• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পাল্টা-পাল্টি অভিযোগে বাড়ছে নির্বাচনী উত্তাপ


রাজশাহী ব্যুারো জুলাই ১৬, ২০১৮, ০২:১৮ পিএম
পাল্টা-পাল্টি অভিযোগে বাড়ছে নির্বাচনী উত্তাপ

রাজশাহী : রাজশাহীতে জমে উঠেছে প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণা। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। রোববার (১৫ জুলাই) ১ নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এবং ৫ নং ওয়ার্ডে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল গণসংযোগ করেন। এ সময় নিজ নিজ প্রতীকের পক্ষে ভোট চান তারা।

এছাড়াও অপপ্রচার ও ভোটারদের ভয়ভিতি দেখানো এবং নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুরসহ আচারণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ এনেছেন এই দুই মেয়র প্রার্থী। রোববার (১৫ জুলাই) খায়রুজ্জামান লিটনের পক্ষে থেকে সাতটি এবং মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পক্ষ থেকে চারটি অভিযোগ করা হয় রিটানিং অফিসারের কাছে। এ নিয়ে রোববার পর্যন্ত লিটনের পক্ষ থেকে ১৭টি এবং বুলবুলের পক্ষ থেকে ১৬টি অভিযোগ রিটানিং অফিসারের কাছে দেয়া হয়েছে।

মহাজোটের মেয়র প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণার নামে ইস্যূ তৈরী করতে ব্যস্ত বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এ জন্য তারা আচারণবিধি লংঘন করে বিভিন্ন কর্মকান্ড চালিয়ে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। তবে এ নিয়ে নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা নিজেরা কিছু না করে যে বিষয়গুলো সাথে সাথে নির্বাচন ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জানায়।

অপরদিকে, মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুরসহ প্রচার সন্ত্রাস চালিয়ে প্রশাসনের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ ভোটের মাঠ দখলে নেয়ার চেষ্টা করছে। প্রতিপক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বির সঙ্গে কি আচারণ করা প্রয়োজন তা মানছে না আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। একের পর এক রিটানিং অফিসারের কাছে অভিযোগ করেও কোন লাভ হচ্ছে না। নির্বাচন কর্মকর্তারা একজন প্রার্থীর আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেন বুলবুল।

সহকারি রিটানিং অফিসার ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান জানান, রোববার পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষ থেকে ১৭টি ও বিএনপির প্রার্থীর পক্ষ থেকে ১৬টি অভিযোগ দেয়া হয়েছে। তবে আগের উভয় পক্ষের কয়েকটি অভিযোগ তদন্ত করা হয়েছে। তদন্তে আচরণবিধি ভঙ্গের কোন প্রমান মেলেনি। রোববার যে অভিযোগগুলো দেয়া হয়েছে সেগুলোও তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ রোববার বিএনপির-জামায়াতের স্বশস্ত্র ক্যাডাররা ধানের শীষের পক্ষে প্রচারে অংশ নিয়ে ভোটারদের ভয়ভিতি দেখানো, অপপ্রচার, অর্থের প্রলোভন ও পোস্টার ফেন্টুন ছিড়ে নষ্ট করার পাঁচটি অভিযোগ রিটানিং অফিসারের কাছে দেন নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থীর আইন সহায়তা উপ-কমিটির সদস্য সচিব এ্যাডভোকেট মুসাব্বিরুল ইসলাম। এছড়াও মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন নিজে কর্মীদের পুলিশী হয়রানি ও তার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাত না দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন।

মুসাব্বিরুল ইসলাম তার অভিযোগে উল্লেখ্য করেছেন, ‘শনিবার রাত ৮টার দিকে বুধপাড়া এলাকায় বিএনপি ও জামায়াতের কিছু স্বশস্ত্র নেতাকর্মী নির্বাচনী প্রচারণাকালে সাধারণ ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ধানের শীষে ভোট না দিলে পরবর্তী সময়ে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। তারা বলে এ এলাকা আমাদের ঘাটি, এখানে বসবাস করতে ধানের শীষেই ভোট দিতে হবে। তা না হলে তোমাদের শান্তিতে থাকতে দিব না।

