• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পকিস্তানের জন্ম থেকেই বাঙালির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালাতে থাকে


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৭, ১১:০৪ এএম
পকিস্তানের জন্ম থেকেই বাঙালির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালাতে থাকে

ঢাকা : পাকিস্তান সৃষ্টির পরপরই দেশের অধিকাংশ মানুষের মাতৃভাষাকে উপেক্ষা করে পোস্টকার্ড, মানি অর্ডার ফর্ম, রেলের টিকিট ও টাকায় ইংরেজি এবং উর্দুর ব্যবহার শুরু করা হয়। সেইসঙ্গে কেন্দ্রীয় পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সিলেবাস থেকে বাংলাকে বাদ দেয়া হয়। এতে বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলনকারীরা শঙ্কিত হয়ে পড়েন। 

তারা পশ্চিম পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্র আঁচ করতে পারেন। পাকিস্তানিরা এ কাজে ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় বাঙালি শিক্ষামন্ত্রীকে। তিনি বাঙালি হলেও উর্দুর পক্ষ নেন। এরপর ভাষা সংগ্রামীরা বাংলার পক্ষে গণ-আন্দোলন সৃষ্টির জন্য বিলম্ব না করে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নুরল হক ভুঁইয়া এই পরিষদের আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। এরপর রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দ পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাকে বাংলার পক্ষ গ্রহণ করার আহ্বান জানান। কিন্তু তার অসৌজন্যমূলক ব্যবহার নেতৃবৃন্দকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। এরপরই নেতৃবৃন্দ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবির পক্ষে স্মারকলিপি পেশের জন্য কয়েক হাজার স্বাক্ষর সংগ্রহ করেন। স্মারকলিপিটি প্রস্তুতের পর পূর্ব পাকিস্তান সরকারের কাছে পেশ করা হয়। বিভিন্ন সংবাদপত্রে স্মারকলিপি পেশের সংবাদটি প্রকাশিত হয়। 
স্মারকলিপিতে বাংলাকে ভারতবর্ষের অন্যতম সম্পদশালী এবং বিশ্বের অন্যতম প্রধান ভাষা হিসেবে উল্লেখ করে পশ্চিমবঙ্গ এবং পূর্ব পাকিস্তান উভয় সরকারকে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদাদানের আহ্বান জানানো হয়। বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তান সরকারকে দ্রুত বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার ও শিক্ষার বাহন হিসেবে গ্রহণ করার দাবি জানানো হয়। পূর্ব পাকিস্তান ও কেন্দ্রীয় পাকিস্তান সরকারের বাংলাভাষী মন্ত্রীরাও স্মারকলিপির প্রস্তাব সমর্থন করেন। কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষক, সাংবাদিক, শিল্পী, রাজনীতিক, আইনজীবী, আলেম-ওলেমা, ডাক্তার, ছাত্রনেতাসহ সমাজের প্রায় সব শ্রেণীর মানুষ এই স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেন। এত কিছুর পরও পশ্চিম পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। এর প্রমাণ পাওয়া যায় ’৪৭-এর নভেম্বরে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের একটি সার্কুলার থেকে। 

কমিশনের সচিব স্বাক্ষরিত ওই সার্কুলারে পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত ২১টি বিষয়ের মধ্যে নয়টি ছিল ভাষা। এসব ভাষার মধ্যে উর্দু, হিন্দি, ইংরেজি, জার্মান, ফ্রেঞ্চসহ মৃত ভাষা ল্যাটিন ও সংস্কৃতও স্থান পায়। কিন্তু পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মুখের ভাষাকে বাদ দেয়া হয়। বাঙালিদের হেয় করার জন্য উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে এটা করা হয়। তখন পাকিস্তান সরকারে যোগ দেয়া আমলাদের এক বিরাট অংশ ছিল ভারত প্রত্যাগত। তারা ছিল একদিকে সাম্প্রদায়িক, অপরদিকে বাংলাবিদ্বেষী। তারা ওই সার্কুলারকে ‘টেস্ট কেস’ হিসেবে গ্রহণ করেছিল। কিন্তু এর বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু হলে তারা ভুল স্বীকার করে আরেকটি সার্কুলার জারি করে। 

এতে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্যরা আরো ক্ষুব্ধ হন। পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা বাদ পড়াকে তারা ভুল বলতে নারাজ ছিলেন। এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোরালো দাবি জানানো হয়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!