• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পরমাণু শক্তির কারণে পাক-ভারত যুদ্ধে জড়ানোর সম্ভাবনা কম


আন্তর্জাতিক ডেস্ক সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৬, ০৯:১৬ পিএম
পরমাণু শক্তির কারণে পাক-ভারত যুদ্ধে জড়ানোর সম্ভাবনা কম

ভারত-পাকিস্তান নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম

গেল আগস্টে বেলুচিস্তান আর গত সপ্তাহে কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশের মধ্যে প্রচণ্ড উত্তেজনা বিরাজ করছে। দুই দেশই একে অপরকে মোকাবিলা করতে রণপ্রস্তুতি নেয়ার পাশাপাশি বিশ্বনেতাদের নিজেদের পক্ষে টানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে রাশিয়া ও চীন পাকিস্তানের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যা দিয়েছে আর ফ্রান্স ভারতকে পরমাণু বহন করার ক্ষমতাসম্পন্ন যুদ্ধজাহাজ সরবরাহ করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত-পাকিস্তান দু’দেশই পরমাণু ক্ষমতায় শক্তিশালী। এই বিবেচনায় শেষ পর্যন্ত দুই দেশ হয়তো সরাসরি যুদ্ধে জড়াবে না।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা এপির মস্কো অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার রাশিয়ার একদল সেনা (70 mountain infantry troops)  যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশ নিতে পাকিস্তানে পৌঁছেছে। তারা সামরিক শক্তির উন্নয়ন এবং সন্ত্রাসবিরোধী কাজ করবে। অন্যদিকে গত বৃহস্পতিবার রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলে ভারত-রাশিয়া যৌথ সামরিক মহড়া শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে আলাদাভাবে সামরিক সম্পর্ক বজায় রাখছে রাশিয়া, যাতে মস্কো দুই পক্ষ থেকেই নিজেদের গোলায় ফসল তুলতে সুবিধা করতে পারে।

সংবাদ সংস্থা এপির নয়াদিল্লি অফিস শুক্রবার জানায়, পাকিস্তানের সঙ্গে কাশ্মীর নিয়ে বর্তমান সময়ের উত্তেজনায় সামরিক শক্তি প্রদর্শনের চেয়ে কূটনৈতিক চ্যানেলে দেশটিকে মোকাবিলা করতে বেশি আগ্রহী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যদিও তিনি এরই মধ্যে যথাযথ রণপ্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। নরেন্দ্র মোদি তার সরকারের সামরিকসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ৪৮ ঘণ্টায় একাধিকবার বৈঠক করেন।

যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের সাবেক কূটনীতিক ললিত মানসিং বলেন, পাকিস্তানকে মোকাবিলা করতে মোদি সবগুলো পথই খোলা রেখেছেন, তবে প্রাধান্য দিচ্ছেন কূটনীতিক চ্যানেলকে। এই পর্যবেক্ষণ থেকেই বোঝা যায় যে নিজের দেশকে রক্ষা করতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী কতটা বিচক্ষণ। এরই মধ্যে মোদির কূটনৈতিক চালে পাকিস্তান বিশ্ব থেকে আলাদা বা একঘরে হয়ে গেছে। আর যুক্তরাষ্ট্রও পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে অভিহিত করেছে। তিনি আরো বলেন, কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে যুদ্ধ হোক এটা কেউই চায় না। বিশ্বনেতাদের নিয়ে এই বিষয়ে দুই দেশকে আলোচনায় বসেই সমাধানে আসতে হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের এখন যে সম্পর্ক চলছে, তা আমলে নিলে অনেক কিছুই ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু আমরা কখনো চাই না যে যুদ্ধ শুরু হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদল ভারতে আসুক।

অন্যদিকে, চীন এরই মধ্যে পাকিস্তানের পাশে রয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছে। তবে নরেন্দ্র মোদি এই দুই শক্তিকে একত্রে সমারিক বা কূটনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে চাচ্ছেন না। কেননা ভারত-পাকিস্তান-চীন এই তিন শক্তিরই রয়েছে পরমাণু ক্ষমতা। আর চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত বিরোধ বহু আগের। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে কত প্রাণ বলি হয়েছে আর রক্ত ঝরেছে তার কোনো হিসাব নেই। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলছে, ভারত-পাকিস্তান দুই দেশই পরমাণু শক্তিধর হওয়ায় একে অপরকে আক্রমণ করা থেকে বিরত রয়েছে। যে সুযোগে এই অঞ্চলের ১৪০ কোটি মানুষ এখনো অক্ষত রয়েছে।

কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক গুল মোহাম্মদ ওয়ানীর মতে, কাশ্মীরের ভূ-প্রাকৃতিক গঠনের কারণে এই অঞ্চলে সেনা আক্রমণ করে বেশি সুবিধা আদায় করতে পারবে না নয়াদিল্লি। কেননা চীন পাকিস্তানকে সরাসরি সমর্থন করছে। প্রতিদিন কাশ্মীরে ভারতের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন-প্রতিবাদ হচ্ছে তা নয়াদিল্লির প্রতি সামরিক শক্তি প্রদর্শনে নেতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে।

ভয়েস আমেরিকা জানাচ্ছে, পাকিস্তান-ভারত বর্তমান সময়ের উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে ১৯৬০ সালে করা পানিচুক্তিতে প্রভাব পড়তে পারে। ভারত যদি ওই চুক্তি বাতিল করে, তবে দুই দেশের মধ্যে পানি নিয়ে যুদ্ধ শুরু হতে পারে। কেননা হিমালয়ের তিনটি নদী ভারতের ওপর থেকে নেমে পশ্চিম ও পূর্ব দিকে প্রসারিত হয়েছে। পশ্চিম দিকে যাওয়া নদীর পানি পাকিস্তান ১৯৬০ সালের চুক্তির বলে ব্যবহার করছে, যা পাকিস্তানের সেচ ও খাবার পানির অন্যতম উৎস। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত এই চুক্তি বাতিলের ইঙ্গিত দিয়েছে। ভারতের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ বলেন, যেকোনো চুক্তি কার্যকর থাকার পেছনে দুই পক্ষেরই সমানভাবে সহযোগিতা করা এবং চুক্তিটি টিকিয়ে রাখতে যথাযথ আগ্রহের প্রয়োজন রয়েছে। একপাক্ষিকভাবে কখনোই কোনো চুক্তি টিকে থাকতে পারে না।

এদিকে, চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াঙের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের মধ্যে জাতিসংঘ সম্মেলনের ফাঁকে গত বুধবার একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের পর চীন জানায়, দেশটি পাকিস্তানকে সমর্থন করে। বর্তমান সময়ে যে উত্তেজনা বিরাজ করছে, তা ঠাণ্ডা করতে এবং অন্য দেশগুলোকে পাকিস্তানের পাশে থাকতে চীন সবগুলো বৈশ্বিক ফোরামে আহ্বান জানাবে।

সামরিকসংক্রান্ত গণমাধ্যম ‘দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট’ থেকে জানা যায়, ফ্রান্স ভারতকে শক্তিশালী ৩৬ ডেসাল্ট রাফেল ফাইটার যুদ্ধবিমান দিচ্ছে। এই যুদ্ধবিমানগুলো ভারতকে পারমাণবিক বোমা বহন করতে সহায়তা করবে। এ উপলক্ষে চলতি সপ্তাহে ফ্রান্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ভারত সফরের কথা রয়েছে।

সংবাদমাধ্যমটি আরো জানাচ্ছে, এর আগে ভারতের বিমান থেকে পরমাণু বোমা ছোড়ার মতো ক্ষমতাসম্পন্ন যুদ্ধবিমান ছিল না। কিন্তু সম্প্রতি তারা ফ্রান্সের সহায়তায় তা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। পরমাণু ক্ষমতা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ভারত-পাকিস্তান সব সময়ই সমান পাল্লা দিয়ে নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে। ১৯৯৮ সালে ভারত দুই দিনে পাঁচটি পরমাণু বোমার পরীক্ষা চালানোর এক সপ্তাহের মাথায় পাকিস্তানও পাঁচটি পরামাণু বোমার পরীক্ষা চালায়।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর

Link copied!