• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
দিয়াবাড়ি খালে অস্ত্র

পাজেরো গাড়িতে ‌‘ঘুরছে’ তদন্ত!


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ৩০, ২০১৭, ০৫:৩৫ পিএম
পাজেরো গাড়িতে ‌‘ঘুরছে’ তদন্ত!

দিয়াবাড়ি খাল থেকে উদ্ধার অস্ত্র (ফাইল ফটো)

ঢাকা: সাড়ে ৭ মাস আগে রাজধানীর তুরাগের দিয়াবাড়ি খাল থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এই দীর্ঘ সময়ে ন্যূনতম কোনো ‘সূত্র’ খুঁজে পায়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

কারা, কী উদ্দেশ্যে, কোথা থেকে এসব অস্ত্র-গোলাবারুদ এনেছিল সেসব তথ্য তালাশ করতেই পেরিয়ে যাচ্ছে সময়। এত বড় অস্ত্র চোরাচালানে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার তো দূরের কথা, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সন্দেহভাজন হিসেবে কাউকে আটকও করতে পারেনি পুলিশ।

ঘটনার সাড়ে ৭ মাস কেটে গেলেও তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট (সিটিইউ) কার্যত এখনো অন্ধকারে। অস্ত্র ও গোলাবারুদগুলো দিয়াবাড়ি খালে ফেলতে একটি পাজেরো গাড়ি ব্যবহৃত হয়। ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা সেই নম্বরপ্লেটবিহীন পাজেরো গাড়িটিরও হদিস মিলছে না।

গাড়িটি শনাক্ত না হওয়ায় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদের উৎসের সন্ধান পেতে হিমশিম খাচ্ছে তদন্তকারী সংস্থা। তদন্তের কোনো অগ্রগতি নেই। তবু হাল ছাড়েনি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, ঘটনার পর ওই এলাকার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর কাছ থেকে তথ্য নেয় পুলিশ। দিয়াবাড়ির খালের আশপাশের বেশকিছু বাসার সিসি ক্যামেরার ফুটেজও সংগ্রহ করে গোয়েন্দারা।

ফুটেজে দেখা যায়, একটি কালো পাজেরো গাড়ি থেকে অস্ত্র-গোলাবারুদ ভরা ব্যাগগুলো নামানো হয়। পরে সেই ব্যাগগুলো খালে ফেলে দেয়া হয়। অস্ত্রের ব্যাগগুলো ফেলে খুব দ্রুত সেখান থেকে চলে যায় পাজারো গাড়িটি। ওই গাড়িটির কোনো নম্বরপ্লেট ছিল না। এই গাড়িটির ব্যাপারে জানতে বিআরটিএ এবং বিভিন্ন গাড়ি বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেও সেটির কোনো হদিস মেলেনি। গাড়িটি চিহ্নিত করতে না পারায় এসব অস্ত্রের উৎসের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধারের ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্ব নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তবে অস্ত্র ও গোলাবারুদ খালে ফেলতে ব্যবহৃত পাজেরো গাড়িটি শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকেন এমন কয়েকজন ব্যক্তির বক্তব্য নিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। পাজারো গাড়িটি খুঁজে পেলে এ মামলার রহস্য উন্মোচন হবে বলেও মনে করেন পুলিশের এই দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।

গত বছরের ১৮ জুন তুরাগের মিরপুর-আশুলিয়া বেরিবাঁধ-সংলগ্ন উত্তরার দিয়াবাড়ি পঞ্চবটির বৌদ্ধমন্দিরের পেছনের খাল থেকে ৯৫টি ৭.৬২ পিস্তল, দুটি দেশীয় পিস্তল, ১৯২টি ৭.৬২ ম্যাগাজিন, ১০টি গোক পিস্তলের ম্যাগাজিন, ২৬৩টি এসএমজির ম্যাগাজিন, ১০টি বেয়নেট, ১০৪টি ছোট সিলভার রঙের গুলি তৈরির বাক্স, ৮৪০ রাউন্ড ৯ এমএম পিস্তলের গুলি, ২১৭ রাউন্ড চায়না ৭.৬২ পিস্তলের গুলি ও ১৮০টি ক্লিনিং রড জব্দ করে পুলিশ। পরদিন ১৯ জুন এসএমজির ৩২টি ম্যাগাজিন, ক্লিনিং রড ৮টি, বন্দুকের ৩২টি ম্যাগাজিন ও একটি গান ক্লিনার জব্দ করা হয়।

এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তুরাগ থানায় দুটি জিডি করে। দুটি জিডি মামলায় রূপান্তর হলে তদন্তের জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তর বিভাগে পাঠানো হয়। অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধারের উৎস খুঁজে বের করতে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) ছানোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে গঠন হয় তদন্ত কমিটি।

এই তদন্ত কমিটিকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) শেখ নাজমুল আলমের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আরেকটি তদন্ত সহায়ক কমিটিও গঠন করে ডিএমপি। এর পর সাড়ে ৭ মাস পেরিয়ে গেল, কিন্তু অস্ত্র-গোলাবারুদ রহস্য ভেদ করতে পারেনি পুলিশ।

এ বিষয়ে ডিবির উপকমিশনার (উত্তর) শেখ নাজমুল আলম বলেন, অস্ত্র বহন করা সেই পাজেরো গাড়িটির খোঁজ চলছে। ঘটনাস্থলের পাশের একটি বাড়ির সিসি ক্যামেরা থেকে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। ফুটেজ দেখে বোঝা যায়, গাড়িটিতে কোনো নম্বরপ্লেট ব্যবহার করা হয়নি। এ কারণে এ গাড়ির সন্ধান করা সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি আরো জানান, ঘটনার সময় কেউ মোবাইল ফোন ব্যবহার করেছিল কি না তাও তদন্ত করা হয়েছে। ঘটনাস্থলের আশপাশে মোবাইল অপারেটরদের কয়েকটি টাওয়ারে ওই সময় ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের কললিস্ট যাচাই করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো সূত্র মেলেনি। তবে তদন্ত চলছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!