• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

নির্বাচনী রাজনীতির উত্তাপে জাতীয় পার্টি


সোনালী বিশেষ জুলাই ২৪, ২০১৭, ০৪:০০ পিএম
নির্বাচনী রাজনীতির উত্তাপে জাতীয় পার্টি

ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশের রাজনীতি বর্তমানে সরগরম হয়ে উঠেছে। ঠিক এই সময়ে ভুটান সফরের পর অনেকটা তড়িঘড়ি করেই ভারত সফর শেষে রোববার (২৩ জুলাই) দেশে ফিরেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

নির্বাচনের ঠিক আগে আগে তার ভারত সফর নিয়ে রাজনীতিতে চলছে নানা গুঞ্জন ও আলোচনা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি। দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও প্রায় দুই মাসের সফরে এখন লন্ডনে অবস্থান করছেন।

পাশাপাশি বিরোধী দলের প্রধান নেতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ভারত সফর করে দেশে ফিরলেন। দেশের রাজনীতিতে লন্ডন ও ভারতের গুরুত্ব যথেষ্ট। এইদিন বিবেচনায় দুই নেতার দুই দেশ সফর বেশ তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখছেন তারা।
 
জাপা সূত্র জানায়, দিল্লি সফর কালে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ আজমির শরিফে হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতির (রহ.) মাজার জিয়ারত করা ছাড়াও বিজেপি সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
 
এ প্রসঙ্গে জাপা মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের এই দিল্লি সফর নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। আর জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায় বলেন, পার্টির চেয়ারম্যান খাজা মঈনুদ্দীন চিশতির (রহ.)’র মাজার জিয়ারত করেছেন। এছাড়া দিল্লিতে পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে তারা দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে।

জানা গেছে, ভবিষ্যত রাজনীতিতেও নিজেকে নিরাপদ রাখতে চান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। যে দল ক্ষমতায় আসবে তাদের সঙ্গেই হবে জাপার গাটছড়া। তাই আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি অনেকটা আটঘাট বেঁধেই। ইতোমধ্যে ৫৮ দলের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক জোট গঠন করেছেন তিনি। ৩০০ আসনে নিজ দলের প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত। আসন প্রতি তিনজন করে প্রার্থী বাছাই কাজ শেষ হয়েছে।

দলটির নেতারা জানিয়েছেন, যদি বিএনপি নির্বাচনে আসে তাহলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ফের মহাজোট করে নির্বাচন করবে জাপা। অন্যথায় বিরোধী দলে যাবে জাতীয় পার্টি। তবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে আসন ভাগাভাগি হতে পারে। মহাজোটে নির্বাচন করতে হলে এরশাদের চাই ১০০ আসন। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের হাতে ১০০ জনের প্রার্থী তালিকা দেয়া হয়েছে জাপার পক্ষ থেকে। এরমধ্যে ৭০ জাপার প্রার্থী। বাকি ৩০ জন এরশাদের নেতৃত্বাধীন শরিক দলের নেতা।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জাপা নেতা জানান, ভারত চায় জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের পাশে থাক। কারণ জামায়াত, যুদ্ধাপরাধ, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ ইস্যুতে বিএনপির প্রতি ভারতের রাজনীতি খুব একটা ইতিবাচক নয়। ভারত সরকার মনে করে, বাংলাদেশের ভূখ- সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের অভয়ারণ্যে পরিণত হলে সবচেয়ে বেশি বিপদ তাদের। তাই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যাদের শক্ত অবস্থান তারা ক্ষমতায় টিকে থাকা মানেই ভারত নিজেদের অনেকটা নিরাপদ মনে করে।

সংশ্লিষ্ট নেতাদের দাবি, পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ভারত সরকারের ওপর ভরসা করেই ক্ষমতায় টিকে থাকতে চান। আর টিকে থাকার রূপরেখা চূড়ান্ত করতেই মূলত তার এই সফর। এবারের এরশাদের ভারত সফর নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যেও ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।

প্রসঙ্গত, তীব্র গণআন্দোলনের মুখে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের পতন হয়েছিল ৯০ দশকে। এরপর রাজনীতিতে খুব একটা সুসময় তার জন্য আসেনি। জেল খাটতে হয়েছে বারবার। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোট গঠনের পর এরশাদের রাজনৈতিক উত্থান ফের শুরু হয়। পাঁচ বছর অনেকটা নিরাপদেই রাজনীতিতে টিকে ছিলেন তিনি।

২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে না আসায় ৪০ এমপি নিয়ে বিরোধী দলে এখন জাতীয় পার্টি। সরকারে জাপার এখন তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী আছেন। মন্ত্রী পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে আছেন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ নিজেই। গেল আট বছরে তার সাংঠনিক দুর্বলতা কমলেও ক্ষমতার কাছাকাছি থেকে নিজেকে নিরাপদে রেখেছেন। তাই এই সময় ভারতের পরামর্শ মেনে চলার যৌক্তিকতা তো রয়েছেই।

সোনালীনিউজ/জেডআরসি/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!