ঢাকা : আগামী অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনী যাত্রা। নির্বাচনী কাউন্টডাউন মূলত তখন থেকেই শুরু হবে। অক্টোবরে নির্বাচনকালিন সরকারেরও যাত্রা শুরু হবে। সোমবার (১৫ জানুয়ারি) সাতক্ষীরা সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার কথায় তেমনই আভাস মিলেছে। তিনি বলেছেন, আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। ডিসেম্বরের শেষের দিকে অথবা ২০১৯ সালের প্রথম দিকে যে কোনো দিন একাদশ সংসদ নির্বাচনের দিন নির্ধারন করা হবে।
অক্টোবরের পর থেকে ৯০ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। হিসাবমতে, ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির আগেই শেষ করতে হবে নির্বাচন। সে লক্ষ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে ইলেকশন কমিশন (ইসি)। একই সঙ্গে তৈরি হচ্ছে ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো।
দিনক্ষণের হিসাবমতে, বর্তমান পূর্ণ সরকারের মেয়াদ শেষ হতে বাকি আর মাত্র সাড়ে ৯ মাস। চলতি বছর ৩১ অক্টোবর থেকেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়ে যাবে। এ অবস্থায় সরকারি মহলে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সরকার সবুজ সংকেত দিলে ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ২৭ ডিসেম্বরকে ভোট গ্রহণের দিন হিসেবেও বেছে নেয়া হতে পারে। তফসিল ঘোষণা হতে পারে নভেম্বরে। সরকারের উচ্চপর্যায়ের কথাবার্তায় এসব তথ্য এসেছে।
এদিকে ক্ষমতাসীনদের মতে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বেই নির্বাচনকালীন সরকার থাকবে। সে ক্ষেত্রে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই থাকবেন নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান। এ সরকারে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ভূমিকা কী হবে, তা নিশ্চিত করে বলা না গেলেও দলটি যে এবার নির্বাচনের বাইরে থাকবে না তা নিজেরাই বলছে।
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) সাতক্ষীরা সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সিইসি নূরুল হুদা বলেন, বর্তমান সরকারের মেয়াদ আগামী বছরের ২৮ জানুয়ারি শেষ হবে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষের দিকে অথবা ২০১৯ সালের প্রথমে দিকে যে কোনো দিন একাদশ সংসদ নির্বাচনের দিন নির্ধারন করা হবে।
আগামী সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত সব দলের অংশগ্রহণের আশাবাদ ব্যক্ত করে সিইসি বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে হবে না। সিটমহল, নদী ভাঙ্গন ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে ৬০ থেকে ৭০টি আসনে সীমানা পুননির্ধারন হতে পারে।
সহায়ক সরকার গঠনের কী পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল হুদা বলেন, এটা রাজনৈতিক বিষয়। নির্বাচন কমিশনের এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করার সুযোগ নেই। সব দলের সঙ্গে সংলাপ হয়ে গেছে। সব দলই নির্বাচনে অংশ নেবে বলে তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেন।
সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিন অর্থাৎ চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একই বছরের ২৯ জানুয়ারি নির্বাচিত সদস্যরা সংসদের প্রথম অধিবেশনে বসেছিলেন। এদিন থেকেই সংসদের ৫ বছরের মেয়াদ শুরু হয়েছে। যা শেষ হবে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি।
কিন্তু সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদে বলা আছে, সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে (ক) ‘মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে।’ সে কারণে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন শেষ করতে হবে। ভোট গ্রহণের পর ঘোষিত ফলের গেজেট প্রকাশসহ কিছু কাজ থাকে।
এ ছাড়া কিছু কেন্দ্রে ভোট স্থগিত হলে সেগুলোও মেয়াদের মধ্যেই শেষ করতে হয়। এ জন্য নির্ধারিত ৯০ দিন শেষ হওয়ার আগেই ভোটের সময় নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে ডিসেম্বরের শেষ দিকের যে কোনো দিন ভোটের সম্ভাবনাই বেশি।
ডিসেম্বরের ২৩-৩০ তারিখের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তফসিল ঘোষণা করতে হবে নভেম্বরে। ওই নির্বাচনের প্রস্তুতির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ ছাড়াও নির্বাচনী মালামাল কেনা ও আইন সংস্কারের কাজ করছে ইসি।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আগামী বছর ৩১ অক্টোবর থেকে নির্বাচনী ক্ষণগণনা (কাউন্টডাউন) শুরু হবে। এদিকে নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ পর্যায়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। চলছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামের তালিকা তৈরির কাজ। দুই দলই সাংগঠনিকভাবেও প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রার্থী বাছাইয়ে চলছে জরিপ কার্যক্রম। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও নির্বাচনী আবহ বইতে শুরু করেছে। শহর, গ্রাম, পাড়া, মহল্লা সর্বত্র আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা চলছে। পাশাপাশি সব দলের অংশগ্রহণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়েও রয়েছে উৎকণ্ঠা।
পর্যবেক্ষক মহলের মতে, আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক করতে প্রয়োজন রাজনৈতিক সমঝোতার। সব দল অংশ না নিলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। কারণ বিএনপিসহ কয়েকটি দলের বর্জনের মুখে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন অনেকেই গ্রহণ করেনি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও মনে করে এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবেই। গতবার যে ভুল তারা করেছে এবার কোনোভাবেই সে ভুল তারা করবে না। তাই তীব্র নির্বাচনী লড়াইয়ের আশঙ্কাও তারা করছেন।
জানা গেছে, নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরুর এক বছর বাকি থাকলেও এখনই নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সব মহলে ব্যাপক আলোচনা চলছে। ইসিতে সংলাপে অংশ নিয়ে বেশির ভাগ দলই নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি জানিয়েছে। ওই সরকারকে রুটিন কাজের মধ্যে তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতেও অনুরোধ জানিয়েছে দলগুলো। বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টসহ (বিএনএফ) কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতা ওই সরকারে বিএনপির প্রতিনিধি রাখার পক্ষেও প্রস্তাব দিয়েছে।
অপরদিকে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু থেকে সরে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। তবে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা এখনও ঘোষণা করেনি বিএনপি।
সোনালীনিউজ/জেডআরসি/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :