• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নৌমন্ত্রীর সরকারি বাসায় ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত!


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ১, ২০১৭, ০৩:৫৭ এএম
নৌমন্ত্রীর সরকারি বাসায় ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত!

ঢাকা: খুলনা বিভাগের পরিবহন ধর্মঘট চলাকালেই প্রশাসনের উদ্যোগে মিমাংসিত হলে সন্ধ্যায় ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু ঢাকার এক নেতার নির্দেশে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে রাতেই ঝুলে যায় সেই সিদ্ধান্ত। পরে গভির রাতে সরকারের নৌমন্ত্রী শাহজাহান খানের সরকারি বাসভবনে হয় গোপন সলাপরামর্শ। সেখান থেকেই ত্বরিৎ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয় পুরো দেশে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট। বিশ্বস্থ কয়েকটি সূত্র একথা জানিয়েছে।

সূত্র মতে, মাঠ পর্যায়ে সেই বার্তা পৌঁছাতে বেলা দশটা পর্যন্ত সময় লেগে যায়। এই সংবাদ পেয়েই চলমান গাড়ি থামিয়ে নামিয়ে দেয়া হয় যাত্রীদের। বন্ধ করে দেয়া হয় গাড়ির চাকা। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে ২৮ ফেব্রুয়ারি অর্ধবেলার হরতাল ডেকেছিল বামদলগুলো। তাই পরিবহনগুলো একটু দেরি করেই টার্মিনাল ও বিভিন্ন জায়গার স্টপেজ থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। 

সূত্র জানিয়েছে, সরকারি বাসায় অনুষ্ঠিত সেই আলোচিত বৈঠকের সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়াতে জোরালোভাবে অংশ নিয়েছেন সরকারের একজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সমর্থনপুষ্ট পরিবহন শ্রমিক নেতারা। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহল ও সুশীল সমাজের মাঝে প্রশ্ন উঠেছে, সরকার জনগণের জন্য কাজ করবে। সেই সরকারের মন্ত্রী যদি জনবিরোধী কাজে অংশ নেয় তাহলে জনগণ কোথায় নিরাপদ থাকবে। তাও আবার সরকারি বাসভবনে বসে জনবিরোধী সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে সেই মন্ত্রীর নৈতিকতা ও ক্ষমতার অপব্যবহার ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ বলেই বিবেচনা করতে হবে।

বর্তমান নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান সারা দেশের শ্রমিক সংগঠনের সবচেয়ে বড় ফোরাম বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি। এই সংগঠনটিই সারা দেশের পরিবহন খাতকে নিয়ন্ত্রণ করে। মালিক পক্ষকেও শ্রমিক সংগঠনটিকে হিসেব করে চলতে হয়।

গণপরিবহন মালিক পক্ষ ও শ্রমিকদের কয়েকটি সংগঠন সূত্র জানিছে, মন্ত্রীর বাসায়ই সারাদেশে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যেহেতু তিনি সরকারের মন্ত্রী ও আবার সংগঠনের সভাপতি তাই আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মঘটের বিষয়টি ঘোষণা করা হয়নি। বিভিন্ন জনকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ধর্মঘটের কথা জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

মন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ নেতারাই বিভিন্ন জায়গায় মোবাইল ফোন দিয়ে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছেন।

গতকালই ধর্মঘটের পক্ষে সাফাই গেয়ে নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান বলেছেন, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করতেই পারেন। চালকেরা মনে করেছেন, তারা মৃত্যুদণ্ডাদেশ বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশের মতো রায় মাথায় নিয়ে গাড়ি চালাবেন না। তাই তারা স্বেচ্ছায় গাড়ি চালাচ্ছেন না। এটাকে ধর্মঘট নয় ‘স্বেচ্ছায় অবসর’ বলা যেতে পারে।

অথচ যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের সামনেই যাত্রী ও চালককে বাস থেকে নামিয়ে দেয় সরকার সমর্থক শ্রমিকরা। এসময় পুলিশ কোনো ভূমিকা পালন করেনি। সিএনজি চালককে মারধোর করা হয়েছে। এমনকি সরকারি পরিবহন বিআরটিসি বাসকে চলতে দেয়া হয়নি।

জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী এ হরতালের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ২৮ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, তাদের (পরিবহনশ্রমিক) উদ্দেশে বলতে চাই, জনগণকে কষ্ট না দিয়ে আপনারা আদালতে এসে আপনাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। আপনাদের বক্তব্য যদি যুক্তিসংগত হয়, তবে তা দেখা হবে। যুক্তিসংগত না হলে দেখা হবে না। 

অপরদিকে এই ধর্মঘটে আদালত অবমাননা হচ্ছে- এমন কথা বলেছেন সরকারের অপর মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, এটি আদালতের বিবেচ্য বিষয়।

প্রসঙ্গত, মানিকগঞ্জে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহতের ঘটনায় এক বাস চালকের যাবজ্জীবন সাজা হওয়ায় ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে খুলনা বিভাগের দশ জেলায় পরিবহন ধর্মঘট চলছিল। অপরদিকে সাভারে ট্রাকচাপা দিয়ে এক নারীকে হত্যার দায়ে আদালত ২৭ ফেব্রুয়ারি চালকের ফাঁসির দণ্ড দিলে ধর্মঘট অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশব্যাপী পালন শুরু করে তারা। 

সোনালীনিউজ/আতা

Wordbridge School
Link copied!