• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নিয়মের তোয়াক্কা করছে না রাবি মেডিকেলের ডাক্তাররা


আবু সাঈদ সজল, রাবি আগস্ট ৯, ২০১৮, ০৬:৪৯ পিএম
নিয়মের তোয়াক্কা করছে না রাবি মেডিকেলের ডাক্তাররা

রাবি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে দিনের পর দিন ছুটি কাটানো এবং ডিউটিতে অবহেলা করাসহ নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে দায়িত্বরত ডাক্তারদের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীরা সময়মতো গেলেও চিকিৎসকদের দেখা মেলে না। সাধারণ অসুস্থতায়ও রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয় শিক্ষার্থীদের। ফলে ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা প্রাপ্য চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। চিকিৎসকদের সময়মতো না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু প্রশাসনের এ নিয়ে কোনো মাথাব্যাথা নেই।

সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে বর্তমানে আউটডোর ও ইমার্জেন্সি দুইভাবে চিকিৎসকরা দায়িত্ব পালন করেন। আউটডোর চলে রোববার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত। অন্যদিকে ইমার্জেন্সি প্রতিদিন প্রথম শিফট সকাল ৮টা থেকে বিকাল ২টা, দ্বিতীয় শিফট বিকাল ২টা থেকে রাত ৮টা, এবং তৃতীয় শিফট রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত। দুই সার্ভিসের জন্য চিকিৎসক ভাগ করা আছে। তবে চিকিৎসক সংকটের কারণে প্রায়শঃই আউটডোরের চিকিৎসকদের দিয়ে ইমার্জেন্সি করানো হয়। এতে আউটডোরে চিকিৎসক সংকট দেখা দেয়। এ নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও কর্তৃপক্ষ তা কানে তোলে না বলে অভিযোগ করেন চিকিৎসকরা।

এদিকে অভিযোগ রয়েছে, বেশ কয়েকজন চিকিৎসক ঠিক মতো ডিউটি করেন না। তারা ইচ্ছে মতো অফিসে আসেন, আবার ইচ্ছে মতো চলে যান। এ নিয়ে প্রায়ই গোলযোগ হয়। যেমন অর্থোপেডিক্স-এর ডাক্তার আসজাদ হোসেন কর্তৃপক্ষের কোনো রকম অনুমোদন ছাড়াই স্টেশনের বাইরে (ঈশ্বরদী) অবস্থান করেন। তিনি সোমবার সকালে দেরিতে আসেন। ওইদিন আউটডোর শিউটি শেষ করে নাইট শিফটে ইমার্জেন্সি ডিউটি করেন।

তারপর মঙ্গল ও বুধবার আউটডোর ডিউটি করেন। বুধবার তিনি বিকাল ৫টা পর্যন্ত না থেকে দুপুর ১টার দিকেই চলে যান। রোববার ও বৃহস্পতিবার রোগীরা এসে তাকে না পেয়ে হয়রানির শিকার হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. আমজাদ হোসেন বলেন, সোম, মঙ্গল ও বুধবার এবং দুই শিফটে রাতে দায়িত্ব পালন করছি। কোনো দায়িত্বে অবহেলা করি না।

ডা. জাহিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তার ইমার্জেন্সি ডিউটি দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত হলেও তিনি কোনোদিনই বিকাল ৪টার আগে অফিসে আসেন না। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত তিনি তার নিজস্ব প্যাথলজি ল্যাবে থাকেন। এ নিয়ে রাবি মেডিকেলে ডাক্তার-কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং রোগীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ রয়েছে। রাবি কর্তৃপক্ষ এবং প্রধান চিকিৎসক বারবার সতর্ক করার পরেও তিনি সঠিক সময়ে অফিসে আসেন না। তার ক্ষমতা এতটাই প্রবল যে বরং তাকে সহায়তা করার জন্য তার সঙ্গে প্রায় দিনই অন্য একজন ডাক্তারকে ডিউটি দেওয়া হয়। ওই ডাক্তারকে রেখে তিনি প্রায় দিনই সন্ধ্যা ৬টা সাড়ে ৬টার দিকে ডিউটি থেকে চলে যান। মাঝে মাঝে যখন তার একা ডিউটি থাকে তখন দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত মেডিকেল সেন্টারের ইমার্জেন্সি বিভাগ ডাক্তার শূন্য থাকে। মাঝে মাঝেই এ নিয়ে রোগীদের হইচই করতে দেখা যায়।

ইমার্জেন্সি ডাক্তারের সংকটের কারণে সকালের ইমার্জেন্সি শিফটে সপ্তাহে দুইতিন দিন আউটডোরের ডাক্তারকে দিয়ে ডিউটি করানো হয়। অথচ ইমার্জেন্সি বিকাল শিফটে দু’জন ডাক্তারকে ডিউটি দেওয়া হয়, যদিও সকাল ও রাতের ইমার্জেন্সি শিফটে একজন মাত্র ডাক্তারকে ডিউটি দেওয়া হয়। এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ডা. জাহিদ বলেন, সপ্তাহে যেদিন ডিউটি সেদিন সময়মতো পালন করি।

কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, গত ছয়/সাত বছরে রাবি মেডিকেলে প্যাথলজি, এক্সরে, আল্ট্রাসনোগাফি, ইসিজি, ফিজিওথেরাপি ইত্যাদি বৈষয়িক ক্ষেত্রে বেশ কিছু উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কাজ হয়েছে। কিন্তু গুটিকতক ডাক্তার ও কর্মচারীর দায়িত্বে অবহেলার কারণে চিকিৎসাসেবার মান ও পরিমাণ বাড়ছে না। রাবি মেডিকেলে চোখের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন দুজন। ডা. তবিবুর রহমান প্রধান চিকিৎসক হওয়ার পর থেকে রোগী দেখেন না। অন্য বিশেষজ্ঞ ডা. আনোয়ার হোসেন রোগী দেখতেন। তিনিও গত প্রায় ৭ মাস যাবৎ অফিস করেন না।

জানা গেছে, তিনি ছুটি না নিয়েই অননুমোদিতভাবে অনুপস্থিত থাকছেন। তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। চক্ষুরোগ ইউনিট এখন চালানো হচ্ছে ডা. সোহেলীকে দিয়ে। তিনি চোখের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি প্রায় প্রত্যেকদিনই দেরিতে (সকাল ১০টার দিকে) আসেন, আবার প্রায় দিনই সাড়ে ১২টার দিকে চলে যান যদিও তার দায়িত্ব সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। টিফিনের পর রোগীরা এসে ঘুরে যায়। তার মন্তব্য নেওয়ার জন্য মোবাইল করে পাওয়া যায়নি।

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মাশিউল আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি মাঝে মাঝে আগাম না জানিয়ে ছুটি নেন এবং কখনো কখনো দেরিতে আসেন। তাকেও টেলিফোন করে পাওয়া যায়নি।

ডা. নূর মহল বেগমের বিরুদ্ধেও অভিযোগ, তিনি প্রায় দিনই দুপুর ১টার দিকে চলে যান আর আসেন না, যদিও তার ডিউটি বিকাল ৫টা পর্যন্ত। তাকেও মোবাইল করে পাওয়া যায়নি।

রাবি মেডিকেলের কয়েকজন কর্মকর্তার-কর্মচারীর বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে রাবি মেডিকেল সেন্টারের প্রধান চিকিৎসক তবিবুর রহমানের মতামত জানার জন্য টেলিফোনে কল করলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!