• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নয়া ফরাসি প্রেসিডেন্টের নয়া বার্তা কী কী?


আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক মে ১০, ২০১৭, ০২:০৪ এএম
নয়া ফরাসি প্রেসিডেন্টের নয়া বার্তা কী কী?

ঢাকা: ফ্রান্সের নতুন প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতি করার অভিজ্ঞতা নেই। তারপরেও ফ্রান্সের অর্থনীতির হাল ধরার অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ। ফলে অর্থনীতির আসন্ন বিপদ সম্পর্কে সম্মুখ ওয়াকিবহাল। 

বেক্সিট নিয়ে ব্রিটেন যখন উন্মাতাল, বিরোধীপ্রার্থী মারিন লু পেন রক্ষণশীল জাতীয়তাবাদীদের আবেগকে ব্যবহার করে একই পথে হাঁটছিলেন। কিন্তু ম্যাক্রোঁ সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত ফরাসিদের নয়া বার্তা বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন। ম্যাক্রোঁ প্রেসিডেন্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাতিল হয়ে গেল ফ্রেক্সিট সম্ভাবনা।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ম্যাক্রোঁ যদি তার প্রতিশ্রুত অর্থনৈতিক পরিবর্তনগুলো আনতে ব্যর্থ হন তাহলে পাঁচ বছর পর তাকে আর নির্বাচনে দেখা যাবে না। তাহলে সাবেক এই অর্থমন্ত্রীর নির্বাচনী ইশতেহারের অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতিগুলো কী কী ছিল?

ইউরোজোনের সংস্কার
নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পরপরই ডলারের বিপরীতে ইউরোর দর গত ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়েছে। প্রতদ্বন্দ্বী লু পেনের ঘোষণা ছিল যে তিনি ফ্রান্সকে ইউরোজোন থেকে বের করে আনবেন এবং এর পক্ষে গণভোটের ব্যবস্থাও করবেন।

ম্যাক্রোঁ বলেছিলেন তিনি ইউরোজোনের মধ্যেই থাকবেন তবে একে ঢেলে সাজাতে চান। পুরো ইউরোজোনের জন্য আলাদা একটি বাজেট এবং আলাদা অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব জানান। ম্যাক্রোঁ বার্লিনকে অনুরোধ করবেন তারা যেন জার্মানিতে সেই ধরনের বিনিয়োগ করে যা ফ্রান্সসহ ইউরোজোনের অন্যান্য দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য সহায়ক হবে।

তবে এটা তখনই সম্ভব হবে যখন জার্মানিও তাতে সম্মতি দেবে। আর জার্মানির নির্বাচনের আগে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। জার্মানিতে নতুন সরকার আসতে আরও এক বছর লাগবে। ততদিন পর্যন্ত ম্যাক্রোঁ নিজ দেশ নিয়েই চিন্তা করতে পারবেন।

বাণিজ্য সহায়তা
ফ্রান্সের সাবেক রাষ্ট্রপতি ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ যখন তার পার্টির সমাজতান্ত্রিক সদস্যদের মন যোগানোর জন্য কোম্পানিগুলোর ওপর কঠোর হচ্ছিলেন, অর্থমন্ত্রী ম্যাক্রোঁ তখন তার দেশের অর্থনীতিতে ব্যবসার গতি পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছিলেন। তিন বছরের মধ্যেই ব্যবসা বাণিজ্যে মন্দা চলে আসে।

দেশের অর্থনীতিকে আবারও চাঙা করতে ম্যাক্রোঁ ৪ হাজার কোটি ইউরো (৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার) ট্যাক্স অব্যাহতি সুবিধা দেবেন যার ফলাফল ম্যাক্রোঁর অবস্থানকে পাকাপোক্ত করে তুলতে সাহায্য করবে। করপোরেট ট্যাক্সকে ৩৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করবেন। সম্পদের ওপর কর বসাবেন যা শুধু বিত্তশালীদের ওপরেই প্রযোজ্য হবে, বিনিয়োগের ওপর নয়।

