• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানবিরোধীদের নিয়ে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের চিন্তা ভারতের


কূটনৈতিক রিপোর্ট সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৬, ০২:২৫ পিএম
পাকিস্তানবিরোধীদের নিয়ে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের চিন্তা ভারতের

পাকিস্তানে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হচ্ছে না। ভারত চাইছে সার্কের পাকিস্তানবিরোধী রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন করতে। যে সম্মেলনে পাকিস্তানের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিশ্বে উপস্থাপন করা হবে। ঢাকা এরই মধ্যে নয়াদিল্লির পাশে রয়েছে বলে বার্তা দিয়েছে। তবে অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। এ ছাড়া পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে বাকি রাষ্ট্রগুলো নিয়ে সার্কের আদলে একটি সম্মেলন আয়োজনেরও চিন্তা চলছে বলে কূটনৈতিক সূত্রে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

কূটনীতিক সূত্রগুলো বলছে, সার্কের অন্যতম প্রধান সদস্য রাষ্ট্র ভারতের অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আসছে নভেম্বরে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে এই সম্মেলন হওয়ার কথা। সম্প্রতি কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে টানাপড়েন তীব্র হওয়ায় এই সম্মেলনে যোগ না দেয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে ভারত। অন্যদিকে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপড়েন চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশও পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যাওয়ার প্রশ্নে রয়েছে দ্বিধান্বিত অবস্থানে। এ ছাড়া জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ প্রশ্নে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক খারাপ হওয়ার ধারাবাহিকতায় আফগানিস্তানও সার্ক প্রশ্নে পাকিস্তানকে এড়িয়ে চলার পথ নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত চাইছে সার্কের পাকিস্তানবিরোধী রাষ্ট্রগুলো নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন করতে, যেখানে পাকিস্তানের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিশ্বে উপস্থাপন করা হবে। এ ছাড়া পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে বাকি রাষ্ট্রগুলো নিয়ে সার্কের আদলে একটি সম্মেলন আয়োজনেরও চিন্তা চলছে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে- বাংলাদেশ, ভারত এবং আফগানিস্তানে বিভিন্ন সময়ে পাকিস্তান সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগের পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। সর্বশেষ যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল নিয়ে পাকিস্তানের অযাচিত মন্তব্য, কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব ও সর্বশেষ হামলা এবং বেলুচিস্তান নিয়ে আফগানিস্তানে পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব এখন স্পষ্ট। এই তিনটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তান হস্তক্ষেপ করে এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। পাকিস্তান আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাধা দিচ্ছে এবং দেশটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে, বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশ, ভারত এবং আফগানিস্তান এই তথ্য তুলে ধরতে সম্মত হয়েছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দক্ষিণ এশিয়ার এই তিনটি দেশ এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক একটি সম্মেলন অনুষ্ঠানেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে। 

এদিকে গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বার্তা পাঠিয়ে জানান, ভারতের এই দুঃসময়ে পাশে আছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া গত আগস্টে ভারত সফরে গিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, পাকিস্তান বেলুচিস্তান নিয়ে অবিচার করছে। এ বিষয়ে পদেক্ষপ নেয়া জরুরি।

ঢাকার কূটনীতিকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় নিয়ে একাধিকবার বিরূপ মন্তব্য করায় পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না বাংলাদেশের। যার ফলে গত আগস্টে ইসলামাবাদে সার্কের স্বরাষ্ট্র ও অর্থমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায় থেকে কেউ অংশ নেয়নি। একই ধারাবাহিকতায় চলতি সেপ্টেম্বরে দুই দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠক বাতিল হয়। সর্বশেষ কাশ্মীর ঘটনাকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে ঢাকা নয়াদিল্লিকে বার্তা পাঠিয়ে পাশে থাকার কথা জানিয়েছে। এসব ঘটনা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে বাংলাদেশ সার্ক সম্মেলনে যোগ দিতে পাকিস্তান যাচ্ছে না।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও কূটনীতিক মহিউদ্দিন আহমদ এ প্রসঙ্গে বলেন, সম্প্রতি এ অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে পাকিস্তানের যে সম্পর্ক দাঁড়িয়েছে, তাতে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠানের নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না। তবে পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান ছাড়াও সার্কের আরো সদস্য রয়েছে। বাকি সদস্যরা কী চায় সেটাও দেখার বিষয়। সার্ক নিয়ে যে জট পাকছে তা এখনো পরিষ্কার নয়। সময়ই বলে দেবে সামনে কী হবে।

ঢাকার কূটনীতিকরা আরো বলছেন, আগামী মাসের মধ্যভাগে ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সফরে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে সার্কের এই বিষয়টি আরো খোলাসা হবে। এরই মধ্যে ঢাকা নয়াদিল্লিকে আস্থার কথা জানিয়েছে। এই আস্থার সম্পর্ককে ভর করে দুই দেশ কি সিদ্ধান্ত নেয় তা সামনের মাসে আরো পরিষ্কার হবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!