• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশের ভিক্ষুক মায়ের দায়িত্ব নিলেন এমপি


বরিশাল প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৭, ০৭:৪৭ পিএম
পুলিশের ভিক্ষুক মায়ের দায়িত্ব নিলেন এমপি

বরিশাল: তিন পুলিশ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও শিক্ষিকা মেয়ের ভিক্ষুক বৃদ্ধ মা মনোয়ারা বেগমের দায়িত্ব নিলেন বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ মো. টিপু সুলতান।

সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ওই সাংসস নিজ উদ্যোগে বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগমকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি ওই মায়ের চিকিৎসাসহ যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করবেন।

এর আগে এমপি অ্যাডভোকেট শেখ মো. টিপু সুলতানের নির্দেশে সোমবার দুপুর ১২টার দিকে বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দিপক কুমার রায় মনোয়ারা বেগমের বাড়িতে যান। এরপর চিকিৎসার জন্য অসুস্থ মনোয়ারা বেগমকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে পাঠান।

এদিন সকালে ওই বৃদ্ধা মা মনোয়ারা বেগমকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। সংবাদটি প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় ওই বৃদ্ধার জন্য অনেকে কষ্ট প্রকাশ করে ছেলেদের শাস্তি দাবি করেন।

এদিকে ওই ঘটনা জানতে পেরে বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগমের উন্নত চিকিৎসার পাশাপাশি ওই মায়ের প্রতি অবহেলার কারণে পুলিশে কর্মরত ছেলে এবং শিক্ষিকা মেয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বরিশাল জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও ইউএনও’র সঙ্গে কথা বলেছেন সাংসদ অ্যাডভোকেট শেখ মো. টিপু সুলতান।

এ বিষয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দিপক কুমার রায় জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ মো. টিপু সুলতানের নির্দেশে তিনি অসুস্থ বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগমের বাড়িতে যান। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য সেখান থেকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি মায়ের প্রতি অবহেলার কারণে মনোয়ারা বেগমের মেয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলার পূর্ব ভূতেরদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মরিয়ম সুলতানাকে শোকজ করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, বাবুগঞ্জ উপজেলা ক্ষুদ্রকাঠী গ্রামে বাসিন্দা আইয়ুব আলী সরদার ও মনোয়ারা দম্পতির ছয় সন্তান নিয়ে ভালোভাবেই দিন কেটেছে। ২০১৪ সালে আইয়ুব আলী সরদার মৃত্যুবরণ করেন। সংসারে টানাটানি থাকলেও ছয় সন্তানকে কমবেশি শিক্ষিত করে গড়ে তুলেছেন। তিন ছেলে পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করেন।

বড় ছেলে ফারুক হোসেন এবং ছোট ছেলে নেছার উদ্দিন পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই), মেজো ছেলে মো. জসিম উদ্দিন পুলিশ সদস্য। অন্য দুই ছেলে শাহাবউদ্দিন ব্যবসা এবং গিয়াস উদ্দিন ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। একমাত্র মেয়ে মরিয়ম সুলতানা একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা।

অথচ তাদের গর্ভধারিণী মাকে আজ দুইবেলা খাবারের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করতে হচ্ছে। বয়সের ভারে ন্যুজ অসুস্থতার কারণে ভিক্ষা করাও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ভিক্ষা করতে গিয়ে পড়ে পায়ের হাড় ভেঙে যায় তার। সেই থেকে এখন পর্যন্ত বাবুগঞ্জে স্টিল ব্রিজের পশ্চিম প্রান্তের একটি ঝুপড়ি ঘরে বিনা চিকিৎসায় অর্ধাহারে বেঁচে আছেন তিনি।

মনোয়ারা বেগমের ছেলে ইজিবাইক চালক গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমি সামান্য আয়ের মানুষ। টাকার অভাবে মায়ের ভালো চিকিৎসা করাতে পারছি না। আমার তিন ভাই পুলিশ কর্মকর্তা। তারা তাদের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অন্যত্র থাকেন। তাদের বলেছি মায়ের ভরণপোষণের জন্য। তবে তারা মায়ের দিকে ফিরেও তাকায়নি। বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছিল। তাতেও কোনো কাজ হয়নি।

শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক এসএম সিরাজুল ইসলাম জানান, অসুস্থ মনোয়ারা বেগমকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন। এছাড়া তার এক পায়ে ফ্যাকচার রয়েছে। তাকে সেবা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ মো. টিপু সুলতান জানান, বিষয়টি সকালে জানার পর আমি খুবই ব্যাথিত হয়েছি। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে পাঠিয়ে অসুস্থ মনোয়ারা বেগমকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে এসে ভর্তি করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, বৃদ্ধা মায়ের প্রতি অবহেলার কারণে পুলিশ কর্মকর্তা তিন ছেলে এবং শিক্ষিকা মেয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বরিশাল জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও ইউএনও’র সঙ্গে কথা বলেছি। অসুস্থ মনোয়ারা বেগমের চিকিৎসাসহ যাবতীয় ব্যয়ভার তিনিই বহন করবেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

ছেলেরা পুলিশ কর্মকর্তা, ভিক্ষা করেন মা!

Wordbridge School
Link copied!