• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পুরান ঢাকায় প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত মৃৎ শিল্পীরা


জবি প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৭, ০১:১১ পিএম
পুরান ঢাকায় প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত মৃৎ শিল্পীরা

ঢাকা : সনাতনী ধর্মালম্বীদের সর্ব বৃহৎ উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। দুর্গাপূজা বা দুর্গোৎসব হল হিন্দু দেবী দুর্গার পূজাকে কেন্দ্র করে প্রচলিত একটি উৎসব। আশ্বিন ও চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে দুর্গাপূজা করা হয়। আশ্বিন মাসের দুর্গাপূজা শারদীয় দুর্গাপূজা এবং চৈত্র মাসের দুর্গাপূজা বাসন্তী দুর্গাপূজা নামে পরিচিত। শারদীয় দুর্গাপূজার জনপ্রিয়তা বেশি। বাঙালি সমাজে সনাতন ধর্মের গণ্ডি পেরিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব সার্বজনীনে পরিনত হয়েছে। শাস্ত্রমতে মহালয়ার মধ্যদিয়ে দেবী দুর্গার আগমন ঘটে মর্তলোকে। পূজা শুরু হবে আশ্বিন মাসের ৯ তারিখ তবে পঞ্জিকা অনুযায়ী ২৫ সেপ্টেম্বর।

এ উৎসবকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঢাকাসহ সারাদেশের মৃৎ শিল্পীরা। পড়েছে প্রতিমা তৈরির ধুম। প্রতিবারের মত এবারও পুরান ঢাকায় গলিতে গলিতে পরম যত্মে অস্থায়ী পূজা মণ্ডপ সাজোনো হচ্ছে। বিশেষ করে প্রশিদ্ধ শাঁখারী বাজার, লক্ষ্মী বাজার, শ্যামবাজার, তাকি বাজার, কলতা বাজান, মুরগিটোলা, ডালপট্টিরর মত ছোট বড় সব মহলায় পূজা মণ্ডপ বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। দেখা গেছে গলিতে কয়েক মিটার পর পর এসব পূজা মণ্ডপ স্থাপনের কাজ চলছে। পূজা মণ্ডবের জন্য তৈরী হচ্ছে প্রতিমা। ফলে প্রতিমা তৈরির কারিগরদের বেড়েছে ব্যস্ততা। অনেক কারিগর রাত দিন কাজ করছেন। তাদের দম ফেলার জো নেই।

পুরান ঢাকার বেশ কয়েকটি প্রতিমা তৈরির মণ্ডপ ঘুরে দেখা যায়, পূজা আরম্ভের দিন অতি সন্নিকটে হওয়ায় প্রতিমা পূজা মণ্ডপে তোলার উপযোগী করে তুলতে দিনরাত কাজ করছেন মৃত শিল্পীরা। বৃষ্টি থাকায় গ্যাসের ছোট চুলার তাপ দিয়ে প্রতিমার শুকানো হচ্ছে। যেসব প্রতিমা শুকানো হয়েছে সেসবে চলছে রং দেবার কাজ। রং দেওয়া শেষ হওয়া প্রতিমাগুলাতে চলছে শাড়ি পড়ানের কাজ।

শরৎদাসগুপ্ত লেনের এক পাশে বসে প্রতিমা তৈরি করছেন রবীন্দ্রনাথ দাশ। তিনি পাল না হয়েও গত চল্লিশ বছর এ এলাকায় প্রতিমা তৈরি করছেন। তিনি সোনালীনিউজকে বলেন, প্রতিবারের ন্যায় এবার তিনজন কর্মচারী ছয় সেট প্রতিমা তৈরি করছি। রোদ কম হওয়া গ্যাসের হ্যান্ড চুলাই প্রতিমা শুকাতে হচ্ছে। প্রতিসেট প্রতিমা ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকায় অর্ডার পেয়েছি। একই লেনের রবীন্দ্রনাথ পালের সহকারী জয় দেব বলেন, পূজার শেষ সময় এসে গেছে। বলতে গেলে রাত দিনই কাজ করছি। কাজ প্রায় শেষ। অধিকাংশ প্রতিমায় রং দিচ্ছি। ডালপট্টির মোড়ে শ্রী শ্রী মদনমোহন গৌর নিতাই বিগ্রহ মন্দির গিয়ে দেখা যায়, মন্দির গেট দিয়ে সাজানো হচ্ছে।

মন্দিরের ভেতরে চলছে দেবীর প্রতিমা তৈরির কাজ। এখানাকার মৃৎ শিল্পীরা অনেক ব্যস্ত সময় পার করছেন। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে কথা বলা সুযোগ হয় মৃৎ শিল্পী সুজন পালের সঙ্গে। সংক্ষিপ্ত আলাপকালে তিনি সোনালীনিউজকে বলেন, মাত্র পাচ দিনে সাত সেট প্রতিমার রং লাগানোর পাশাপাশি কাপড় পড়াতে হবে। বিভিন্ন রংয়ের কাপড় থেকে বেছে নির্দিষ্ট রংয়ের কাপড় পড়িয়ে ট্রায়েল দিতে হবে। কোনো কোনো প্রতিমায় চার-পাঁচ বার তরে কাপড় বদলাতে হচ্ছে। তিনি প্রতি সেট প্রতিমার মজুরি ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা নেন।

পুরান ঢাকায় যেসব সংগঠনের উদ্যোগে পূজার আয়োজন করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রতিদ্বন্দ্বী, সংঘ মিত্র, শ্রী শ্রী রাধা মাধব জিউ দেব মন্দির, নব কল্লোল, তাঁতীবাজার পূজা কমিটি, শ্রী শ্রী শিব মন্দির, উদীয়মান সূর্য সংঘ, পানিটোলা পঞ্চায়েত, নবদুর্গা, নববাণী, দুর্গাবাড়ী, ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশন ও গোয়ালনগর পঞ্চায়েত কমিটি।

এবার পূজায় পূজায় পুরোনো ঢাকায় কি ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে ললবাগ বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ ইব্রাহীম খান সোনালীনিউজকে বলেন, ‘বরাবরের মতো এবারো আমাদের কঠোর নিরাপত্তার জন্য আমাদের আইজিপি মহোদয় ও আমাদের কমিশনার মহোদয় পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন। সেখানে মন্দির পরিচালক পর্ষদকে পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার স্বার্থে কি করণীয় তা বলে দেওয়া হয়েছে।

আমার লালবাগ বিভাগে ৫৮টি পূজা মণ্ডপ রয়েছে। তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। পূজা মণ্ডপে যাতে কোনো রকমের অপ্রতিকর ঘটনা না ঘটে। এজন্য আমরা প্রত্যকটি পূজা মণ্ডপে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও মণ্ডপ পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ে কাজ করব। এ ছাড়া মণ্ডপে পর্যাপ্ত সেচ্চাসেবক, লাইটিং, জেনারেটও ভিন্ন ভিন্ন প্রবেশ দ্বার বের হওয়ার স্থান গেট থাকবে।’

উল্লেখ্য, এবার ২৫ সেপ্টেম্বর পঞ্চমী থেকে শুরু হয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর মহা নবমী এবং ৩০ তারিখ মহা বিজয়ার দশমীর মাধ্যমে পূজা শেষ হবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!