• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
আ.লীগ-বিএনপির রাজনীতি

নির্বাচনী প্রস্তুতি আছে, সমঝোতা কতদূর?


বিশেষ প্রতিনিধি জুন ৯, ২০১৭, ০৬:০৪ পিএম
নির্বাচনী প্রস্তুতি আছে, সমঝোতা কতদূর?

ঢাকা: আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলে নির্বাচনী আমেজ শুরু হয়ে গেছে। দুটি দলেরই তৃণমূলে কোন্দল রয়েছে। কোন্দল-বিভাজন মেটাতে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করেছে দলগুলো। আর এসবই হচ্ছে আগামী সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের ফাঁকা গোল দিতে দেবে না প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্ধী বিএনপি।

এদিকে নির্বাচনের লক্ষণ স্পষ্ট হলেও দল দুটির মধ্যে সমঝোতার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বিএনপির একদফা ‘নির্বাচনকালিন সরকার’ কিভাবে হচ্ছে, আদৌ হচ্ছে কিনা, না হলে তারা নির্বাচনে যাবে কিনা, সে বিষয়েও স্পষ্ট কোনো লক্ষণ নেই। এই মুহুর্তে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে দূরত্বের একমাত্র কারণ ‘নির্বাচনকালিন সরকার’।

নির্বাচনকালিন সরকারের দাবি থেকে একটুও সরেনি বিএনপি। কিন্তু আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই বলা যায়, নির্বাচনের লক্ষণ থাকলেও নির্বাচনকালিন সরকার বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার ছিটেফোটা লক্ষণও নেই। সমঝোতা না থাকায় চরম রাজনৈতিক সংকটের দিকে এগুচ্ছে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি।

অন্যদিকে আগামী একাদশতম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইতিমধ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রস্তুত করে সে অনুযায়ী কাজও শুরু করেছে সংস্থাটি। সংবিধান অনুযায়ী দশম সংসদের মেয়াদ শেষের ৯০ দিন আগে নির্বাচন করতে হবে। সেই হিসাবে আগামী বছরের ডিসেম্বর মাসকে টার্গেট ধরে নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে ইসি। এর আগে সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাও করেছে ইসি।

এদিকে ক্ষমতার মেয়াদ যত ফুরিয়ে আসছে ততই চতুর্মুখী সঙ্কটের মুখোমুখি হচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে। অন্যদিকে বিএনপির পালে বইছে নির্বাচনী হাওয়া, সেই হাওয়ায় অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে দলটি। নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে ঈদের পর বড় আন্দোলনে যেতে চায় দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা দেশের অন্যতম বৃহৎ এই রাজনৈতিক দলটি। আওয়ামী লীগের অধীনে স্থানীয় নির্বাচনে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীদের কোনো কোনো জায়গায় বিজয় হলেও নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে কোনো ছাড় দিতে চায় না বিএনপি।

একেবারে নির্দলীয় না হলেও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারবে এমন দাবিতে আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ‘উজ্জীবিত বিএনপি’। ঈদের পরপরই বড় ধরনের আন্দোলনে যেতে চায়। এর আগে রমজানজুড়ে ‘গণসম্পৃক্ততা’ বাড়ানোর কাজ করবে দলটি। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি এ পর্যন্ত রাজপথে জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলেও আগামী দিনে তারা শক্ত আন্দোলনের কথাই ভাবছে। রমজানজুড়ে দলের নেতারা বিভিন্ন জেলা সফর শুরু করেছেন। আর ঈদের পর দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বড় ধরনের আন্দোলনে যাওয়ার চিন্তা আছে বিএনপির।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে চলছে শঙ্কা, ক্ষমতার মেয়াদ যত ফুরিয়ে আসছে ততই চতুর্মুখি সঙ্কটের মুখোমুখি হচ্ছে। বিশেষ করে সম্প্রতি দলটির সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতাকর্মীদেরকে সতর্ক করে দেয়া বক্তৃতা-বিবৃতির পর আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ক্ষমতার পালাবদল হলে নিজেদের ভবিষ্যৎ পরিণাম কী হতে পারে তারা এখন এ নিয়ে ভয়-আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

বিএনপি সূত্র জানায়, ২০ দলীয় জোটের বাইরের সরকারবিরোধী ডান, বাম, মধ্যপন্থী দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের কথা ভাবছে বিএনপি। এ আন্দোলন হবে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার দাবিতে। পাশাপাশি  নির্বাচনী জোট গঠনেও কাজ চলছে। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই ছোট ছোট রাজনৈতক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তবে দেশের চলমান বৈরী রাজনৈতিক পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে এ বিষয়ে কৌশলী অবস্থানে বিএনপি।

এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, যুক্তরাজ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন। বৈঠকে আগামী নির্বাচন কীভাবে সব দলের অংশগ্রহণে করা যায় তা নিয়ে তারা কমিশনের সেঙ্গ আলোচনা করেছেন। এর মধ্য দিয়ে বিএনপির প্রতি দেশি-বিদেশি শক্তিগুলোরও আগ্রহ বাড়ছে বলে মনে করছে বিএনপির হাইকমান্ড। এ কারণেই দলটি সুষ্ঠু নির্বাচন ইস্যুতে বেশ আশাবাদী হয়ে উঠেছে।

বিএনপির হাইকমান্ড মনে করে, এবারের নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হলেই বিএনপি জয়লাভ করে সরকার গঠন করবে। সেক্ষেত্রে সবার আগে দলটি সুষ্ঠু ভোটের নিশ্চয়তা চায়। এজন্য জুলাই-আগস্ট মাসের যে কোনো সময় নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবেন খালেদা জিয়া।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ এবং নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে হলে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার বিকল্প নেই। আর এই ঐক্য গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের নির্দেশে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা অনেকের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে কথা বলেছেন। রমজানের পরে এ উদ্যোগে আরও গতি আনা হবে। কৌশলগত কারণে ঘোষণা না দিয়েই এই প্রক্রিয়া শুরু করেছে দলটি।

বিএনপির এক নেতা জানান, দৃশ্যমান ঐক্য না হলেও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের পথে থাকাই এখন বিএনপির লক্ষ্য। যুগপৎ আন্দোলনের ফলে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় হলে সংশ্লিষ্ট দলগুলোর সঙ্গে আসন ভাগাভাগি হবে। অর্থাৎ একটি নির্বাচনী জোট হবে। যে জোট আগামীতে একটি সরকার গঠন করবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!