবি

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বছরের অন্য সময় ‘স্পেস ও স্কোপ না পাওয়ায়’ রাজনীতি ঢুকে পড়েছে রমজানের ইফতারে। একাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গেল কয়েক বছরের তুলনায় এবার বড় দলগুলো ইফতার পার্টিতে বেশ গুরুত্ব দেবে। কিন্তু এ সহমর্মিতা বছরের অন্য সময়েও দলগুলোকে বজায় রাখা উচিত বলে মনে করছেন তারা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ আলেম-ওলামা এবং এতিমদের পাশাপাশি দেশের পেশাজীবী, কর্মজীবী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ইফতার করবেন রমজানজুড়ে।
দেশের বড় এই তিনটি দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সব দলই কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ইফতার আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত। বিএনপি চেয়ারপারসন প্রথমবারের মত নেতাকর্মীদের জন্য ইফতারের আয়োজন করেছেন।

আওয়ামী লীগের উপজেলা ইউনিটকেও ইফতারের আয়োজন করতে বলা হয়েছে। আর জাতীয় পার্টি প্রতিটি ওয়ার্ডে ও শরিকদের সঙ্গে নিয়ে ইফতার আয়োজনে ব্যস্ত।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাসানুজ্জামান চৌধুরী বলেন, রোজা, ইফতার এগুলো ইবাদতের বিষয়। এর সঙ্গে নিছক জাগতিক বিষয়গুলো জড়ানো উচিত নয়। যেহেতু বছরের অন্য সময়টাতে বিরোধী দলগুলো তেমন একটা সুযোগ পায় না, সেজন্য এই সময়টা তারা বেছে নেয়। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, রমজান মাসে কোনো অনুষ্ঠানের বাধা থাকে না। স্পেস ও স্কোপ পাওয়াতেই এ সময় ইফতার পার্টিতে রাজনীতি হয়। আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলো এবার ইফতার পার্টিতে আরো বেশি জোর দেবে।

ফাইল ছবি

অধ্যাপক ড. হাসানুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বিএনপি সংগঠনের কার্যক্রম জোরালো আর আওয়ামী লীগ নিজের শক্তি বৃদ্ধিতে কাজ করবে। দলগুলো তাদের পুরনো নেতাকর্মীদের কাছে টানতে ইফতার পার্টিকে ব্যবহার করবে। রোজার সহমর্মিতা বছরের অন্য সময়গুলোতেও ধরে রাখার কথা উল্লেখ করে ঢাবির এই অধ্যাপক বলেন, সংগঠনের বিস্তার ঘটাতে ইফতার পার্টি রাজনৈতিক দলগুলোর একটি বড় মাধ্যম।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ইফতার ঘিরে দল থেকে নানা আয়োজন হয়েছে। এটি প্রতি বছরই হয়। তবে এবারের ইফতার পার্টি আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশেষ গুরুত্ব বহন করবে কিনা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।

আওয়ামী লীগ দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবার ইফতার পার্টির আয়োজন করতে জেলা-উপজেলাসহ তৃণমূলের প্রতিটি স্তরকে বলা হয়েছে। এছাড়া যেহেতু দলীয় প্রধান বলেছেন, মনোনয়ন তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে দেয়া হবে, সে বিষয়টি মাথায় রেখে ১০ রোজার মধ্যেই স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ অধিকাংশ নেতারা তাদের এলাকায় যাবেন এবং ইফতারের আয়োজন করবেন।

সূত্র আরো জানিয়েছে, দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, কূটনীতিক, পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের জন্য আলাদা করে ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে।

এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা ইফতারকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু অনুষ্ঠান করি, চেয়ারপারসনও করেন। বিভিন্ন সংগঠন, পেশাজীবী ও রাজনৈতিক দলসহ সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ইফতার করি। যেখানে আমাদের নেতাকর্মীরাও আসেন। এতে করে ভ্রাতৃত্ববোধ বাড়ার পাশাপাশি নেতাকর্মীরাও উজ্জীবিত হয়।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবারই প্রথম দলের নেতাদের জন্য আলাদা ইফতার মাহফিল আয়োজন করতে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আগামী নির্বাচনকে ঘিরে নিজেদেরকে সুসংগঠিত করতে এই ইফতার পার্টি বড় ভূমিকা রাখবে দল সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারের নবরাত্রি হলে গতকাল বিএনপি নেতাদের সম্মানে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। আজ ৪ জুন একই স্থানে পেশাজীবী, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের সম্মানে ইফতার মাহফিল এবং আগামীকাল ৫ জুন একই জায়গায় বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের সম্মানে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

এছাড়াও বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের শরিক দল এবং পেশাজীবীদের কয়েকটি ইফতার মাহফিলে অংশ নেবেন খালেদা জিয়া।

ফাইল ছবি

অন্যদিকে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম ফয়সল চিশতী বলেন, রমজান মাসে প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডে ইফতার পার্টিতে রাজনৈতিক আলোচনা ও কর্মী সমাবেশ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গতকাল কূটনীতিক ও রাজনীতিকসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে গুলশানের ওয়েস্টিনে ইফতার করেছেন। এছাড়া আগামী ৬ জুন কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির ইফতার এবং ৭ জুন জোটের ইফতার পার্টিতে উপস্থিত থাকবেন এরশাদ।

এ বিষয়ে জাপার মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, সামনে যেহেতু নির্বাচন তাই এবারের ইফতার পার্টিগুলোতে রাজনৈতিক আলোচনা বিশেষ স্থান পাবে। ইফতার পার্টিতে দলের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!