বেকারত্ব হ্রাস
ফ্রান্সে বর্তমানে বেকারত্বের হার ১০.১ শতাংশ। ৩০ লাখ যোগ্য লোক রয়েছে যারা চাকরি পাচ্ছে না। সংখ্যাটি ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ না হলেও গড় বেকারত্বের হার নিয়ে থাকা কিছু দেশের চেয়ে অন্তত বাজে অবস্থা বলা যায়। যেমন- নেদারল্যান্ডসে বেকারত্বের হার ৫ শতাংশ এবং জার্মানিতে ৪ শতাংশের চেয়েও কম। আর যুক্তরাষ্ট্রে এটা ৫ শতাংশের কম। বেকারত্ব যেকোনও দেশের অর্থনীতির জন্যই খারাপ: বিশেষ করে তরুণদের বেকারত্ব, যারা ২৫ বছরের কম বয়সী।

নয়া ফরাসি প্রেসিডেন্ট

ম্যাক্রোঁ আশা করছেন, শ্রমনীতিতে পরিবর্তন এনে তিনি এই হারে কিছুটা পরিবর্তন আনতে পারবেন। এই শ্রমনীতিতে কোম্পানিগুলোতে নতুন কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিল হওয়ার পরামর্শ থাকবে। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পূর্বাভাস দিয়েছে, বড় কোনও পরিবর্তন ছাড়া ফ্রান্স যত চেষ্টাই করুক বেকারত্বের হার ৮.৫ শতাংশের নিচে আনতে পারবে না।

সপ্তাহে ৩৫ ঘণ্টা কাজ করার বিতর্কিত এই নিয়মে পরিবর্তন না আনলেও অতিরিক্ত সময়ের কাজের বেতন বাড়াবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ম্যাক্রোঁ। অপরদিকে কোম্পানিগুলোকে তার কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে সমঝোতার ভিত্তিতে বেতন ও কাজের সময় ঠিক করতে বলবেন তিনি। ভালো কিছুই হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ অর্থনীতিতে গত এক দশকের চেয়েও বেশি কর্মক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে এখন।

বাজেটের লক্ষ্য
ইউরোপীয় ইউনিয়ন চায় তাদের সদস্য দেশগুলোর বাজেট ঘাটতি যেন ৩ শতাংশের বেশি না হয়। গত কয়েক বছরে প্রেসিডেন্ট ওলাঁদের শাসনামলে ফ্রান্স এই লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। ম্যাক্রোঁ বলছেন, তিনি অর্থমন্ত্রী হিসেবে সবসময় এই লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করেছেন এবং আশা করছেন চলতি বছরের মধ্যে সেই লক্ষ্য অর্জনে সফল হবেন।

সরকারি ব্যয় কমানো
বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল অনুন্নয়ন খাতের মধ্যে ফ্রান্সের নাম রয়েছে। গত বছর এর ব্যয় ছিল জিডিপির ৫৬.৫ শতাংশ। তার ওপর করপোরেট ট্যাক্স কমানোর ঘোষণায় সরকারি ব্যয় কমানোটা জরুরি হয়ে পড়েছে। ম্যাক্রোঁ বিশ্বাস করেন, আগামী পাঁচ বছরে ৬০ হাজার কোটি ইউরো ব্যয় কমাতে সক্ষম হবেন। তবে এটা খুব একটা বড় সংখ্যাও নয়, আরেক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ফ্রাঁসোয়া ফেলন এক লাখ কোটি ইউরো
খরচ কমানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন।

ব্যয় কমানোর পরিকল্পনার মধ্যে একটা বিষয় জানা সম্ভব হয়েছে। যা হলো, ১ লাখ ২০ হাজার সরকারি কর্মীর অবসরে যাওয়ার পর সে পদে আর নতুন কাউকে নিয়োগ দেয়া হবে না। তিনি বেকারত্ব সুবিধায় এখন যারা আওতাভুক্ত নন তাদেরও সে আওতায় আনবেন; যাদের মধ্যে স্বনির্ভর, উদ্যোক্তা এবং কৃষকরাও থাকবেন। অন্যান্য দেশে যেখানে পেনশন পরিশোধ করার আগে কর্মীদের কর্মজীবন যতটা সম্ভব দীর্ঘ করার চেষ্টা করে, ফ্রান্স সেখানে ৬২ বছর বয়সে অবসর গ্রহণের নিয়ম বহাল রেখেছে।

যাই হোক, নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট পুরো পেনশন ব্যবস্থাকেও ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করেছেন, যেখানে কর্মীদের পেনশন যতটা সম্ভব তাদের পরিশোধিত অর্থের কাছাকাছিই রাখা হবে। সূত্র: বিবিসি

সোনালীনিউজ/এন

Wordbridge School
Link copied!