• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
১১ প্রকল্প থাকছে সড়ক উন্নয়নে

পিপিপির মাধ্যমে ৭৮ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ


বিশেষ প্রতিনিধি জুন ৭, ২০১৮, ০২:৩৩ পিএম
পিপিপির মাধ্যমে ৭৮ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ

ঢাকা : অবকাঠামো উন্নয়নে অর্থের বিপুল চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত জোগান দিতে পারছে না সরকার। আট বছরে এ খাতে সরকারি বিনিয়োগ ৪ দশমিক ৬৭ থেকে বেড়ে মোট দেশজ উৎপাদনের ৮ দশমিক ২২ শতাংশে উন্নীত হলেও ঘাটতি কাটছে না অর্থায়নে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যক্তি খাত থেকে অর্থ সংগ্রহে ২০১০ সালে চালু করা হয়েছিল প্রকল্প অর্থায়নের নতুন মডেল সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি)। লক্ষ্য ধরা হয়েছিল বছরে গড়ে ৩৯ হাজার কোটি টাকা করে পাঁচ বছরে ১ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ। প্রকল্প চিহ্নিত করে বছরে ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও বেসরকারি খাত এগিয়ে না আসায় এক টাকাও খরচ হয়নি।

পরবর্তীতে পিপিপি প্রকল্পে বিনিয়োগের অর্থ ও এর লাভে বিভিন্ন ধরনের শুল্ক সুবিধা দিলেও এ খাতে হাতেগোনা কয়েকটি প্রকল্প সফলতার মুখ দেখছে। এ অবস্থায় পিপিপি থেকে মুখ না ফিরিয়ে এ খাতে গতি আনতে নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী অর্থবছর থেকে বিনিয়োগ খাতের ৩০ শতাংশ প্রকল্প পিপিপি ভিত্তিতে বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। নতুন অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে যোগ করা হচ্ছে রেকর্ড ৭৮ প্রকল্প।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে পিপিপির প্রকল্প রাখা হয় ৩৬টি। সংশোধিত এডিপিতে এই সংখ্যা ৩০ এ নামিয়ে আনা হয়। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এডিপিতে পিপিপি প্রকল্পের সংখ্যা ছিল ৩২টি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের এডিপিতে ছিল ৪০টি, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের এডিপিতে ৪০ এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে পিপিপি প্রকল্পের সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ ৪৬টি। আগামী অর্থবছরের এডিপিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ৪৭টি ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের ৩১টিসহ পিপিপির মোট প্রকল্প দাঁড়াবে ৭৮ এ। নতুন অর্থবছরে পিপিপির মাধ্যমে রেলের জমির উপর ঢাকায় একটি পাঁচতারকা হোটেল ও শপিংমল নির্মাণকাজ শুরু করতে চায় সরকার।

রেলওয়ের অব্যবহৃত জমির উপর চট্টগ্রামে একটি পাঁচতারকা হোটেল, খুলনায় খানজাহান আলী বিমানবন্দর, মিরপুর ৯ নম্বর সেকশনে স্যাটেলাইট সিটি এবং  মোংলা পোর্ট টাওয়ার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।  

পিপিপি খাতে সর্বোচ্চ ১০ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে সড়ক ও মহাসড়ক উন্নয়নে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেনের এক্সপ্রেসওয়ে, হাটিকুমরুল নাটোর হয়ে রাজশাহী, নবীনগর-মানিকগঞ্জ, কালাকান্দী, মদনপুর, ডেমরা, বাইপাইল, গাবতলী থেকে নবীনগর পর্যন্ত মহাসড়ক আট লেন, গাজীপুর হয়ে সাভারের হেমায়েতপুর, গাবতলী-নবীনগর মহাসড়ক, ঢাকা সার্কুলার রোড দ্বিতীয় প্রকল্প, জয়দেবপুর-দেবগ্রাম-ভুলতা-মদনপুর মহাসড়ক ও হাতিরঝিল-রামপুরা-বনশ্রী হয়ে তারাব লিঙ্ক মহাসড়ক অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এ ছাড়া টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈরে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের জন্য সার্ভিস এরিয়া নির্মাণ করা হবে পিপিপি ভিত্তিতে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে আগামী ১৩ বছরে বাংলাদেশের অতিরিক্ত ৯২ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার প্রয়োজন। এ অর্থের মাত্র ১৫ শতাংশ অর্থায়ন বিদেশি উৎস থেকে পাওয়া যাবে। সরকারের একার পক্ষে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়।  

পিপিপিতে সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে সফলতা নিয়ে বরাবরই সন্দিহান অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রথম দফায় দায়িত্ব নিয়ে অবকাঠামো উন্নয়নে পিপিপি খাতে গুরুত্ব দিয়ে আসছে মহাজোট সরকার। এ সময় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার ছাড়া পিপিপি খাতে বড় কোনো প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি। লাভের সুনির্দিষ্ট সম্ভাবনা না থাকলে অবকাঠামো খাতে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে চাইবেন না। তা ছাড়া পিপিপি খাতে উন্নয়ন করা সড়কে টোল আরোপের প্রয়োজন হবে। ফলে পণ্য পরিবহন ও যাতায়াতে ব্যয় বাড়বে আরেক দফা। এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে সফলতার হার এমনিতেই কম।

দীর্ঘসূত্রতার কারণে কয়েকগুণ বাড়তি ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন অনেকটাই নিয়মে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় পিপিপি খাতে প্রকল্প বাস্তবায়ন অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়বে। সড়ক অবকাঠামো খাতে নতুন প্রকল্প নেওয়ার আগে রেলপথ উন্নয়নে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন।

তিনি বলেন, দেশে এখন পর্যাপ্ত সড়ক রয়েছে। পরিবেশ ও ব্যয় বিবেচনায় রেলের উন্নতি নিশ্চিত করলে সড়কের ওপর চাপ কমে আসবে। এ বিষয়ে রফতানিকারকদের সংগঠন ইএবির সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, লাভের নিশ্চয়তা থাকলেই কেবল বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করবেন। প্রকল্পে অর্থায়ন করে আসলসহ মুনাফা কীভাবে পাওয়া যাবে এ ব্যাপারে সরকারের নীতিমালা থাকতে হবে।

গত ১১ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি সভার কার্যবিবরণী সূত্রে জানা গেছে, সভায় পিপিপি উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে প্রতিটি মন্ত্রণালয় বা বিভাগে এবং পরিকল্পনা কমিশনের সব সেক্টর ডিভিশনে এ বিষয়ে দক্ষ, অভিজ্ঞ ও পর্যাপ্ত জ্ঞানসম্পন্ন জনবল গঠন করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

পিপিপির জন্য দেওয়া সুবিধা : পিপিপি কার্যক্রমে গতি আনতে এ খাতে প্রকল্প পরিচালনা থেকে আয় করা অর্থের উপর ১০ বছরের জন্য আয়কর অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। পিপিপি প্রকল্পে অংশ নিতে গঠিত কোম্পানির সংগ্রহ করা মূলধনের মুনাফায়ও কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে পিপিপি প্রকল্পের বিদেশি কর্মীদের আয়ের ওপর ৫০ শতাংশ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!