• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

নির্বাচন বিতর্ক: এক ছাদের নিচে আওয়ামী লীগ-বিএনপি


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭, ০৮:৪৭ পিএম
নির্বাচন বিতর্ক: এক ছাদের নিচে আওয়ামী লীগ-বিএনপি

ঢাকা: ভোট নিয়ে রাজনীতির মাঠে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়ে আসা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির কয়েকজন নেতা দীর্ঘদিন পর এক ছাদের নিচে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিতর্কে মেতেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আশ্বাস দিয়ে বিএনপিকে তাতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে নয়, তারা ওই আশ্বাস শুনতে চান নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে।

ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত ‘অ্যাডভান্সিং ইয়ুথ লিডারশিপ অ্যান্ড পার্টিসিপেশন ফর পিসফুল ইলেকশনস’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী কর্মশালার শেষ দিন ছিল বৃহস্পতিবার(২১ সেপ্টেম্বর)। শেষ দিনে ঢাকার একটি রেস্তোরাঁয় এই গোলটেবিল আলোচনায় তারা অংশ নেন।

এতে, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী, সংসদ সদস্য ওয়াসেকা আয়েশা খান এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক রুমিন ফারহানাও আলোচনায় অংশ নেন।

প্রসঙ্গত, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসা বিএনপি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে এখনো সংসদের বাইরে। আগামী বছরের শেষ দিকে হতে যাওয়া একাদশ সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হলে তা ‘প্রতিহত করার’ হুমকিও বিএনপি নেতারা দিয়েছেন।  

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে। দুই পক্ষ যার যার অবস্থান থেকে এ নিয়ে বাহাস চালিয়ে এলেও বিএনপি সংসদে না থাকায় দুই দলের নেতাদের মুখোমুখি কোনো আলোচনায় নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে দেখা যায়নি দীর্ঘদিন।   

বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচ টি ইমাম বিএনপিকে আশ্বস্ত করে বলেন, সরকার কী করল, তার উপর আগামী নির্বাচন নির্ভর করবে না। বিএনপিসহ সব দলের অংশগ্রহণ এবং নির্বাহী বিভাগের সহায়তায় নির্বাচন কমিশন ভোটের আয়োজন করবে।

তিনি বলেন, “আল্লাহর দোহাই লাগে, ২০১৩ সালের মত বলবেন না, আমরা নির্বাচন বয়কট করব, নির্বাচনে যাব না। আগেরবার প্রথমে বলেছিলেন, আমরা নির্বাচন বয়কট করব। তারপরে বললেন, আমরা বয়কট করব না, আমরা প্রতিহত করব। আর প্রতিহত করতে গিয়ে যে অগ্নিসন্ত্রাস হল, জনগণের ওপরে যে অত্যাচার, সেটি থেকে এবার আমাদের মাফ করে দিন।”

প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, “সকলে মিলে, সুষ্ঠুভাবে... আসেন আমরা ভালভাবে নির্বাচন করি। শান্তিপূর্ণভাবে করি এবং সকলে সকলের সহযোগিতা নিয়ে করি।”

এইচ টি ইমামের আগে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক তার বক্তব্যে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার কথা উল্লেখ করেন। “সামনে নির্বাচন আসছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা সমন্বিত, অবাধ ও ‍সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। যেন কেউ সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে। সরকার সেটা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ’’

“আমরা সেটা করার জন্য সব ধরনের কাজ করছি। সরকারের সব অঙ্গ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।”

তার ওই বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি নেতা মঈন খান বলেন, “ড. রাজ্জাক, প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের আশ্বাস দিচ্ছেন- সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু আমরা এই আশ্বাস প্রধানমন্ত্রী কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে চাই না... কারণ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। এই আশ্বাস নির্বাচন কমিশন দেবে।

“আমরা খুশি হতাম, যদি ড. রাজ্জাকের মুখ থেকে শুনতাম যে, প্রধানমন্ত্রী ও সরকার ঘোষণা করেছে ও নিশ্চয়তা দিচ্ছে- নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে এবং সেখানে হস্তক্ষেপ করব না।”

আর তা করা হলেই ২০১৮ সালে বাংলাদেশে ‘শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন’ নিশ্চিত করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন এই বিএনপি নেতা।

মঈন খানের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে এইচ টি ইমাম বলেন, নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের গ্যারান্টি নির্বাচন কমিশন একা দিতে পারে না।

