• ঢাকা
  • বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনে অযোগ্য হতে পারেন খালেদা জিয়া!


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ২৩, ২০১৬, ১১:২৭ এএম
নির্বাচনে অযোগ্য হতে পারেন খালেদা জিয়া!

বাংলাদেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে তিনবার তারা দেশ শাসন করে গেছেন। দলটি ক্ষমতা হারানোর পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৩৭টি মামলা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। প্রতিনিয়ত এসব মামলার মুখোমুখি হচ্ছেন তিনি। দ্রুত নিষ্পত্তির দিকে এগুচ্ছে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা বেশ কয়েকটি মামলা। সংশ্লিষ্ট এসব মামলার যেকোনো একটিতে সাজা হলেই আগামী নির্বাচনে অযোগ্য হতে পারেন তিনি।

বিএনপির অনেক নেতাই মনে করেন, এসব মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দিতে জাল গুটিয়ে আনছে সরকার। সংশ্লিষ্ট এসব মামলার যেকোনো একটিতে সাজা হলেই আগামী নির্বাচনে অযোগ্য হতে পারেন তিনি। তবে সহজে হার মানবেন না খালেদা জিয়া। আইনিভাবেই সরকারের সঙ্গে মোকাবেলায় চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়েছেন তিনি। এজন্য তিনি আইনজীবীদের বিশেষ নির্দেশনাও দিয়েছেন। তার বিশ্বাস- রাজনৈতিক বিবেচনায় দায়ের করা মামলাগুলো শেষ পর্যন্ত টিকবে না। মামলাগুলো নিষ্পত্তির পর রাজনীতিতে পুরোদমে ব্যস্ত হতে চান তিনি। সংশ্লিষ্টরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

এদিকে সময়ের ব্যবধানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দৌড় অনেকটাই বেড়েছে। তবে সেটা দল বা রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নয়। আদালতপাড়ায় তিনি এখন নিত্যদিনের ইস্যু। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তাকে দেখা না গেলেও, আদালত প্রাঙ্গণে প্রায় প্রতি মাসেই তাকে দেখা যায়।

জানা গেছে, বিগত এক দশকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ, নাশকতা, হত্যা ও মানহানির অভিযোগে অন্তত ৩৭টি মামলা হয়েছে। প্রতি মাসেই তার হাজিরার দিন নির্ধারিত থাকে। ৩৭টি মামলার মধ্যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে দুটিতে। একটি মামলা আত্মপক্ষের সমর্থন। সাক্ষীর জন্য দুটি। ১৪টি অভিযোগ গঠন শুনানির অপেক্ষায় ও দুটি পলাতকদের পত্রিকা বিজ্ঞপ্তির জন্য রয়েছে। আর বাকি ১৬টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। এর মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ও অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা দুটিরও রায় সন্নিকটে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া মেনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে। অপরদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা দাবি করছেন, সম্পূর্ণ রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে।

যে দুই মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

‘ভুয়া জন্মদিন’ পালন করার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গত ১৭ নভেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম মাজহারুল ইসলাম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এর আগে ২৩ আগস্ট নড়াইলে একটি মানহানির মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

আত্মপক্ষ সমর্থনের মামলা

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০১১ সালের আট আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলাটি করে দুদক। এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য আগামী ২৪ নভেম্বর দিন ধার্য রয়েছে।

সাক্ষীর জন্য দুই মামলা

৪৫ কোটি টাকার ঋণখেলাপির অভিযোগে সোনালি ব্যাংক একটি মামলা দায়ের করে। ঢাকার অর্থঋণ আদালতে মামলাটি সাক্ষী গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। অপরদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলায় তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষীর জেরার জন্য দিন ধার্য রয়েছে।

অভিযোগ গঠনের অপেক্ষায় ১৪ মামলা

রাজধানীর দারুসসালাম থানার বিশেষ ক্ষমতা আইনের আট মামলা, যাত্রাবাড়ী থানার দুই মামলা, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি, গ্যাটকো, নাইকো দুর্নীতি ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে একটি করে মোট ১৪টি মামলার অভিযোগ গঠনে শুনানির জন্য ধার্য রয়েছে।

পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির দুই মামলা

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও দারুসসালাম থানার নাশকতার মামলায় পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির জন্য ধার্য রয়েছে। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি এলেই মামলা দুটির অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য দিন ধার্য হবে। দুই মামলায়ই আসামি রয়েছেন খালেদা জিয়া।

তদন্তাধীন ১৬ মামলা

রাজধানীর গুলশানে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের মিছিলে বোমা হামলার ঘটনায় মামলা এবং বিভিন্ন সময়ে দায়ের করা মানহানি মামলাসহ ১৬টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।

আলোচিত এসব মামলা প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, বর্তমান সরকার তাড়াহুড়া করছে দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে আইনের মাধ্যমে আটকানোর জন্য। খালেদা জিয়া সম্পূর্ণ নির্দোষ। তাকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য এসব মামলা করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি দেশের স্বার্থে এসব মামলায় আইনগতভাবে লড়ে যাবেন।

এ ছাড়া খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেন, বিগত এক দশকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অন্তত ৩৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সব মামলাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ।

অন্যদিকে এসব মামলা প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আবু বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাগুলো হয়েছে। তারই হুকুমে দেশে বিগত দিনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। তদন্তে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!