• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
পদ্মায় স্পিডবোট

নৈরাজ্যের শিকার যাত্রী


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ১০, ২০১৬, ১০:৪৬ এএম
নৈরাজ্যের শিকার যাত্রী

পদ্মার অথৈ জলরাশিতে অ্যানি নামের একটি মেয়ে হারিয়ে গেছে। দুর্ঘটনার এক মাস পর ৫ অক্টোবর একটি দৈনিকের ফলোআপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেয়েটির পরিবার মাদারীপুর থেকে ভোলা পর্যন্ত দীর্ঘ নদীপথে ও তীরে নিজেরা লঞ্চ, নৌকাযোগে লোকজন লাগিয়ে এতদিন খুঁজেছে। পরিবারে শুধু কান্না ও বিষাদ। লাশ পাওয়ার সান্ত্বনাও জোটেনি। লৌহজং থানায় জিডি হয়েছিল। নদীসংলগ্ন অন্যান্য থানার সাহায্য চাওয়া হয়েছে। থানাপুলিশ কোথাও মৃতদেহের সন্ধান পেলে তার পরিচয় শনাক্তের দায়িত্ব পালন করে; কিন্তু ডুবে যাওয়া একজন নৌযাত্রী বা তার লাশ উদ্ধারের জন্য কোনো সরকারি উদ্ধারকারীর সহায়তা পাওয়া যায়নি। রিভার পুলিশ অবহিত কি-না জানা যায়নি। 

দেশে প্রতিদিন সড়কপথে দুর্ঘটনায় কত মানুষ মারা যাচ্ছে, মাঝে মধ্যে নদীপথে লঞ্চ ডুবে যাওয়ায় কত মানুষের সলিলসমাধি ঘটছে, কত বিয়োগান্ত দৃশ্যের অবতারণা হচ্ছে। একজন অ্যানির হারিয়ে যাওয়ার খবর কে রাখে? অ্যানি একজন মানুষ। মাদারীপুরের শিবচরের আইরিন নাহার অ্যানি ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস টেকনোলজির এমবিএ শেষ সেমিস্টারের ছাত্রী। কারও স্নেহের সন্তান, কারও আদরের বোন, কারও প্রাণের বন্ধু। সর্বোপরি বাংলাদেশের একজন নাগরিক। 

রাষ্ট্রে প্রতিটি নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা পাওয়ার, নিরাপদে ভ্রমণ করার, বেঁচে থাকার অধিকার আছে। টাকা দিয়ে যাতায়াতের সেবা পাওয়ার সময় সেবাদানকারী সংস্থার তাকে আইনানুগ নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আছে। সংস্থা বিধিবিধান না মানলে শাস্তির ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা থাকবে। কিন্তু পদ্মায় নিখোঁজ অ্যানিকে এক মাসেও পাওয়া যায়নি- এই ফলোআপ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যাত্রী পারাপারকারী স্পিডবোটে নিয়ম না মানার মহড়া ও যাত্রীর নিরাপত্তাহীনতার উদ্বেগজনক চিত্র। ফেরি ও লঞ্চ থাকলেও যাত্রী চলাচল বেশি এবং সময় বাঁচানোর দৌড় প্রত্যেকেরই। মাওয়া-কাওড়াকান্দিতে অন্তত শ’দুয়েক স্পিডবোট চলে। 

এবার বর্ষায় ফেরিঘাটের দুরবস্থায় স্পিডবোটে চলাচল বেড়েছে। বোটগুলো নিয়ম ভেঙে বেশি যাত্রী নেয়। ছোট বোটে আট ও বড় বোটে ১২ জন যাত্রী বহনের নিয়ম। ৫ সেপ্টেম্বর শিমুলিয়া ঘাট থেকে কাওড়াকান্দি যেতে অ্যানি যে বোটে উঠেছিলেন সেটাতে ১৮ জন যাত্রী ছিল। তলা ফেটে বোটটি ডুবে যায়। অন্য যাত্রীরা একটি লঞ্চের সাহায্যে রক্ষা পান। গত মার্চে এক প্রতিবেদনে তথ্য ছিল ২৩ যাত্রী বহনের। অনেক বোটের লাইসেন্স নেই। যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট দেওয়ার নিয়ম মানে না, কিছু থাকলেও ফুটাফাটা। ১৫০ টাকা ভাড়ার অংশবিশেষ বারো ভূতে ভাগ হয়। যাত্রী বেশি হলে ২০০ টাকা ভাড়া হাঁকে। ঘাটে মাস্তান থাকে। তাই প্রতিবাদ চলে না। এভাবেই কি বাংলাদেশ চলতে থাকবে?

সোনালীনিউজ/ঢাকা

Wordbridge School
Link copied!