• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পরিকল্পনা বিএনপি নেতার, কার্যকরে ছাত্রলীগ-যুবলীগ


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ৩১, ২০১৭, ০১:৪০ পিএম
পরিকল্পনা বিএনপি নেতার, কার্যকরে ছাত্রলীগ-যুবলীগ

ঢাকা : খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনা নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে দোষারোপ করছে। পাশাপাশি এই হামলা নিয়ে কথা বলেছেন ফেনীর আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল হাজারী।

তিনি দাবি করেছেন, খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ জড়িত। এই হামলার ঘটনা নিয়ে বিএনপি ইতিমধ্যে বলেছে, ফেনীতে গাড়িবহরে হামলা করেছে ছাত্রলীগ-যুবলীগ। আর আওয়ামী লীগ বলেছে, গণমাধ্যমে প্রচার পেতে বিএনপি নিজেই এই হামলা করিয়েছে। এতে যুবদল-ছাত্রদল জড়িত। তবে দুই দলই বলছে, এই হামলা পরিকল্পিত।

এছাড়া খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনা নিয়ে একটি অডিও ক্লিপ নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ওই অডিও ক্লিপের কথোপকথনের বলছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির একজন বড় নেতা এবং ফেনীর এক দলীয় কর্মী হামলার সঙ্গে জড়িত। যদিও অডিওটির সত্যতা প্রমাণ করা যায়নি। বিএনপির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়া হয়নি।

পাল্টাপাল্টি এসব দোষারোপের মধ্যেই গণমাধ্যমে একটি ছবি প্রচারিত হয়েছে, যাতে এক ব্যক্তিকে হামলা করতে দেখা যায়। স্থানীয় বিএনপির নেতারা বলছেন, এই হামলাকারী হলেন ফেনী সদর উপজেলার শর্শদী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওসমান গণি ওরফে রিয়েল। তবে রবিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় আওয়ামী লীগের এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, গণমাধ্যমে প্রচারিত ওই ছবি এডিট (সম্পাদনা) করা।

এদিকে, গতকাল বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেছেন, লাখো মানুষের ঢল দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়েছে। ওই হামলার প্রতিবাদে গতকাল সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে রিজভী এ অভিযোগ করেন।

আর শনিবারের হামলার পর দেয়া এক বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, হামলাকারীদের ছবি এডিট করে গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হচ্ছে। এটিকে ‘নির্লজ্জ মিথ্যাচার’ বলে আখ্যা দেন রিজভী। জনতার ঢল, এই ঢলটা একেবারেই আওয়ামী লীগ পছন্দ করেনি। কারণ ওরা তো ভোটারবিহীন সরকার। বেগম খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য জনগণ আসবে কেন? লক্ষ মানুষের ঢল হবে কেন? এটা প্রতিহিংসার জ্বালা, বলেন বিএনপির এই মুখপাত্র।
রিজভী আরো বলেন, এটা হিংসার জ্বালা। তাই ছাত্রলীগ, যুবলীগকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে সকাল থেকে পাদুয়ার বাজার, চান্দিনা, কুমিল্লায় লাঠিসোটা নিয়ে কারা ছিল? ওবায়দুল কাদের, আপনার লেলিয়ে দেয়া যুবলীগ-ছাত্রলীগ, তারাই এই হামলা চালিয়েছে।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ অভিযোগ করে বলেছেন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাৎ হোসেনের সঙ্গে ফেনীর বিএনপিকর্মী মোবারক হোসেনের কথোপকথনের অডিও ক্লিপই প্রমাণ করে, সাংবাদিকদের গাড়িতে হামলা চালিয়েছে বিএনপি। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে হানিফ এই অভিযোগ করেন।

‘এনাম-আনার জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংগঠন আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে একটি অডিও ক্লিপ তুলে ধরেন হানিফ। এ সময় তিনি বলেন, উনারা নিজেরা গাড়িবহরে হামলা চালিয়ে আমাদের ওপর দায় চাপাতে চাচ্ছে। সাংবাদিকদের গাড়িতে যারা হামলা চালিয়েছে, তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। কারা হামলা করেছে, তা বের করে সকলের সামনে আনা হবে। তিনি বলেন, এটা ছিল তাদের পরিকল্পিত হামলা। এ হামলার নিন্দা জানাই। প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাই, কারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বের করে এনে ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচন করা হোক।

অপরদিকে, ফেনীর বহুল আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল হাজারী দাবি করেছেন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ জড়িত। গতকাল নিজের সম্পাদিত দৈনিক পত্রিকা হাজারিকা প্রতিদিনে ‘খালেদার উপর হামলাটি কেন’ শীর্ষক এক মন্তব্য কলামে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত লেখেন।

সোনালীনিউজ-এর পাঠকদের জন্যে হুবহু জয়নাল হাজারীর লেখাটি তুলে ধরা হলো-

“যখন যেখানে যে ঘটনাই ঘটুক তার একটা কারণ থাকে। অকারণে কোন কিছু স্বাভাবিকভাবে ঘটে না। শনিবারে খালেদা জিয়া রোহিঙ্গাদের দেখতে ঢাকা থেকে কক্সবাজার রওনা হয়েছিলেন। পথিমধ্যে তার গাড়িবহরে হামলা হয়েছে এতে বেশকিছু সাংবাদিক মারাত্মক আহত হয়েছে। এই হামলায় মূলত সাংবাদিকদের কেন টার্গেট করা হলো এটা পরিষ্কার নয়। তিনি ফেনী সার্কেট হাউজে বিশ্রাম নিবেন এবং সেখানে দুপুরের খাবার খাবেন এমনটাই প্রশাসনকে জানানো হয়েছিল।

