• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পুরনো তাঁতে কমছে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের উৎপাদন


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ১০, ২০১৭, ০৬:০৭ পিএম
পুরনো তাঁতে কমছে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের উৎপাদন

ঢাকা: পুরনো তাঁত দিয়ে চলছে বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) ৯টি পাটকল। দেশ-বিদেশে চাহিদা থাকলেও ওসব পাটকলে বহুমুখী পাটপণ্য তৈরির উপযোগী যন্ত্রপাতি নেই।

আর ওসব পাটকলে দীর্ঘদিনেও বিএমআরই (ব্যালান্সিং, আধুনিকায়ন, বিস্তার ও প্রতিস্থাপন) শর্ত পূরণ করা হয়নি। বরং ওসব পাটকলের মান্ধাতার আমলের তাঁতের বেশির ভাগই বর্তমানে বিকল। 

তাছাড়া প্রয়োজনীয় কাঁচা পাটের অভাবেও কিছু তাঁত বন্ধ রয়েছে। ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে পাটজাত পণ্যের উৎপাদন হ্রাসের পাশাপাশি উৎপাদন খরচবেড়ে গেছে। ফলে দিন দিন বাড়ছে পাটকলগুলোর লোকসানের পরিমাণ। বিজেএমসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের অধিকাংশই ষাটের দশকে স্থাপিত। তারমধ্যে ৭টি খুলনায় ও ২টি যশোরে অবস্থিত। খুলনার খালিশপুরে ভৈরব নদের তীরে ১৯৫২ সালে ১১৩ দশমিক ৩ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় ক্রিসেন্ট জুট মিলস লিমিটেড। 

১৯৫৪ সালে ৫৫ দশমিক ৮৪ একর জমিতে গড়ে ওঠে প্লাটিনাম জুট মিল। তাছাড়া ১৯৫৩ সালে দৌলতপুর পাটকল, একই দশকে পিপলস জুট মিল (বর্তমানে খালিশপুর পাটকল), ১৯৫৬ সালে স্টার জুট মিল, ১৯৬৭ সালে আটরা শিল্পাঞ্চলে ইস্টার্ন জুট মিলস ও একই এলাকায় ১৯৬৮ সালে আলিম জুট মিল চালু হয়। আর ১৯৬৩ সালে যশোরের অভয়নগরে কার্পেটিং জুট মিল ও ১৯৬৭ সালে যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রির (জেজেআই) যাত্রা শুরু করে। 

১৯৭২ সালে ওসব পাটকলকে বিজেএমসির আওতায় আনা হয়। ওসব রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে স্যাকিং (মোটা বস্তা), হেসিয়ান (পাতলা চট), সিবিসি (কার্পেট বেকিং ক্লথ) ও ইয়ার্ন (সুতা) চার ধরনের পণ্য উৎপাদন হয়। উৎপাদিত ওসব পণ্য সিরিয়া, ইরাক, ইরান, সুদান, মিসরসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়। ওসব পাটকলে মোট ৫ হাজার ১০৯টি তাঁত থাকলেও গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চালু রয়েছে মাত্র ২ হাজার ৬৭২টি তাঁত।

সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত প্লাটিনাম জুট মিলে ৮১৪টি তাঁতের মধ্যে ৫২৮টি, ক্রিসেন্ট জুট মিলে ১ হাজার ৭৩টি তাঁতের মধ্যে ৬৯৮টি, খালিশপুর জুট মিলে ৬৭৯টি তাঁতের মধ্যে ৩৯৫টি, স্টার জুট মিলে ৫৫২টি তাঁতের মধ্যে ৩৯৯টি, দৌলতপুর জুট মিলে ১৮১টি তাঁতের মধ্যে ৫৫টি, আলিম জুট মিলের ১৯৩টি তাঁতের মধ্যে ৭৮টি, ইস্টার্ন জুট মিলে ২৪৩টি তাঁতের মধ্যে ১৭২টি, কার্পেটিং জুট মিলের ৭০টি তাঁতের মধ্যে ৬৯টি ও জেজেআই জুট মিলে ৩৩৯টি তাঁতের মধ্যে ২৭৮টি তাঁত চালু রয়েছে। 

ওসব পাটকলের যন্ত্রপাতিগুলো পুরনো হয়ে পড়ায় তা থেকে পূর্ণ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। আর মাঝেমধ্যেই ওসব মিলের মেশিনগুলো বিকল হয়ে পড়ে। পরে খুচরা যন্ত্রাংশ লাগিয়ে তা মেরামত করে চালাতে হয়। ওসব মিলে অসংখ্য তাঁত একেবারেই বিকল হয়ে গেছে। যা দিয়ে আর উৎপাদন সম্ভব নয়। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে গড়ে ওঠা ওসব মিলের মেশিনগুলো কখনো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। ফলে কারখানার উৎপাদন কমে গেছে।

আর পাটকলগুলোর আয় কমে যাওয়ায় শ্রমিকদের মজুরির ওপরও তার প্রভাব পড়েছে। ওসব মিলের যন্ত্রপাতিগুলো দ্রুত বিএমআরই করা প্রয়োজন। ওই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। 

এ প্রসঙ্গে বিজেএমসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম অঞ্চলের দু-একটি জুট মিলে আধুনিক মেশিনে বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে। কিন্তু পুরনো তাঁতের কারণে খুলনা অঞ্চলের কারখানাগুলো ওই ধরনের পণ্য উৎপাদনে যেতে পারছে না।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!