• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনী লড়াইয়ে গোপনে কী প্রস্তুতি নিচ্ছেন খালেদা?


সোনালী বিশেষ নভেম্বর ৪, ২০১৭, ০২:৫২ পিএম
নির্বাচনী লড়াইয়ে গোপনে কী প্রস্তুতি নিচ্ছেন খালেদা?

ঢাকা : রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফরকে সফল ও অর্থবহ বিবেচনা করছে বিএনপি। এ সফরে নানামুখী সাফল্যের প্রকাশ দেখছেন দলীয় নেতারা। পাশাপাশি গত মাসের শেষ দিকে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার এমন কর্মচঞ্চল কর্মসূচিতে দলের তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত তাকে ঘিরে বেশ আলোচনা হচ্ছে।

নেতারা বলছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে দলীয় স্বার্থ নয়, মানবতা ও বাংলাদেশের  জাতীয় স্বার্থ দুটোকেই প্রধান করে দেখেছে বিএনপি। মানবতাকে প্রধান্য দিতেই সফরে কোনো পথসভা বা রাজনৈতিক বক্তব্য দেননি খালেদা জিয়া। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার ও আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি যে জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন তা এ ইস্যুতে সরকারের সহায়ক হবে। সরকার সেটাকে ব্যবহার করতে পারলে বাংলাদেশের ঘাড় থেকে রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত অবসান ঘটবে।

এদিকে, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে কিছুটা সরে এসে বিএনপি বলছে সহায়ক সরকারের কথা। এই সরকারের দাবি পূরণ না হলে এবারও নির্বাচন নয়, এমন বক্তব্য দিচ্ছেন কোনো কোনো নেতা। এরমধ্যেও নির্বাচনী লড়াইয়ের জন্য তৈরি হচ্ছে বিএনপি। প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা, নির্বাচনি ইশতেহার তৈরির কাজ শুরু করেছে দলটি। তবে সবকিছুই করা হচ্ছে গোপনীয়তা রক্ষা করে। এরইমধ্যে রাষ্ট্র পরিচালনায় দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য ভিশন-২০৩০ ঘোষণা করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

দলীয় সূত্র জানায়, সরকারদলীয় নেতাকর্মী ও প্রশাসনের নানামুখী প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও সম্প্রতি ঢাকা থেকে উখিয়া দীর্ঘ ৪৭৫ কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের যে স্বতঃস্ফ‚র্ত উপস্থিতি তা বিএনপি চেয়ারপারসন ও দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের করেছে অনুপ্রাণিত। দেশের সুশাসন ও সুদিনের প্রত্যাশী সাধারণ মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার ঘটাবে। খালেদা জিয়ার এ সফরে সাধারণ মানুষ সরকারকেও একটি বার্তা দিয়েছে।

রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে খালেদা জিয়াকে অভিবাদন জানানোর মাধ্যমে সরকারের প্রতি জানিয়েছে নীরব প্রতিবাদ। বিএনপির তরফে খালেদা জিয়ার উখিয়া সফরকে রাজনীতির রঙ্গে রাঙানোর প্রত্যক্ষ উদ্যোগ না থাকলেও পরোক্ষভাবে এটা পরিণত হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণার উপলক্ষ। প্রশাসনের কড়াকড়ি ও ক্ষমতাসীনদের প্রতিবন্ধকতায় রাজপথের রাজনীতিতে কোণঠাসা বিএনপিকে কিছুটা স্বস্তির হাওয়া দিয়েছে এ সফর।

এরই ধারাবাহিকতায় এবার  বিভাগীয় শহরগুলোতে সফরের পরিকল্পনা করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সিলেট বিভাগের মাধ্যমে তার এই সফর শুরু হওয়ার গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে। এছাড়া বগুড়া জেলাসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি জেলায়ও সফরে যেতে পারেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। তার এই সফরগুলোতে মানবিক বিষয়গুলো সামনে নিয়ে আসা হলেও মূল লক্ষ্য হবে নির্বাচনী প্রচারণা। সম্প্রতি ঢাকা থেকে সড়ক পথে কক্সবাজার যাওয়ার পথে নেতাকর্মীদের যে উৎসাহ উদ্দীপনা বিএনপি চেয়ারপারসন দেখেছেন তারই পুনরাবৃত্তি চান অন্যান্য বিভাগীয় সফরগুলোতেও।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, আমাদের নেত্রী আরও যাবেন। একটা অংশে মানুষের ঢল দেখেই এমন করছেন আপনারা? গাড়িবহরে হামলা করে বিএনপি এবং জনগণের অগ্রযাত্রা বন্ধ করা যাবে না। আরও সফরে যাবো আমরা। দেখবো কত বহরে আপনারা হামলা করতে পারেন। ব্যারিস্টার মওদুদ আরো বলেন, কক্সবাজার যাওয়ার পথে গণমাধ্যমের উপর সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে হামলা করেছে। কারণ তারা গণমাধ্যম এবং দেশের মানুষের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। সে কারণেই শুধু গাড়িবহরে নয়, গণমাধ্যমের উপর হামলা করেছে ছাত্রলীগ যুবলীগের সন্ত্রাসীরা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০ নভেম্বর বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে সারাদেশে কর্মসূচি পালন করা হবে। এবার খালেদা জিয়া বগুড়াতে তারেক রহমানের জন্মদিন পালন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

ঢাকার বাইরে খালেদা জিয়ার সফর কর্মসূচির পরিকল্পনায় আরও আছে, ডিসেম্বরে সিলেটে হযরত শাহজালাল (রা.) ও হযরত শাহ পরান (রা.)’র মাজার জিয়ারতে যেতে পারেন তিনি। কক্সবাজারের মতো সিলেটেও সড়ক পথেই যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তার। এ বিষয়ে দল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। সিলেট সফরের পর বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতেও সফরে যেতে পারেন তিনি। সেখানে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের চিন্তা ভাবনা করছেন খালেদা জিয়া। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার বিভাগগুলোতে সফরের বিষয়টি নিয়ে কানাঘুষা চলছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের বিভাগীয় সফরগুলোর তারিখ এখনও চুড়ান্ত হয়নি জানিয়ে দলটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আদালতে হাজিরা দেয়ার কয়েকটি তারিখ এলোমেলো রয়েছে। বখশিবাজার আলীয়া মাদরাসার মাঠে জবানবন্দি দেয়া দেশ হলে বিভাগীয় সফরের তারিখ চূড়ান্ত হবে।

তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের সফর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!