• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পুরান ঢাকার বাতাসে হালুয়া-রুটির ঘ্রাণ


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ১১, ২০১৭, ০৭:০৬ পিএম
পুরান ঢাকার বাতাসে হালুয়া-রুটির ঘ্রাণ

ঢাকা: ধর্মীয় যেকোনো আয়োজন বা খাবারের প্রসঙ্গ উঠলেই আলোচনায় আসে পুরান ঢাকার কথা। কারণ খাবারের বাহারি আয়োজন মানেই পুরান ঢাকার চকবাজার। রমজান বা শবে বরাত কিংবা শবে-ক্বদর উপলক্ষে ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে মিল রেখে মজাদার ও আকর্ষণীয় সব খাবারের পসরা বসে পুরান ঢাকায়।

ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপলক্ষে ঘরে ঘরে তৈরি করা হালুয়া-রুটি আত্মীয়-স্বজন,পাড়া-প্রতিবেশী এবং দুস্থদের মাঝে বিতরণ করার রেওয়াজ নতুন ঢাকায় দেখা না মিললেও পাওয়া যাবে পুরান ঢাকায়। বিকেল গড়াতেই কিশোর-কিশোরিরা বড় আকারের গোলাকার পাত্রে (ছেনি নামে পরিচিত) নানান পদের ডাল ও সুজির তৈরি হালুয়া এবং রুটি নিয়ে বিতরণে বের হয়। রেশমের বা হাতের কাজ করা আকর্ষণীয় কাপড় দিয়ে তা ঢেকে রাখা হয়। এসময় ছেলেদের পরনে থাকে পায়জামা-পঞ্জাবি, মাথায় পুরান ঢাকার বিশেষ কালো রঙের জালি টুপি। মেয়েদের মাথায় শোভা পায় চাকচিক্যেভরা নতুন ওড়না। কষ্ট করে তৈরি করা খাবারগুলো বিতরণের দায়িত্ব পড়ে তাদের ঘাড়ে।

পুরান ঢাকার অনেক গৃহিনী বুধবারই রাত জেগে তৈরি করেছেন সব খাবার। যাতে বৃহস্পতিবার রাতে ইবাদতে মনোযোগ দেয়া যায়। শুধু বাসায় তৈরি খাবারে মন ভরে না তাদের। ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় হোক, পুরান ঢাকার অধিকাংশই ভীড় জমান বেকারিগুলোতে। ছুটে যান ঐতিহ্যবাহী আনন্দ, ডিসেন্ট, আলাউদ্দিন, বোম্বে, মদিনা ও নিউ আল-আমিন ছাড়াও এলাকার বেকারিতে। 

পুরান ঢাকার ব্যবসায়িরা জানান, মোগল আমল থেকেই খাবারের এই সিলসিলা (ধারাবাহিকতা) চলে আসছে। মোগল শব্দের সঙ্গে খানা অর্থ্যাৎ খাবারের কথা চলে আসে। তাই চক বাজারের শাহী মসজিদকে ঘিরেই চলে আসছে বাহারি খাবারের বাজার। লাভের অঙ্কের চেয়ে এই উৎসবে যোগদানটাই বড় হিসেবে দেখে ব্যবসায়িরা। ধর্মীয় অনুষ্টান হবে আর খাবার ব্যবসায়ি হয়ে চক বাজারে দোকান বসাবেন না, তা হয় না। এখনি তা ব্যবসায়িদের মান-সম্মানের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই যেভাবেই মৌসুমি শ্রমিক দিয়ে হলেও দোকান বসানো চাই।

চক বাজারের এসব খাবার নিতে গুলশান, বনানী, ধানমন্ডী, মিরপুর, গাবতলী থেকে শুরু করে ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন চলে আসে। সাত রওজার আনন্দ বেকারি এখন শতবর্ষ পার করেছে। তারপরেও ব্যবসার ধরণ বদলায়নি। বংশানুক্রমিকভাবে মান বজায় রেখেই চলছে তাদের বেকারি ব্যবসা। এছাড়া বোম্বে বেকারি, জজকোর্ট এলাকার ইউসুফ বেকারির রুটিরও নামডাক রয়েছে। এসব বেকারিতে শবে বরাত উপলক্ষ্যে নিয়মিত পণ্যর পাশাপাশি মাসকট হালুয়া, লাউয়ের হালুয়া, দুধিয়া হালুয়া, হাফসি হালুয়া, গাজরের হালুয়া এবং বুটের হালুয়া বিক্রি হয়।

