• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নেইমারকে দিয়ে সৌদি জোটকে কাতারের দাতভাঙা জবাব


ক্রীড়া ডেস্ক আগস্ট ৪, ২০১৭, ০৮:১৬ পিএম
নেইমারকে দিয়ে সৌদি জোটকে কাতারের দাতভাঙা জবাব

ঢাকা: কেন নেইমারের পেছনে এত টাকা ঢালল পিএসজি? এর কারণ কি শুধুই ফুটবল? নাকি আছে রাজনীতির খেলও? সেই কারণই খুঁজে দেখার চেষ্টা করেছে বার্তা সংস্থা এএফপির বিশেষ প্রতিবেদন। বাই আউট ক্লজটা ক্লাবগুলো এমন জায়গায় নিয়ে যায়, যাতে কেউ তাদের খেলোয়াড় ভাগিয়ে নিয়ে যেতে না পারে। আর এই টাকাটাও কিছুই না, এমন ভঙ্গিতে দিয়ে দিল পিএসজি। তার খুঁটির মূল জোর আসলে কাতারি প্যাট্রো-ডলার। আর এই বদলির পেছনে কাতারের মাঠের বাইরের খেলও উঠে এসেছে আলোচনায়। 

পিএসজির মালিকানা কাতার স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্টের। প্রতিষ্ঠানের সভাপতি নাসের আল খেলাইফির সঙ্গে গভীর যোগসূত্র রয়েছে কাতার রাজপরিবারের। কাতারের রাজপরিবারের সবুজসংকেতেই নেইমারকে কিনেছে ফরাসি ক্লাবটি। আরব বিশ্বের ভূ-রাজনীতি বিশেষজ্ঞ ম্যাথু গুইদেরে ব্যাখ্যা করেছেন, ‘কাতারের উচ্চমহল থেকে নেইমারকে পিএসজিতে নিয়ে আসার কলকাঠি নাড়া হয়েছে। এটা মূলত একটা প্রচারণা কৌশল, কাতারকে ঘিরে সন্ত্রাসবাদসহ যেসব বিতর্ক চলছে, এসব বিতর্ক চলে যাবে আড়ালে। গত কিছুদিন ধরে কেউ কিন্তু নেতিবাচক বিষয়গুলো নিয়ে তেমন কথা বলছে না। সবাই এখন নেইমারের বদলি নিয়ে ব্যস্ত।’ 

নেইমার এমন সময়ে পিএসজিতে এলেন, যখন গত কয়েক দশকের মধ্যে রাজনৈতিকভাবে ভীষণ কোণঠাসা অবস্থানে রয়েছে কাতার। সৌদি আরবের নেতৃত্বে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর ও বাহরাইন গত মাসে কাতারের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে। তাদের অভিযোগ, ইসলামি সন্ত্রাসবাদ গোষ্ঠী এবং সৌদির আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে কাতারের। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি বরাবরই এসব অস্বীকার করে বলেছে, তেল-গ্যাসসমৃদ্ধ কাতারের কোমর ভেঙে দিতেই এ নিষেধাজ্ঞা। 

গণমাধ্যমটির বিপক্ষে ইসলামি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীকে ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ আনে সৌদির নেতৃত্বাধীন এ চারটি দেশ। তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ কাতার। মাত্র সাড়ে ১১ হাজার বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ছোট্ট দেশটি গত দুই দশকে আরব বিশ্বের বিভিন্ন সংঘাত ও সংঘর্ষের অন্যতম প্রভাবক হয়ে উঠেছে। কাতারের উত্থান, ইরানের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক সৌদি মিত্রদের দুশ্চিন্তার কারণ। যদিও কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি চলমান সংকট প্রসঙ্গে শুধু এটুকু বলেছেন, কাতার ক্ষমতাধর দেশ হতে চায়, তবে তা আগ্রাসী ক্ষমতাধর নয়। যেটিকে তিনি বলেছেন ‘সফট পাওয়ার’।

আর লন্ডনের কিংস কলেজের রাজনৈতিক ঝুঁকি গবেষক আন্দ্রেয়াস ক্রিয়েগ ব্যাখ্যা করেছেন, ‘এটা কাতারের সেই সফট পাওয়ারের একটা দেখনবাজি। বিশ্বকে তাদের দেখানো দরকার, সব ধরনের অভিযোগের পরও কাতার মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে সুস্থির দেশ। বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়টিকে এভাবে কিনে তারা বাকিদের বার্তা দিতে চায়, তারা চাইলে বিশ্বের সবচেয়ে সেরা সম্পদও কিনতে পারে, যদি প্রয়োজন পড়ে। বাকি উদ্দেশ্যগুলো পূরণ করতে কাতার টাকা ঢালতে কসুর করবে না।’

ফুটবলের সঙ্গে কাতার গাঁটছড়া বেঁধেছে অনেক দিন ধরেই। ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক দেশটির সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার সহপ্রতিষ্ঠান ছিল আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সম্প্রচারক বিইন স্পোর্টস। ২০১৩ থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত কাতার এয়ারওয়েজের লোগো-সংবলিত জার্সি পরেছেন বার্সেলোনার খেলোয়াড়েরা। মিডিয়া যে কাতারের সবচেয়ে বড় শক্তি, সেটা ব্যাখ্যা করেছেন গুইদেরে, ‘শুরু থেকে কাতারের কৌশলের কাছে মার খেয়ে গেছে তার প্রতিপক্ষরা, এদের কারোই আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে কাতারের মতো মিডিয়া শক্তি নেই।’

বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা, যে খেলা পাগলের মতো অনুসরণ করে বিশ্বজুড়ে কয়েক শ কোটি মানুষ, তাদের কাছে পৌঁছাতে ফুটবলকে মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে কাতার। এর জন্য টাকা ঢালতে কোনো কার্পণ্য নেই তাদের। নেইমারের সঙ্গে পিএসজির পাঁচ বছর মেয়াদি চুক্তি, যার পেছনে ৫০০ মিলিয়ন ইউরো খরচ হয়ে যাবে, সেটিও কাতারের বাজেটে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। ক্রিয়েগ বলেছেন, ‘তাদের মাথাপিছু আয় বিশ্বের সেরা। তারা ক্রীড়া বিশ্ব, আরব আমিরাত ও সৌদি আরবকে এই শক্ত বার্তা দিতে চেয়েছে, তারা এই খেলোয়াড়টিকে চেয়েছে, আর যত দামই হোক না কেন, সেই দামেই তারা তাঁকে কিনেছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আরআইবি/জেডআই

Wordbridge School
Link copied!