• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
ধলেশ্বরী-মেঘনায়

নিষেধাজ্ঞা সত্বেও চাঁদা দিয়ে চলছে বালুবাহী বাল্কহেড


মঈনউদ্দিন সুমন, মুন্সীগঞ্জ জানুয়ারি ২৮, ২০১৮, ০১:০৩ পিএম
নিষেধাজ্ঞা সত্বেও চাঁদা দিয়ে চলছে বালুবাহী বাল্কহেড

মুন্সীগঞ্জ: জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা সত্বেও মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী ও মেঘনা নদীবক্ষে রাতের বেলায় অবাধে চলাচল করছে বালুবাহী বাল্কহেড। নৌ-দুর্ঘটনা এড়াতে দীর্ঘ দিন আগেই রাতের বেলায় বালুবাহী বাল্কহেড চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জেলা প্রশাসন।

তারপরও জেলা প্রশাসনের ওই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাতের আঁধারে এ সব বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল থেমে নেই।

এদিকে নৌ-পুলিশকে চাঁদা দিয়েই রাতের বেলায় অবাধে চলাচল করছে এ সব বাল্কহেড। পুশিকে বাল্কহেড প্রতি চাঁদার টাকা নিয়ে থাকে বলে-এমন অভিযোগ রয়েছে। আর চাঁদার বিনিময়ে নৌপথে নির্বিঘ্নে বাল্কহেডয চলাচল করছে বলে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

এতে করে বড় ধরনের নৌ-দুর্ঘটনার আশংকায় থাকতে হচ্ছে নৌরুটে চলাচলকারী বিভিন্ন লঞ্চ চালক ও যাত্রীদের।

ইতোমধ্যে চলতি শীত মৌসুমে রাতের আঁধারে বালুবাহী বাল্কহেডের সঙ্গে যাত্রীবোঝাই লঞ্চের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। গেল মাসে বাল্কহেড ও যাত্রীবোঝাই লঞ্চের মধ্যে এমন পৃথক তিনটি সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।

এরমধ্যে শহরের উপকন্ঠ মুক্তারপুর এলাকা সংলগ্ন ধলেশ্বরী নদীবক্ষে বালুবাহী বাল্কহেডের সঙ্গে সংঘর্ষে দুমড়ে-মুচড়ে যায় দক্ষিণবঙ্গগামী যাত্রীবোঝাই লঞ্চ এমভি মানিক-৯।

ঢাকার সদরঘাট থেকে কয়েক’শ যাত্রী নিয়ে লঞ্চটি দক্ষিণবঙ্গে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে বাল্কহেডের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটলে অল্পেতে প্রানে রক্ষা পেয়েছেন লঞ্চটির যাত্রীরা।

এর কিছু দিন পরই শহরের উপকন্ঠ কাঠপট্টি লঞ্চ ঘাটের অদুরে ধলেশ্বরী বক্ষে রাতের আঁধারে চলাচলরত বালুবাহী বাল্কহেডের সঙ্গে এমভি গ্রীনল্যান্ড নামে লঞ্চের আরেকটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। লঞ্চটি দক্ষিণবঙ্গ থেকে ছেড়ে আসে ঢাকার সদর ঘাটের উদ্দেশ্যে। পথিমধ্যে বাল্কহেডের সঙ্গে দুর্ঘটনা কবলিত হয় লঞ্চটি। এই দুর্ঘটনাতেও অল্পেতে প্রানে বেচে গিয়েছিল লঞ্চটির কয়েক’শ যাত্রী।

এদিকে, মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী ও মেঘনা নদীবক্ষ হয়ে কয়েক হাজার বাল্কহেড চলাচল করে থাকে। মুন্সীগঞ্জ জেলা সদর ও গজারিয়া উপজেলার মেঘনা নদীতে জেলা প্রশাসনের ইজারাকৃত একাধিক বালু মহাল রয়েছে। বাল্কহেডগুলো ওই সব বালু মহাল থেকে দিন-রাত মিলিয়ে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে থাকে। আর সেই বালু বোঝাই বাল্কহেড গুলো মেঘনা ও ধলেশ্বরী নদী হয়ে চলে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
দিনের বেলায় বাল্কহেড চলাচল নিরাপদ হলেও রাতের আঁধারে এই বাল্কহেডই হয়ে উঠছে দুর্ঘটনার কারণ। তাই দীর্ঘ দিন আগে থেকেই নৌ-দুর্ঘটনা এড়াতে রাতের বেলায় বাল্কহেড চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল জেলা প্রশাসন।

জেলা বাল্কহেড মালিক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন- সমিতি আছে, কিন্তু কার্যক্রম নেই। এক বছর আগে মালিক সমিতির সভা হয়েছিল। সেখানে রাতের বেলা বাল্কহেড চলাচল না করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। জেলা প্রশাসনের সঙ্গেও বৈঠক হয়েছিল।

তবে তিনি দাবি করেন- দেশে আইন আছে, বড় আকারের কার্গো বডি রাতে নৌপথে চলাচলে কোন বাঁধা নেই। ছোট বডি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

নৌ-পুলিশের ঢাকা জোনের (দক্ষিণ) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম ফারুকী বলেন- পুলিশকে চাঁদা দিয়ে রাতের বেলা বাল্কহেড চলাচল করছে-কথাটি সত্য নয়। তবে আগের তুলনায় বর্তমানে নদী পথে বাল্কহেড চলাচল অনেকটা কমে গেছে। আবার রাতের বেলায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করতে ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে পাচ্ছি না।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা সাংবাদিকদের বলেন- ইতিপূর্বে রাতের আঁধারে বাল্কহেড চলাচল বন্ধ নিশ্চিত করতে জেলা বাল্কহেড সমিতির সঙ্গে বৈঠক করেছে জেলা প্রশাসন। ওই বৈঠকে কঠোর ভাবে রাতের বেলায় বাল্কহেড চলাচল না করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এরপরও রাতের আঁধারে বাল্কহেড চলাচল করছেই। কিন্তু বাল্কহেড চলাচলের উপর পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে রাতের বেলায় নৌ-পথে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা যাচ্ছে না। তবে নৌ-পুলিশের পাশাপাশি রাতের বেলায় নৌ-পথে কোস্টগার্ডকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!