• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পলাতক ৬ জঙ্গির ‌‌‌‌‌অপেক্ষায় আটকে আছে চার্জশিট


বিশেষ প্রতিনিধি ডিসেম্বর ২১, ২০১৬, ১০:৫৫ এএম
পলাতক ৬ জঙ্গির ‌‌‌‌‌অপেক্ষায় আটকে আছে চার্জশিট

ঢাকা: আজ থেকে ঠিক তিন বছর আগে রাজধানীর গোপীবাগে কথিত পীর ও তার ছেলেসহ ছয়জনকে জবাই করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় এখনো চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দিতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা ডিবি পুলিশ। 

চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত মাত্র দুজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে এক আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত জেএমবির ৬ জঙ্গির নাম উঠে আসে। 

সেই পলাতক জঙ্গিদের কারণেই আদালতে চার্জশিট দিতে পারছে না তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। গত তিন বছরে রাজধানীতে একের পর এক চাঞ্চল্যকর ঘটনার পর সিক্স মার্ডারের মতো ঘটনার তদন্তকাজ অনেকটাই থমকে আছে।

তদন্ত সংশিষ্ট সূত্র জানায়, ধর্মীয় মতাদর্শগত বিরোধের কারণেই কথিত পীর লুৎফর রহমান ফারুক ও তার ছেলেসহ ছয়জনকে জবাই করে হত্যা করে জঙ্গিরা। নিহত লুৎফর নিজস্ব একটি ধর্মীয় মতাদর্শ প্রচার করতেন, যা ইসলামি শরিয়তের পরিপন্থি বলে মনে করত জঙ্গিদের একটি গ্রুপ। তারাই ঠান্ডা মাথায় এ হত্যাকাণ্ডে ঘটিয়েছে। 

পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাস্থলে খুনের কোনো আলামত রেখে যায়নি খুনিরা। তাই তিন বছরেও চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারছে না তারা। তবে গ্রেফতার এক আসামির জবানবন্দি অনুযায়ী, অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তাদের গ্রেফতার করতে পারলে এ মামলার চার্জশিট দেওয়া সম্ভব হবে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক (পূর্ব) কাজী গোলাম কবীর বলেন, এ মামলায় তরিকুল ইসলাম ও আবদুল গাফফার নামে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে তরিকুল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তরিকুলের জবানবন্দি অনুযায়ী, এ হত্যাকাণ্ডে আটজন অংশ নেন। এদের গ্রেফতার করতে পারলেই মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে। 

তিনি আরো বলেন, নিহত লুৎফর রহমানের বাসায় আসামিদের আগেও যাওয়া-আসা ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। লুৎফর রহমানসহ সিক্স মার্ডারের ঘটনায় জড়িত সবাই নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সক্রিয় সদস্য। তরিকুলের স্বীকারোক্তিতে যাদের নাম এসেছে, তারা যে এ হত্যাযজ্ঞে জড়িত তার সত্যতা খুঁজে বের করারও চেষ্টা চলছে।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর গোপীবাগের আর কে মিশন রোডে ৬৪/৬ নম্বর আয়নাবাড়ির দোতলায় লুৎফর রহমান ফারুক (৬০), তার ছেলে মনির হোসেন (৩০), অনুসারী সাইদুর রহমান (৩০), মজিবর রহমান (৩২), মোহাম্মদ রাসেল (৩০) ও বাসার তত্ত্বাবধায়ক মঞ্জুর আলম ওরফে মঞ্জুকে জবাই করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। 

হত্যাকাণ্ডের পরদিন অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনকে আসামি করে ওয়ারী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন লুৎফর রহমানের ছোট ছেলে আবদুলাহ আল ফারুক। ওই দিনই থানা পুলিশের কাছ থেকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব নেয় ডিবি। ঘটনার প্রায় দুই বছর পর ২০১৫ সালের ২৭ নভেম্বর হামলার দায় স্বীকার করেন জেএমবির সদস্য তরিকুল ইসলাম। জেএমবির শীর্ষ নেতারাই এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন বলে তরিকুল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। 

জানা গেছে, ১৯৯৯ সালের দিকে লুৎফর রহমান ফারুক প্রথম গ্রামছাড়া হয়ে ঢাকায় এসে আধ্যাত্মিক জগতের পীর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। স্ত্রীসহ হজ করে আসার পর শোনা যায়, ফারুক স্বপ্নে ইমাম মাহাদীর সেনাপতি নিযুক্ত হন। সেই থেকে তিনি নিজেকে ইমাম মাহাদীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে পরিচয় দিতেন। একপর্যায়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কিছু ভক্তও জুটে যায় তার। এভাবে চলছিল তার ‘পীরগিরি’। 

ঘটনায় বেঁচে যাওয়া স্বজনদের বরাত দিয়ে ওই সময় পুলিশ জানিয়েছিল, ঘটনার দিন বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে আট যুবক দৌড়ে ওই ভবনে প্রবেশ করেন। যুবকরা দোতলায় গিয়ে জানান, পুলিশের ধাওয়া খেয়ে তারা সেখানে এসেছেন। তারা সেখানে আশ্রয় চান। হত্যাকাণ্ডের পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ নাটক সাজায় খুনিরা। 

কিছুক্ষণ পর বাসার ড্রয়িংরুমে তারা একসঙ্গে মাগরিবের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে নাশতাও সারেন। এরপরই আকস্মিকভাবে ওই আট যুবক ধারালো অস্ত্র বের করে সবাইকে জিম্মি করে ফেলেন। আড়াই বছরের শিশুসহ পাঁচজনকে একটি রুমে আটকে রাখা হয়। আর লুৎফর রহমান ও তার ছেলে ফারুককে অন্য কক্ষে নিয়ে যান। বাকি চার পুরুষকে পৃথক কক্ষে আটকে রাখেন। এরপর তারা একে একে ছয়জনকে গলা কেটে হত্যা করে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যান।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!