• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পাবনার তিন বীরাঙ্গনার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি


পাবনা প্রতিনিধি নভেম্বর ২৫, ২০১৬, ০৪:০৫ পিএম
পাবনার তিন বীরাঙ্গনার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি

পাবনা : বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর টনক পড়েছে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের। দেশ স্বাধীনের দীর্ঘ ৪৫ বছর পর চলতি বছরের ১৭ নভেম্বর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছেন পাবনার তিন বীরাঙ্গনা নারী মুক্তিযোদ্ধা।

তারা হলেন- পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার খিদিরপুর গুচ্ছ গ্রামের দুই বীরাঙ্গনা মৃত নুনে সরকারের স্ত্রী সোনা বালা ও শ্রী আশুপদ’র স্ত্রী মায়া রানী। একই উপজেলার কন্দর্পপুর গ্রামের মৃত বেলায়েত প্রামানিকের স্ত্রী মোছা: জামেলা খাতুন।

একাত্তরের সেই দুর্বিসহ যন্ত্রণা, সামাজিক বঞ্চনার পাশাপাশি দুঃখ-দুদর্শার মধ্যে চলে আসা এই অসহায় নারী মুক্তিযোদ্ধারা সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে দ্রুত তাদের সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা চালুর জোর দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম প্রকাশের দীর্ঘ ৪৫ বছরের কষ্ট যেন তারা ভুলে গিয়ে একটু সুখের হাসি ফোটাচ্ছেন চোখে মুখে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একাত্তরের ২২ অক্টোবর সন্ধ্যায় বাড়িতে রান্না করছিলেন অবিবাহিত সোনা বালা ও তার ভাবী মায়া রানী। এ সময় স্থানীয় আব্দুল মমিন রাজাকারের নেতৃত্বে ৫/৭ জন বাড়িতে হানা দিয়ে জোরর্পূবক তাদের ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন চালায়। তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুঁটে গেলে তাদের ফেলে পালিয়ে যায় রাজাকারের দল। পরে খবর পেয়ে তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শাহজাহান আলী ও কমান্ডার আনোয়ার হোসেন রেনুর নেতৃত্বে রাজাকারদের উপর বেরুয়ান নামক স্থানে হামলা চালান মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারদের সম্মুখ যুদ্ধে কয়েকজন সাধারণ মানুষের পাশাপাশি মমিন রাজাকারসহ ১০ রাজাকার নিহত হয়। দীর্ঘ ৪৪ বছরের মানসিক, সামাজিক নানা লাঞ্ছনা, গঞ্জনা আর দারিদ্র্যতার সাথে সংগ্রাম করে শরীরের রোগব্যধি বাসা বাঁধার পর অবশেষে জীবন সায়াহ্নের দেশ স্বাধীনের ৪৫ বছরের মাথায় এসে পেলেন বীরাঙ্গনা নারী মুক্তিযোদ্ধার খেতাব।

বীরাঙ্গনা নারী মুক্তিযোদ্ধা মায়া রানী বলেন, জীবনের শেষ সময়ে এসে শেখের বেটি ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’ আমাদের যে সম্মান দেখালো। তার ভুলবার নয়। ক’দিনই বা বাঁচবো। সম্মান নিয়ে মরতে সুযোগ দেয়ার জন্য তাকে ধন্যবাদ। আমাদের পরবর্তী ভবিষ্যৎ উত্তরসূরীরা বলতে পারবে আমরা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য।

আর বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা সোনা বালা জীবনের সায়াহ্নে এসে আবেগে আপ্লুত। তিনি বলেন, আপনারা সাংবাদিকরা আমাদের জন্য যা করলেন, তা স্মরণীয়। আপনাদের ধন্যবাদ দেয়ার ভাষা নেই। মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি নিয়ে মরতে পারছি এটাই যেন দেশের জন্য কিছু করেছি বলে গর্বিত লাগছে।

আটঘরিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার জহুরুল হক বলেন, দীর্ঘদিন পর হলেও আজ ভালো লাগছে অসহায় এই নারীদের সরকার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছেন। তাদের সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে বাকি যা কাজ আছে তা দ্রুতই করবেন বলে জানালেন এই মুক্তিযোদ্ধা।

আর আটঘরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলীমুন রাজীব বলেন, গত বছরের ১৭ জুলাই এই বীরাঙ্গনা মহিয়সী নারীদের মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত করার জন্য কাগজপত্র মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করি। গণমাধ্যমের মাধ্যমে যখন জানতে পারি তাদের মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তসহ গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। জেনে সত্যিই আনন্দ লাগছে। তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, খুব শীঘ্রই বদলি হতে হবে এই উপজেলা থেকে। কিন্তু যাবার বেলায় একটা ভালো কাজ করে যেতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে। ইউএনও রাজীব বলেন, আগামী ১৬ ডিসেম্বর এই তিন নারী মুক্তিযোদ্ধাকে বিশেষভাবে সংবর্ধনা প্রদান করা হবে। পাশাপাশি তাদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা দ্রুত নিশ্চিত করতে আমার পক্ষ থেকে যা যা করার সব করা হবে।

গবেষক ও পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান ডক্টর এম আব্দুল আলীম বলেন, নিজস্ব ঘর-বাড়ি নেই, পরের জায়গায়, পরের জমিতে কাজ করে দিনাতিপাত চলছিল এই বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা নারীদের। জীবন সায়াহ্নে এসে দাঁড়িয়েছেন আজ তারা। দীর্ঘদিন পর হলেও সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনিও দাবি করলেন মানবেতন জীবন যাপনকারী এই অসুস্থ এই নারীদের দ্রুত সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে তাদের জীবন মান স্বাভাবিক ও উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখা এখন সময়ের অপেক্ষা।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!