• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পার্বত্য শান্তিচুক্তির ১৯ বছর পূর্তি আজ


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ২, ২০১৬, ০৯:৪৫ এএম
পার্বত্য শান্তিচুক্তির ১৯ বছর পূর্তি আজ

ঢাকা: আজ ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তিচুক্তির ১৯ তম বর্ষ পূর্তি। ১৯৯৭ সালের এই দিনে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধ এবং ওই এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি জনসংহতি সমিতির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার এই চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল।
দিবসটি উপলক্ষে পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দিবসটি উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এদিকে, পাহাড়িদের বিভিন্ন সংগঠনও দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। এসব সংগঠনের অভিযোগ, শান্তিচুক্তির ১৯ বছর পূর্ণ হলেও এখনও চুক্তির অনেকগুলো শর্ত বাস্তবায়ন করেনি সরকার।

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে পার্বত্য জেলাসমূহের উন্নয়ন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এবং প্রিয় মাতৃভূমির উন্নয়নে দলমত নির্বিশেষে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

পার্বত্য জেলার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়নে একযোগে কাজ করার আহ্বান রাষ্ট্রপতির। তিনি বলেন, বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, বান্দরবান এবং রাঙ্গামাটি নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপার আধার। যুগযুগ ধরে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী এ অঞ্চলে বসবাস করে আসছে। তাদের ভাষা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি এ অঞ্চলকে বিশেষভাবে বৈশিষ্ট্য মণ্ডিত করেছে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, পার্বত্য জেলাগুলোর আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় ও উদ্যোগে সরকার কর্তৃক গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে এক ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর ফলে পার্বত্য জেলাসমূহে দীর্ঘ দিনের সংঘাতের অবসান ঘটে। সূচিত হয় শান্তির পথচলা। শান্তিপূর্ণভাবে বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে এটি একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

তিনি বলেন, ‘শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় গঠিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ। আমি বিশ্বাস করি শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক ও সংস্কৃতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে।’

এদিকে, দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া পৃথক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পার্বত্য শান্তিচুক্তির ১৯ বছর পূর্তি উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীসহ দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানান এবং শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

বাণীতে প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা ছাড়াই করা এই চুক্তিকে ঐতিহাসিক ও বিরল হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সর্বত্র শান্তি বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর।

বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার শান্তি চুক্তির আলোকে এ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ গঠন করা হয়েছে। সরকার এ অঞ্চলের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, অবকাঠামো, মোবাইল নেটওয়ার্কসহ সকলখাতের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে।

তিনি বলেন, পাহাড়ি জনগণের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মানোন্নয়নে রাঙ্গামাটিতে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং ভূমি বিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বোর্ডের কার্যক্রম আরো গতিশীল ও সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড অধ্যাদেশ, ১৯৭৬ বাতিল করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আইন, ২০১৪ প্রণয়ন করেছে। আমরা এই বোর্ডের বরাদ্দ বহুগুণে বৃদ্ধি করেছি।

তিনি বলেন, পার্বত্য জেলাসমূহের নৈসর্গিক সৌন্দর্য সমুন্নত রাখা ও পর্যটন শিল্পের প্রসারেও আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের সময়োচিত উদ্যোগ গ্রহণের ফলে আজ পার্বত্য জেলাসমূহ কোন পিছিয়ে পড়া জনপদ নয়। দেশের সার্বিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় এ অঞ্চলের জনগণ সম-অংশীদার।

শেখ হাসিনা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির মাধ্যমে এ অঞ্চলের দীর্ঘদিনের জাতিগত হানাহানি বন্ধ হয়। অনগ্রসর ও অনুন্নত পার্বত্য অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয় শান্তি ও উন্নয়নের ধারা। ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার অর্জন এই চুক্তির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির স্মারক।

উল্লেখ্য, ঐতিহাসিক এই শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং শান্তি বাহিনীর পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতা সন্তু লারমা।

তবে এই চুক্তির শর্তগুলো এখনও সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়নি এমন অভিযোগ বরাবরই করে যাচ্ছে পাহাড়ি সংগঠনগুলো। এর প্রতিবাদে আজ তিন পার্বত্য জেলাসহ রাজধানীতে আলোচনা সভা, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের আয়োজন করেছে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!