নকশি রুটি:
মূলত পাউরুটি। কিন্তু উৎসবে তা রূপ নেয় মাছের আকৃতিতে। মোগলাই নকশা মেনে কখনও গোলাকার, চতুর্ভূজ ও ঢাউস আকৃতির রুটি ছাড়া চলে না এ আয়োজন। ধর্মীয় অনুষ্ঠান মানেই এই রুটির পসরা জমবে।

বড় বাপের পোলায় খায়:
ঐতিহ্যবাহী এই বাজারে সবচেয়ে নামকরা এক আইটেম হলো ‘বড় বাপের পোলায় খায়’।  ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙ্গায় ভইরা লইয়া যায়, ধনী-গরীব সবায় খায়, মজা পাইয়া লইয়া যায়’ এভাবে ছড়া কেটে ক্রেতা আকর্ষণ করে বিক্রি করা হয় এই খাবার। আস্ত খাসি বা হাঁস ভুনো করে সাজিয়ে রাখা হয় এখানে। গরু ও মুরগির মাংস, হালুয়া, রুটিসহ হরেক পদের খাবার মিশ্রণ করে তৈরি হয় এই খাবার। খাবারটি পুরান ঢাকার বিশেষ আয়োজন। এ খাবার নিতেও ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে যায় চক বাজারে।

শাহী জিলেপি:
খাবারে মিষ্টতা আনতে প্রয়োজন জিলেপি। তবে শাহী জিলেপি ছাড়া কথাই নয়। ডায়বেটিসের জন্য অনেকে না খেলেও বাজারে গেলে শাহী জিলেপি কিনতেই হবে পুরান ঢাকাবাসিদের।

পেট ঠান্ডায় দই-বড়া:
হরেক পদের খাবার খেয়ে পেট গরম হওয়ার ঝুঁকি থাকেই। হজমশক্তিতে যারা দুর্বল তাদের জন্য রয়েছে দই-বড়া। মুখের রুচি বাড়ানোর পাশাপাশি হজমে সহায়তা করে রসালো এ খাবারটি। 

কাচ্চি বিরিয়ানি:
খাবার থাকবে কিন্তু কাচ্চি বিরিয়ানি থাকবে না, তাহলে পুরান ঢাকাবাসির নাকটাই কাটা যাবে। যে খাবারই থাকুক বিরিয়ানি থাকতেই হবে। চাহিদার জন্য পুরান ঢাকার নান্না বিরিয়ানির মূল শাখা খুঁজে পাওয়া এখন দুস্কর। বেচারাম দেউরিতে থাকা মূল দোকানটিতে এদিন ব্যস্ততা থাকে সবচেয়ে বেশি। সময় ধরে না গেলে মিলবে না এ খাবারটি। রয়েছে হাজির বিরিয়ানি। ঘরে বিরিয়ানি না হলেই হোটেলের বিরিয়ানি আনতেই হবে পুরান ঢাকবাসির।

জেগে থাকবে পুরান ঢাকা:
দলবেধে ট্র্যাক, পিক-আপ, ভ্যান, ঘোড়ার গাড়ি বা রিকশায় চড়ে সারারাত ধরে চলবে মসজিদে মসজিদে ঘুরে নামাজ আদায়। কবরস্থানে গিয়ে স্বজনদের জন্য দোয়া প্রার্থনা। ইচ্ছে হলেই চলবে খাওয়া-দাওয়া। সবার বাসায় খাবার থাকলেও পুরান ঢাকার হোটেলগুলো খোলা থাকবে সারারাত। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/তালেব

Wordbridge School
Link copied!