খালেদার জেলা নেতাকর্মীরা সেখানে ব্যাপকভাবে জড়ো হওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিল কিন্তু অত্যান্ত ন্যাককারজনকভাবে সার্কিট হাউজে কাউকে আসতে দেয়া হয়নি এবং বাধা দিতে গিয়ে বিএনপির বেশ কিছু নেতাকর্মী আহত হয়েছে। খালেদা জিয়া রোহিঙ্গা শরনার্থীদের অবস্থা সরেজমিনে দেখবেন এটাই ছিল তার উদ্দেশ্য। এটি একটি মহৎ উদ্দেশ্য। জননেত্রী শেখ হাসিনাও তাদের দেখে এসেছেন তাহলে এই শুভ কাজে কেউ বাধা দিতে পারে কিনা এটি অবশ্যই একটি বড় প্রশ্ন? যতই ওবায়দুল কাদের বলুক, ওনারা ছবি তুলতে যাচ্ছিলেন এবং এটা আভ্যন্তরিন কোন্দল। এইসব কথা সচেতন জনগণকে খাওয়ানো যাবে না।
সুষমা স্বরাজ এসে যখন পরিষ্কার বলে গেলেন আমরা সকলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চাই, ঠিক সেই মূহূর্তে এই ধরনের উস্কানিমূলক তৎপরতা গণতন্ত্রের উপর হামলা এটা কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং একটি নয় একাধিক জায়গায় হামলা হয়েছে। এই ঘটনা খালেদাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবার জন্য একটি অজুহাত হিসেবে কাজ করবে। কেউ কেউ বলছেন, ঘটনা যেখানে যাই ঘটুক খালেদাকে ভোট করতেই হবে। বিষয়টি বোধ হয় পুরোপুরি ঠিক সেরকম নয়।

খালেদার উপর হামলাটি কেন? একদিকে খালেদাকে ভোটে আসতে বলবেন অন্যদিকে তাকে পিটাতে থাকবেন সেটি তো হতে পারে না। আসলে আসল কথা একটাই ভোট করে যারা কোন দিনই জিততে পারবে না ওই সমস্ত লোকগুলি খালেদা জিয়া ভোটে আসুক তারা মোটেই চায় না। সেই কারণে অবশ্যই বলা যায় ফেনীর ঘটনাটি খালেদা জিয়াকে ভোট থেকে দূরে রাখার একটি অপতৎপরতা।

বর্তমান সরকারের তৎপরতা থেকে পরিস্কার বোঝা যায় সরকার সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভোট করতে চায়। ফলে শেখ হাসিনা মোটেই ফেনীর ঘটনাকে সুদৃষ্টিতে দেখবেন না। ফেনীর বর্তমান এমপিরা কেহই ভোটে এমপি হয়নি এবং তারা জানে ভোট হলে তারা এমপি হবে না। সেই কারণেই কেন্দ্রের ইঙ্গিত ছাড়াই খালেদার উপর তারা হামলা করেছে।

বারবার একই গোষ্ঠী বিনা ভোটে এমপি হবে এমনটি ফেনীবাসী কেবল চেয়ে চেয়ে দেখবে এমনটি হতে পারে না। কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছে জয়নাল হাজারীর আমলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে ২০০০ সালে হামলা হয়েছিল। এটি একেবারেই সত্য নয়। তবে ওই সময় একটি ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল কিন্তু কোন ছোট খাট ঘটনাই ঘটে নাই। সে সময় জয়নাল হাজারী বলেছিল, ভাল-খারাপ যাই হোক এ ব্যাপারে নেত্রী সরাসরি নির্দেশ দেয়া ছাড়া আমি কিছুই করব না।

তা ছাড়া ঢাকা থেকে ফেনী পর্যন্ত এলাকায় কেউ কিছু করবে না আমি কেন আগবাড়িয়ে দায়িত্ব নিব। তাই ইতিহাস বলে সেদিন খালেদার গাড়িবহরে কোন হামলা হয়নি। আর জয়নাল হাজারী প্রতিবারই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ভোট করেই নির্বাচিত হয়েছেন। পরবর্তী সময়ে এবারের ফেনীর ঘটনা কোনদিকে গড়াবে তা এখনি বলার সময় না এলেও এতে দেশে বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি খুন্ন হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

এদিকে বার্নিকাট বলেছেন বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার সম্ভবনা প্রবল। আসলে বলা যায় সহিংসতা শুরুই হয়ে গেছে। ফুটেজ থেকে দেখা গেছে, কারা হামলা করেছে। ফলে বিএনপির অভ্যন্তরিন কোন্দল এই ধরনের হাস্যকর কথা না বলাই ভাল। যতই বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার চেষ্টা হোক এবার তা কিছুতেই সফল হবে না এটা নিশ্চিত। কারণ গতবার বিনা ভোটে সরকার গঠন করে সরকারকে অনেক খেসারত দিতে হয়েছে। এবার সরকার সেদিকে আর পা দিচ্ছে না। আ.লীগের ভোটে জেতার মত সকল কিছু দৃশ্যমান।

সুতরাং বিনা ভোটের এমপি দিয়ে সরকার গঠনের প্রয়োজন নেই। খালেদার শত দোষ-ত্রুটি থাকতেই পারে কিন্তু রোহিঙ্গাদের দেখতে যাওয়া তো কোন দোষের ব্যাপার নয়। ফলে তার উপর হামলাটি কোন মহলই ভাল চোখে দেখছে না এবং এই ঘটনায় সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে সেই কারণে এই ঘৃন্য ঘটনাটি যারা ঘটিয়েছে সরকারে উচিত হবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তাতে সরকারের সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে এবং বিরোধী দলে আস্থা ফিরে আসবে।”

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!