• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
না.গঞ্জে ৭ খুন

নূর হোসেনসহ ২৬ জনের ফাঁসির আদেশ


আদালত প্রতিবেদক জানুয়ারি ১৬, ২০১৭, ১০:৩৪ এএম
নূর হোসেনসহ ২৬ জনের ফাঁসির আদেশ

নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত খুন মামলায় নূর হোসেনসহ ২৬ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।  বাকি ৯ জনকে সাত থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির মধ্যে তিনজন পলাতক।  নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন আজ সোমবার (১৬ জানুয়ারি) এই রায় ঘোষণা করেন।

রায় ঘোষণার সময় মামলার ৩৫ আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা ২৩ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১৭ জন র‍্যাবের সদস্য। মামলার শুরু থেকেই র‍্যাবের সাবেক ৮ সদস্যসহ ১২ আসামি পলাতক।

সাত খুনের মামলায় মোট ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। তাঁরা হলেন চাকরিচ্যুত লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ রানা, হাবিলদার এমদাদুল হক, আরওজি-১ আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হীরা মিয়া, ল্যান্স নায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহি আবু তৈয়ব, কনস্টেবল মো. শিহাব উদ্দিন, এসআই পূর্ণেন্দ বালা, করপোরাল রুহুল আমিন, এএসআই বজলুর রহমান, হাবিলদার নাসির উদ্দিন, এএসআই আবুল কালাম আজাদ, সৈনিক নুরুজ্জামান, কনস্টেবল বাবুল হাসান ও সৈনিক আসাদুজ্জামান নূর। কারাগারে থাকা বাকি আসামিরা হলেন সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, তাঁর সহযোগী আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দীপু, রহম আলী, আবুল বাশার ও মোর্তুজা জামান (চার্চিল)।

পলাতক আসামিরা হলেন করপোরাল মোখলেছুর রহমান, সৈনিক আবদুল আলীম, সৈনিক মহিউদ্দিন মুনশি, সৈনিক আল আমিন, সৈনিক তাজুল ইসলাম, সার্জেন্ট এনামুল কবীর, এএসআই কামাল হোসেন, কনস্টেবল হাবিবুর রহমান এবং নূর হোসেনের সহযোগী সেলিম, সানাউল্লাহ ছানা, ম্যানেজার শাহজাহান ও ম্যানেজার জামাল উদ্দিন।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় খান সাহেব ওসমান আলী জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সামনে থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২নং ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিম অপহৃত হন। পরদিন ২৮ এপ্রিল ফতুল্লা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন নজরুল ইসলামের স্ত্রী। ওই মামলায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নূর হোসেনকে প্রধান করে ৬ জনকে আসামি করা হয়। এছাড়া আইনজীবী চন্দন সরকারের মেয়ের জামাই বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা মডেল থানায় আরও একটি মামলা করেন। ৩০ এপ্রিল বিকেলে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ৬ জন এবং ১ মে সকালে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।  পরে স্বজনরা লাশগুলো শনাক্ত করেন।

এদিকে, ৭ খুনের ঘটনার পর নিহত নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম অভিযোগ তোলেন, ‘৬ কোটি টাকার বিনিময়ে র‌্যাবকে দিয়ে ওই সাতজনকে হত্যা করিয়েছে নূর হোসেন। এ অভিযোগের পর ২০১৪ সালের ৬ মে র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মাহমুদ, সাবেক অধিনায়ক মেজর আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার এম এম রানাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। ১৭ মে দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ঢাকার সেনানিবাস এলাকা থেকে মিলিটারি পুলিশ, ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশ ও নৌ-বাহিনীর গোয়েন্দারা এমএম রানাকে আটক করে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের কাছে তুলে দেন। পরে এ তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

এ হত্যাকাণ্ডে পর একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমানের সঙ্গে নূর হোসেনের টেলিফোনে কথোপকথনের বিষয়টি প্রচার করে। তখন বিষয়টি নিয়ে আরও তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সাত খুনের পর নূর হোসেন ভারতে পালিয়ে যায়। ২০১৪ সালের ১৪ জুন রাতে কলকাতার দমদম বিমানবন্দরের কাছে কৈখালী এলাকার একটি বাড়ি থেকে নূর হোসেন ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করে বাগুইআটি থানার পুলিশ। পরে ওই বছরের ১৮ আগস্ট নূর হোসেন, ওহাদুজ্জামান শামীম ও খান সুমনের বিরুদ্ধে ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে বারাসাত আদালতে চার্জশিট জমা দেয় বাগুইআটি থানা পুলিশ। ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ দমদম কারাগার কর্তৃপক্ষ নূর হোসেনকে বাংলাদেশে হস্তান্তর করতে সে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। এরপর ১৩ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ আদালতে উপস্থাপন করা হয় নূর হোসেনকে।

তিন জন তদন্তকারী কর্মকর্তার ১১ মাসের দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল ভারতের কলকাতায় গ্রেফতার হওয়া নূর হোসেন,  র‌্যাবের চাকরিচ্যুত তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। এজাহারভুক্ত ৫ আসামি অব্যাহতির আবেদন করা হয়।  মামলায় ১২৭ জনকে সাক্ষী করা হয়। ১৬২ ধরনের আলামত উদ্ধার দেখানো হয়েছে। মামলায় অভিযুক্ত ৩৫ জনের মধ্যে ২৩ জন গ্রেফতার রয়েছেন।  

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, সাত খুনের দু’টি মামলায় গ্রেফতারকৃত ২৩ জনের উপস্থিতিতে ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে চার্জ গঠন করেন। শুনানির সময়ে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা ২৩ জনের অব্যাহতি আবেদন করলে আদালতে  নাকচ করে দেন। পলাতক ১২ জনসহ সাত খুনের দুটি মামলায় অভিযুক্ত ৩৫ জনের সবার বিরুদ্ধেই চার্জগঠন করা হয়। ১২ জনের অনুপস্থিতিতেই মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। তাদের পক্ষে ৫ জন আইনজীবী নিযুক্ত করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!