• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নৌকায় চড়তে ইসলামী দলগুলোর তোড়জোড়


সোনালী বিশেষ জুলাই ৩১, ২০১৭, ০৩:৫৪ পিএম
নৌকায় চড়তে ইসলামী দলগুলোর তোড়জোড়

ঢাকা : দশম সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ছেড়ে আসা বিভিন্ন ইসলামি দলের নেতারা আওয়ামী লীগের সমর্থকদের সঙ্গে মিলে নতুন একটি জোট করছেন, যা ভোটের হিসাবে ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সমঝোতা করে ক্ষমতাসীন দলের ‘নৌকা’ প্রতীকেই ভোট করার অভিপ্রায় এই জোটের উদ্যোক্তাদের।

এই প্রক্রিয়ার সমন্বয় করছেন গণতান্ত্রিক ইসলামিক মুভমেন্ট নামে একটি দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. নূরুল ইসলাম খান, যিনি এক সময় বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোটের শরিক ইসলামী ঐক্যজোটের নেতা ছিলেন।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ১০টি ইসলামী মূল্যবোধ ও সমমনা দলকে নিয়ে নতুন জোটের ঘোষণা আসবে। জোটের নাম হবে ইসলামিক ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স অথবা বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় এই জোট কাজ করে যাবে।

ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য মিছবাহুর রহমান চৌধুরী নতুন এই জোটের চেয়ারম্যান হতে পারেন। নূরুল ইসলাম খান বলেন, জোটবদ্ধ হতে চলা এই দলগুলোর নেতারা আগামী নির্বাচনেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিজয় চান। জোটের শীর্ষ নেতাদের জন্য একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২০টি আসনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা হতে পারে বলে আশা করছেন তিনি।

দলগুলো হচ্ছে, মাওলানা জাফরুল্লাহ খান আমীরে শরীয়তের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট, মো. নূরুল ইসলাম খানের নেতদৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক ইসলামিক মুভমেন্ট, আলমগীর মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি)। আব্দুর রশিদ প্রধানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি, হাসরত খান ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ ভাসানী), আব্দুল মালেক চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল), মাওলানা শাহ মোস্তাকিম বিল্লাহ সিদ্দিকী ও মেজো পীর শর্শীনা দরবার শরীফের নেতৃত্বাধীন জমিয়তে হিজবুল্লাহ বাংলাদেশ, ব্যারিস্টার এম হায়দার আলীর নেতৃত্বাধীন পিপলস জাস্টিস পার্টি এবং কাজী আবুল খায়েরের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ মুসলিম লীগ।

এই দলগুলোর বেশিরভাগই আগে বিএনপি ঘরানার ছিল বলে জানান নতুন জোট প্রক্রিয়ার সমন্বয়কারী নূরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এগুলো এক সময় চার দলীয় জোটের সঙ্গেও যুক্ত ছিল। কিন্তু দশম সংসদ নির্বাচনের পরে জোট থেকে বেরিয়ে অনেকে আলাদা এলায়েন্সও করেছে। এই প্রক্রিয়ায় থাকা দুই থেকে তিনটি দল আওয়ামী লীগ সমর্থক হলেও আগে কোনো জোটে ছিল না।

তাছাড়া স্বাধীনতাবিরোধী মুসলীম লীগ ভেঙে কয়েক টুকরা হওয়ার পর ‘নজুন প্রজš§’ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের জোটে যুক্ত হতে আগ্রহ দেখাচ্ছে বলে জানান নূরুল। তিনি বলেন, বিএনপি জোট ছেড়ে আসা দলগুলোকে সঙ্গী করেই একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আমরা নতুন প্ল্যাটফর্ম করতে যাচ্ছি, যারা নৌকার সঙ্গে সমঝোতা হলে তাদের ভোট বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখতে পারব।

হাফেজ্জী হুজুর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের ২৯ বছর মহাসচিব ছিলেন জাফরুল্লাহ খান। গত কাউন্সিলে নেতৃত্বের বিরোধ থেকে একই নামে আলাদা দল গড়েন তিনি। নিজেদের মূল দাবি করে নির্বাচন কমিশনে বটগাছ প্রতীক চেয়ে আবেদন হয়েছে তাদের পক্ষ থেকে।

মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে সোচ্চার মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের ব্যানারে মাঠে আছেন। বরাবরই আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবে পরিচিতি রয়েছে তার। নুরুল ইসলাম খান এক সময় বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ইসলামী ঐক্যজোটের আইন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

২০০৯ সালে বেরিয়ে তিনি গঠন করেন গণতান্ত্রিক ইসলামিক মুভমেন্ট, যার চেয়ারম্যান তিনি। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে এনপিপি’র শওকত হোসেন নীলু নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দেয় এনডিপি, ইসলামিক পার্টি, জাগদল ও ন্যাপভাসানী।এনডিপির চেয়ারম্যান আলমগীর মজুমদার ওই জোটের মহাসচিব ছিলেন। নীলু অসুস্থ হওয়ার পর তারা ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স নামে আলাদা জোট করে।

স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় শর্শিনার বড় পীর ছিলেন রাজাকার। তবে মেজো পীর ছিলেন স্বাধীনতার পক্ষে। খানকাকেন্দ্রিক সংগঠন হিসেবে গড়ে ওঠা জমিয়তে হিজবুল্লাহ বাংলাদেশ এখন  মেজোপীরের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে।

বছর তিনেক আগে আত্মপ্রকাশ করা পিপলস জাস্টিস পার্টির নেতা হায়দার আলী ইসলামিক টিভির প্রতিষ্ঠাতা এমডি। তবে ছাত্রজীবনে তিনি ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের রাজনীতির পক্ষে ছিলেন বলে নূরুল ইসলামের ভাষ্য। বাংলাদেশ মুসলীম লীগ-বিএমএল নামে একাংশ রয়েছে বিএনপি জোটে।

আর হারিকেন প্রতীকের বাংলাদেশ মুসলীম লীগের আগ্রহ রয়েছে নতুন জোটের দিকে। নূরুল ইসলাম খান বলেন,বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল ছেড়ে আসা দলগুলো মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে অবস্থান নিয়ে এখন আমাদের নতুন ইসলামী জোটে যোগ দিচ্ছে।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ বিএনপি পরের বছর টানা তিন মাস সরকারবিরোধী আন্দোলন করেও সফলতার মুখ দেখতে না পারার পর ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে আসে কয়েকটি দল।

বিএনপি নেতারা বলে আসছেন, ২০ দলীয় জোটের শক্তি খর্ব করতে আওয়ামী লীগ তাদের মদদ দিয়ে আলাদা করেছে। বছর দেড়েকের মাথায় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বে ‘সম্মিলিত জাতীয় জোট’ নামে ‘ইসলামী মূল্যবোধের’ নতুন একটি জোটের ঘোষণা এসেছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সুফীবাদী তরীকত ফেডারেশন ছাড়া আর কোনো ইসলামী দল নেই। তবে সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে তাদের ‘সখ্য’ও ভোটের হিসাবে নতুন কিছুর আভাস দিচ্ছে বলে অনেকে মনে করছেন।

এদিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ না থাকলেও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে তাদের কথা হচ্ছে বলে জানান নূরুল। আওয়ামী লীগকে সমর্থনের বিষয়ে ১১ বছর আগে শেখ হাসিনাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বলে জানান তিনি। এই ইসলামী দলগুলোর সারা দেশে মোট ভোটের প্রায় ২০ শতাংশ রয়েছে দাবি করে নূরুল বলেন, আমরা ইসলামী মূল্যবোধকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে এর সিংহভাগ ভোট নিজেদের পক্ষে টানতে পারব। সিগন্যাল পেলে আমরাও মাঠে নেমে পড়ব। আশা করি, সমর্থন দৃশ্যমান করতে পারব।

২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। এ নির্বাচনে ৪০টি নিবন্ধিত দল অংশ নিতে পারবে, সেই সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থিতার সুযোগ রয়েছে। ভোটকে সামনে রেখে কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসি সংলাপও শুরু করছে ৩১ জুলাই থেকে। অক্টোবর থেকে জানুয়ারির মধ্যে নতুন দলকেও নিবন্ধন দেবে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!