• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
গণতন্ত্রের বিজয় দিবসে আ.লীগের সমাবেশ 

নির্বাচনেই ক্ষমতার পালাবদল


নিজস্ব প্রতিবেদক  জানুয়ারি ৬, ২০১৭, ১০:৩৭ এএম
নির্বাচনেই ক্ষমতার পালাবদল

যেকোনো মূল্যে গণতন্ত্র রক্ষার শপথ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন, নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতার পালাবদল হবে। কারণ  দেশে এখন গণতান্ত্রিক ধারা সৃষ্টি হয়েছে, ভবিষ্যতে এ ধারা আরো শক্তিশালী হবে। গণতন্ত্র রক্ষার জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। যারা কথায় কথায় নির্বাচন বর্জন করে তারা গণতন্ত্র চায় না। আওয়ামী নেতারা আরো বলেন, আগামী নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে উচিত শিক্ষা দেবে। খালেদা জিয়াকে মনে রাখতে হবে ক্ষমতায় যেতে হলে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। ক্যান্টনমেন্ট থেকে কেউ এসে তাকে  ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে না। 

গতকাল বৃহস্পতিবার (০৫ জানুয়ারি) দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ উপলক্ষে রাজধানীতে আয়োজিত পৃথক দুটি সমাবেশে নেতারা এসব কথা বলেন। রাজধানীতে এ দিন ধানমণ্ডির রাসেল স্কয়ার ও বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে পৃথক সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ উপলক্ষে রাজধানী ছাড়াও এ দিন দেশব্যাপী বিভাগীয় শহর, জেলা ও উপজেলায় সমাবেশ  অনুষ্ঠিত হয়।  

ধানমণ্ডির রাসেল স্কয়ারে আয়োজিত সমাবেশে  আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী  সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে নির্বাচন। নির্বাচন ছাড়া রাষ্ট্রব্যবস্থা অনুমোদন হয় না। সঠিক গণতন্ত্রের চর্চা অব্যাহত রাখলে নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সেনাবাহিনীর দরকার হয় না। 

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, আপনি নির্বাচন বর্জন করে কী পেলেন? আপনার এ সিদ্ধান্ত ছিল অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আপনি কি ভেবেছেন ক্যান্টনমেন্ট থেকে ইউনিফর্ম পরা কেউ সাঁজোয়া যান নিয়ে এসে আপনাকে ক্ষমতার সিংহাসনে বসাবে? এটা কখনো হবে না, কোথাও হয়নি। দেশে দারুণ উন্নয়ন হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। নানা দিক থেকে উন্নয়ন হচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে, এ দেশের অতি দরিদ্র গোষ্ঠীকে আমাদের রক্ষা করতে হবে।

দেশের উন্নয়নের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে সৈয়দ আশরাফ বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন হয়েছিল বলেই দেশ আজ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ সব সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা থাকতে হলে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সুরক্ষিত হয়েছে। রাজনীতি করতে হলে আপনাকে (খালেদা জিয়া) নির্বাচনে আসতে হবেই।

অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আয়োজিত সমাবেশে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে আন্দোলনের নামে বিএনপি ৫ জানুয়ারি গণহত্যা চালিয়েছিল। সেই পরিস্থিতি অত্যন্ত যোগ্যতার সঙ্গে মোকাবিলা করে শেখ হাসিনা দেশকে রক্ষা করেছিলেন।


 
বিএনপিকে উদ্দেশ করে আমির হোসেন আমু বলেন, আবার তারা পানি ঘোলা করতে চায়। আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা করতে চায়। যেমনিভাবে ২০১৫ সালে গণতন্ত্রের কালো দিবস পালনের নামে নিরীহ মানুষকে পেট্রলবোমা মেরে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, এই দেশে আর কোনো গণহত্যা করতে দেয়া হবে না। এই দেশের অগ্রগতি ও অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে দেয়া হবে না। দু-দুবার শিক্ষা দেয়া হয়েছে। যদি শিক্ষা না পেয়ে থাকে, তাহলে ২০১৯ সালের নির্বাচনে বাংলার মানুষ তাদের চিরদিনের মতো গণতন্ত্রের শিক্ষা দিয়ে দেবে।
নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতিকে আওয়ামী লীগ সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে জানিয়ে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা আশা করি, রাষ্ট্রপতি একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে শক্তিশালী ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। তার প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে।’

বিএনপিকে উদ্দেশ করে রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা আশা করি, বিএনপি আর সন্ত্রাসের পথে যাবে না, নাশকতার পথে যাবে না। যদি যায়, তাহলে তাদের চরম মূল্য দিতে হবে।’ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, সব ইস্যু হারিয়ে খালেদা জিয়া এখন মিথ্যা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামতে চাইছেন। আজকে তারা সারা বাংলাদেশে গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালনের কর্মসূচি দিয়েছিল। কিন্তু কোথাও তাদের নেতাকর্মীদের দেখা যায়নি। জনগণ তাদের প্রতিহত করেছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে জনসভায় আরো বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোজাফফর হোসেন (পল্টু), সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম, এ কে এম এনামুল হক শামীম, সাংসদ শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, সহসভাপতি আবু মোহাম্মদ মান্নাফী প্রমুখ। জনসভা পরিচালন করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আখতার হোসেন ও উপপ্রচার সম্পাদক মামুনুর রশীদ।

অন্যদিকে রাসেল স্কয়ারে ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম রহমত উল্লাহর সভাপতিত্বে জনসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’-এর আলোচনা সভা সফল করার লক্ষ্যে দুপুর আড়াইটার পর থেকেই মহানগর আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে সভাস্থলে আসতে শুরু করেন। নেতাকর্মীরা ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে বাজনা বাজিয়ে সভাস্থলে উপস্থিত হন। 

উল্লেখ্য, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট নির্বাচন বর্জন করে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট, জাতীয় পার্টি ও আরো কিছু দল অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ৫ জানুয়ারি ভোটের দিন ১৪৭ আসনে ভোট হয়। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।

অন্যদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট নির্বাচন বয়কট করে নির্বাচন বানচালের দাবিতে নির্বাচনের আগের তিন মাস ও নির্বাচনের পরে কয়েক মাস সারা দেশে একযোগে আন্দোলন করে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ও গণতন্ত্র রক্ষার যুক্তিতে বিরোধিতা মোকাবিলা করে দেশ পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ ২০১৫ সাল থেকে দিনটিকে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!