“সংবিধানে একটা বিষয় খুব স্পষ্ট করে বলা আছে। নির্বাচনকালীন সরকার অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে পরিচালিত হয়। এই অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব অত্যন্ত সীমিত। দৈনন্দিন কাজ বা রুটিন কাজ ছাড়া তারা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। কোনো নতুন প্রকল্প গ্রহণ করতে পারে না। এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, যাতে নির্বাচনের সম্পৃক্ততা আছে।’’

“সরকারের কোনো দায়িত্ব নেই, তা কিন্তু নয়। নির্বাচন কমিশনকে তো সব রকমের সহায়তা দিতে হবে। এটাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন… নির্বাচন কমিশন যাতে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে নির্বাচনের আয়োজন করতে পারে, সরকার যা করার করবে।”

নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সরকার নানা উদ্যোগ নিচ্ছে জানিয়ে এইচ টি ইমাম বলেন, “নিজস্ব অর্থবল, নিজে ব্যয় করার ক্ষমতা ও নিজের জনবল এটিইতো আসল। এর সাথে অন্যান্য যে সমস্ত ক্ষমতা দরকার সেটা তারা দেখবে, সংবিধান অনুসারে।”

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নির্বাচন কমিশনকে তার কাজে সহযোগিতা দেওয়া নির্বাহী বিভাগের দায়িত্ব। নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী থেকে ‍শুরু করে সরকারের সবার দায়িত্ব হল নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করা।

“দেখতে হবে, নির্বাচন কমিশনের সেই শক্তি, মানসিকতা আছে কি-না। যদি সেটা না থাকে, তাহলে জাতি হিসাবে আমাদের ব্যর্থতা। ক্ষমতা কিন্তু তাদেরকে দেয়া আছে।”

ভোটের সময় বিএনপির নির্দলীয় সরকারের দাবি প্রসঙ্গে রাজ্জাক বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের আয়োজন হলেও তা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠতে পারে, তার উদাহরণ ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির না হওয়া ভোট।

“খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী, ইয়াজ উদ্দিন আহমেদ রাষ্ট্রপতি। সেই ইয়াজউদ্দিন আহমেদ হলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ‍উপদেষ্টা। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে সেটা কেমন হতে পারত চিন্তা করে দেখেন।”

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সে সময় ওই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়; দেশ বড় ধরনের রাজনৈতিক সঙ্কটে পড়ে। ওই বছর ১১ জানুয়ারি ফখরুদ্দীন আহমদের সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেয়। জরুরি অবস্থার মধ্যে নির্বাচন আটকে যায় দুই বছরের জন্য।  

সেজন্য নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কী করা যায়, সেটা নিয়ে এবার ভাবতে হবে বলে মন্তব্য করেন ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা।

বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান বলেন, “নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার প্রেক্ষিত সৃষ্টি করতে দরকার একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন। সেই সঙ্গে এমন সরকার দরকার, যেটা ওই নির্বাচনে পার্টি হবে না। কারণ পার্টি হলে কী হয়, সেটা বুঝে আমাদের আওয়ামী লীগের বন্ধুরা ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলেছিলেন।”

অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ- এই শব্দগুলো নির্বাচনের জন্য আলাদা করে বলাটাই ‘পছন্দ নয়’ জানিয়ে এই বিএনপি নেতা বলেন, “নির্বাচন মানেই হল- তা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে হবে। জনগণ সেখানে ভোট দিতে পারবে, জনগণ যাকে ভোট দেবে, সেই বিজয়ী হবে। ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ’ বলার দরকার হয় না। কিন্তু এখন দরকার হয় এই জন্য যে, জনগণ যেখানে ভোট দেয়নি, ওটাকেও নির্বাচন বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

নজরুল ইসলাম খান বলেন, “আমরা নির্বাচন চাই। আমরা চাই জনগণের সত্যিকারের প্রতিনিধিত্বশীল মানুষরা সংসদে বসুক। যারা মেজরিটি হয় তারা সরকার গঠন করবে। সেটা আওয়ামী লীগ হলেও আমার আপত্তি নাই।”

অন্যদের মধ্যে ইউএসএইডের মিশন পরিচালক জেনিনা জেরুজেলস্কি ও ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের চিফ অব পার্টি কেটি ক্রোক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আতা

Wordbridge School
Link copied!