অপর অভিযোগ পত্রে মুসাব্বিরুল জানিয়েছেন, ‘শনিবার বিকেল ৬টার দিকে ১৭ নং ওয়ার্ড ভাড়ালিপাড়া এলাকায় ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে বিএনপি ও জামায়াতের কিছু মহিলা কর্মী প্রচারনা করে। এ সময় তারা সাধারণ ভোটারদের বলে নৌকায় ভোট দিয়ে লিটনকে নির্বাচিত করলে তোমাদের এই জায়গা থেকে উচ্ছেদ করে এখানে সিটি করপোরেশনের গোডাউন তৈরী করবে। এছাড়াও আওয়ামী লীগ ইসলামের শত্রু। তোমরা নৌকায় ভোট দিলে এদেশে গজব হবে। তাই তোমরা ইসলামের শত্রু লিটনকে ভোট দিও না। বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা এ ভাবে মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচার প্রচারণা চালিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটনের সুনাম ক্ষুন্ন করছে।’

অন্য এক অভিযোগ বলা হয়েছে, ‘শনিবার সকাল ৬টার দিকে ২৯ নং ওয়ার্ড ডাঁশমারি এলাকায় বিএনপি জামায়াতের কিছু নেতাকর্মী ধানের শীষের পক্ষে প্রচারনা চালায়। সেখানে সাধারণ ভোটারদের তারা বলে এই এলাকা বিএনপির জামায়াতের ঘাটি, এখানে বসবাস করতে হলে ধানের শীষে ভোট দিতে হবে। তা না হলে কখন কি হবে কেই বলতে পারবে না। আওয়ামী লীগের কেউ তোমাদের রক্ষা করতে পারবে না তাই ধানের শীষেই ভোট দিতে হবে। তা না হলে ভয়ঙ্কর পরিনতি হবে। যা তোমরা চিন্তাও করতে পারবে না। বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা এমন ভয়ভীতি দেখিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।’

আরেক পত্রে মুসাব্বির অভিযোগ করেন, ‘শনিবার রাত ৯টার দিকে ১৪ নং ওয়ার্ড তেরখাদিয়া ডাবতলার এলাকায় ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে বিএনপির ১০ থেকে ১৫ জন নেতাকর্মী নিম্ন আয়ের মানুষের বাড়ি বাড়ি প্রচারণা চালায়। এ সময় তারা ধানের শীষে ভোট দিলে ভোটারদের নগদ অর্থ সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দেয়।

এ সময় তারা ভোটের দুই দিন আগে স্থানীয় বিএনপির সভাপতির সাথে দেখা করে ধানের শীষে ভোট দেয়ার ওয়াদা করে অর্থ নেয়ার পরামর্শ দেয়। একই সঙ্গে তারা ভোটারদের কাছে নৌকার মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম কুৎসার রটনা করে এবং বলে এরা ইসলামের শত্রু, এদের ভোট দিলে দেশ ধংস হয়ে যাবে। শনিবার দিবাগত গভীর রাতে নগরের ১২ নং ওয়ার্ডে নৌকার প্রতীকের পোস্টার ফেস্টুন ছিড়ে ফেলে নষ্ট করা ও গণসংযোগকালে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে অপর এক পত্রে।’

এদিকে, ‘এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন পুলিশ কমিশনার ও রিটারিং অফিসারের কাছে পৃথক দুইটি অভিযোগ দেন। এর একটিতে নৌকার কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হয়রানির অভিযোগ আনা হয়েছে। আর অপরটিতে বিএনপির প্রতিনিধিদের স্বাক্ষত দিলেও নৌকার পক্ষের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা না করার অভিযোগ করা হয় জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে।’

এদিকে, ধানের শীষ প্রতীকের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট তোফাজ্জাল হোসেন তপু অভিযোগ করেন, শনিবার বিকেলে নগরের ২৩ নং ওয়ার্ডের বোষপাড়া এলাকায় ধীনের শীষের নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। একই সঙ্গে স্থানীয় ওয়ার্ড যুবদল সভাপতি নান্নুকে হুমকি দেয় নৌকার প্রার্থীর কর্মীরা।

একই দিন রাত রাত ১১টার দিকে হাদীর মোড় খাদেমুল ইসলাল মসজিদের সামনে বিএনপির নির্বাচনী কার্যালয় গিয়ে ধানের শীষের সমর্থকদের হুমকী ও ভাঙচুর করা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে কার্যালয়টি তালা বন্ধ করে দেয়। এছাড়াও রাত ২টার দিকে ২৫ নং ওয়ার্ডে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মোটরসাইকলে নিয়ে গিয়ে ওয়ার্ড নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর এবং ১১, ১২ ও ১৩ নং ওয়ার্ডে ধানের শীষের নারী কর্মীদের ভিডিও চিত্র ধারণ ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ করেন বিএনপির প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট তোফাজ্জাল হোসেন তপু।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!