• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
সম্ভাব্য প্রার্থীদের গণসংযোগ চলছে

নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে বামপন্থি দলগুলো


বিশেষ প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৮, ০২:২৮ পিএম
নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে বামপন্থি দলগুলো

ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে দেশের সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দুই জোটের বাইরে বাম দলগুলোর রয়েছে আরো ২টি জোট।

ইতোমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরা গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বড় দল ও জোটগুলোর কাছে ছোট দলগুলোর কদরও বেড়েছে। জনসমর্থন এবং সাংগঠনিক শক্তি যাই থাকুক না কেন বিভিন্ন জোটে অন্তর্ভুক্ত হতে চলছে দরকষাকষিও।

বাংলাদেশে বর্তমানে ২৪টি বাম রাজনৈতিক দল সংগঠন রয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক (বাম) দলের সংখ্যা ১০। এগুলো হচ্ছে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল।

তবে এর বাইরেও অনিবন্ধিত আরো ১৪ দল রয়েছে। অনিবন্ধিত এই দলগুলো হচ্ছে গণতন্ত্রী পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, জাতীয় গণফ্রন্ট, জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চ, কমিউনিস্ট কেন্দ্র এবং বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে আছে ১০ দল।

এই দলগুলো হলো বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ (ইনু), জাসদ (বাদল), ন্যাপ (মোজাফফর), গণতন্ত্রী পার্টি, গণআজাদী লীগ, বাসদ (রশীদ খান), কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, সাম্যবাদী দল। আর ২০ দলীয় জোটে রয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল। এর বাইরে বাম দলগুলোর আরো ২ জোট রয়েছে। সিপিবি, বাসদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলন, বাসদ (মার্কসবাদী) মিলে রয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। আর জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, জাতীয় গণফ্রন্ট, বাংলাদেশে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন এই তিন দল নিয়ে গঠিত হয়েছে জাতীয় মুক্তি জোট।

এদিকে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিক দলগুলো নির্বাচনের প্রচারণা শুরু করে দিয়েছে। ইতোমধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছে  নিজ দলের প্রার্থী তালিকাও পাঠানো হয়েছে। একাদশ নির্বাচনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (ইনু-শিরিন) ৩০টি, জাসদ (আম্বিয়া-প্রধান) ১৫টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ৩৫টি, ন্যাপ ২০টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ৬টি, গণতন্ত্রী পার্টি ১০টি, সাম্যবাদী দল ৪টি, গণআজাদী লীগ ১০টি, কমিউনিস্ট কেন্দ্র ২টি আসন চেয়েছে।

বর্তমান সংসদে বিভিন্ন আসনে ক্ষমতাসীন ১৪-দলীয় জোটে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পাটি ৭টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) ৬টি এবং ন্যাপের একজন সংসদ সদস্য রয়েছেন। অপরদিকে, বিএনপির সঙ্গে থাকা বামদলগুলো আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা না দিলেও ভেতরে ভেতরে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে। ইতোমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগও করছেন।

অপরদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জোটের বাইরের বামদলগুলো নিয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোট নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সমন্বয়ে গঠিত এই জোটে রয়েছে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাসদ মার্কসবাদী, কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও এই জোট এবার নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। জোটগতভাবে ৩০০ আসনেই নির্বাচন করবে বামপন্থি এই জোট। জোট শরিকরা আলাদাভাবে দলীয় প্রার্থী তালিকা তৈরি নিয়ে ব্যস্ত। প্রার্থী তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে কোন আসনে শরিক কোন দলের প্রার্থীর অবস্থান ভালো, কাকে ছাড় দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এসব বিষয় বিবেচনায় আনা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিপিবি কমপক্ষে ১৫০ থেকে ১৬০টি আসনে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ প্রার্থীই আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জামালপুর-২ আসনে সিপিবির উপদেষ্টা মনজুরুল আহসান খান, ঢাকা-১৯ আসনে দলের সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, চট্টগ্রাম-১২ দলের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, নরসিংদী-৪ প্রেসিডিয়াম সদস্য সাজ্জাদ জহির চন্দন, গাইবান্ধা-২ মিহির ঘোষ, ঢাকা-৮ অথবা খুলনা-২ সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স, নেত্রকোনা-১ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. দিবালোক সিংহ, নওগাঁ-৪ ডা. ফজলুর রহমান, মানিকগঞ্জ-৩ আজাহারুল ইসলাম আরজু এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে অ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষ।

বাসদ ৭০-৭৫টি আসনে প্রাথমিকভাবে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে। তার মধ্যে চাঁদপুর-৪ দলের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, ঢাকা-১৩ অথবা ঢাকা-২০ বজলুর রশিদ ফিরোজ, রংপুর-৩ রাজেকুজ্জামান রতন, গাজীপুর-১ ওসমান আলী, নওগাঁ-৩ জয়নাল আবেদীন মুকুল, জয়পুরহাট-১ অধ্যক্ষ ওয়াজেদ পারভেজ, হবিগঞ্জ-৩ অ্যাডভোকেট জুনায়েদ আহমেদ, মৌলভীবাজার-৩ অ্যাডভোকেট মইনুর রহমান মগনু, চাঁদপুর-৩ শাহজাহান তালুকদার, কিশোরগঞ্জ-১ অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম, রংপুর-৫ রংপুর মমিনুল ইসলাম এবং কুড়িগ্রাম-৪ আবদুল খালেক। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ২০-২৫টি আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর মধ্যে নাটোর-১ আনছার আলী দুলাল, নারায়ণগঞ্জ-৪ মাহমুদ হোসেন, সাতক্ষীরা-২ সরদার রইফ উদ্দিন, নেত্রকোনা-২ সজীব সরকার রতন, কিশোরগঞ্জ-৫ ডা. খোন্দকার মোসলেহ উদ্দীন, খুলনা-৪ কেএম আলীদা।

গণসংহতি আন্দোলন ১৫ থেকে ২০টির অধিক আসনে নির্বাচন প্রস্তুতি চলছে। এর মধ্যে ঢাকা-১২ দলের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ঢাকা-৭ মনিরুদ্দীন পাপ্পু, পাবনা-১ জুলহাসনাইন বাবু, নোয়াখালী-৪ সদস্য তাসলিমা আখতার। এ ছাড়া জোটের শরিক অন্য দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচারণা চালাচ্ছেন।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক জানান, জোটগতভাবেই আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে জোটভুক্ত দলগুলোর যার যেখানে ভালো অবস্থান ও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, সেখানে সেই দল থেকেই প্রার্থী দেওয়া হবে। জোটগতভাবে কোন দলকে কত আসনে প্রার্থী দেওয়া হবে, সেই বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

তিনি আরো বলেন, আগামী নির্বাচন আদৌ হবে কি না এবং হলেও সেটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হবে কি না, জনমনেই সন্দেহ-সংশয় ও উদ্বেগ রয়েছে। বাম গণতান্ত্রিক জোট একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য আন্দোলনের মাঠে রয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!