• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পৃথিবী কাঁপানো চার এশিয় নারী নির্মাতার গল্প...


বিনোদন প্রতিবেদক মার্চ ৮, ২০১৭, ০২:২২ পিএম
পৃথিবী কাঁপানো চার এশিয় নারী নির্মাতার গল্প...

ঢাকা: কথায় আছে, যে রাধে সে চুলও বাধে! যার উদ্যম আছে, কিছু করার মানসিকতা আছে শত প্রতিবন্ধকতা স্বত্বেও সে তার চূড়ান্ত লক্ষ্যে এগিয়ে যাবেই। পৃথিবীর নানান পেশায় তাই বীরদর্পে বিচরণ করছেন নারী। নারীরা এখন শুধু আর ঘরকুনো হয়ে সংসারই সামলাচ্ছেন না; বরং বাহিরের পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়েও চলতে শিখেছেন। নারী আজ আকাশে উড়ছে, যুদ্ধ করছে, জাহাজ নিয়ে বেরিয়ে পড়ছে গহীন সমুদ্রে। পেশাদারিত্বের সব জায়গাতেই নিজেদের সামর্থ জানান দিচ্ছেন। শিল্প, সাহিত্য, কলাবিদ্যায়ও তারা এখন সিদ্ধহস্ত। সিনেমা নির্মানেও রাখছেন নিজেদের স্বাক্ষর। ডিরেক্টর মানে এখন শুধু আর পুরুষ পরিচালককেই বোঝায়না! কারণ নারীরাও এখন গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলতে শিখে গেছেন লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশান! পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দেয়া এমন এশিয় চার নারী নির্মাতার কথাই জানাচ্ছেন মিতুল আহমেদ...

মিরা নায়ার: ১৯৫৭ সালের ১৫ অক্টোবর ভারতের ওরিশায় জন্ম নেয়া এই নারী নির্মাতা নিজের প্রথম ফিচার ফিল্ম দিয়েই বাজিমাৎ করে ফেলেন। ১৯৮৮ সালে মুক্তি পায় তার প্রথম সিনেমা ‘সালাম বোম্বে’। প্রথম সিনেমা মুক্তির পরই দুনিয়া ব্যাপী তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। সালাম বোম্বে কান ফ্যাস্টিভালে গোল্ডেন গ্লোব পুরষ্কার জেতে। এছাড়াও অস্কারে বিদেশি ভাষার শ্রেষ্ট সিনেমা হিসেবে মনোনিত হয় এটি। মিরা নায়ার একজন ভারতীয় বংশ্দ্ভুত আমেরিকান নাগরিক। তিনি অসংখ্য জাতিয় ও আন্তর্জাতিক পুরষ্কারে অভিসিক্ত হয়েছেন। তার উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হলো নেমসেক, ভ্যানিটি ফেয়ার, দ্য প্যারেজ ফ্যামিলি ও অ্যামেলিয়া। 

সামিরা মাখমালবাফ: সমকালীন সময়ে শুধু নারী নির্মাতাদের মধ্যে নয়, বরং সামগ্রিক বিবেচনায় সামিরা মাখমালবাফ জায়গা করে নিয়েছেন বিশ্বচলচ্চিত্রের তালিকায়। একজন প্রভাবশালী সিনেমা নির্মাতা হিসেবে তিনি এখন সুপ্রতিষ্ঠিত। ১৯৮০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে ইরানের তেহরানে তাঁরজন্ম। বাবা আরেকজন স্বনামধন্য সৃজনশীল চলচ্চিত্র নির্মাতা মহসিন মাখমালবাফ। সিনেমার প্রতি প্রবল আগ্রহ থাকায় সামিরার উচ্চবিদ্যালয়ের গন্ডিও পার হয়নি। পাঁচ বছর মেয়াদি সিনেমা নির্মানের কোর্স করতে গিয়ে একাডেমিক পড়াশুনা ছেড়েছেন এই গুণী নির্মাতা। মাত্র দুটি ভিডিও প্রোডাকশন নির্মানের পর মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি বিশ্বচলচ্চিত্রের অঙ্গনে হৈচৈ ফেলে দেন ‘আপেল’ সিনেমাটি নির্মান করে। এই সিনেমা নির্মানের পর বিশ্বের নানা প্রান্তের গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতিও পুরষ্কার যোগ হয় তাঁর ক্যারিয়ারে। আপেলের পর তিনি‘ব্ল্যাকবোর্ড’ নামের অন্য একটি সিনেমা নির্মান করেও পৃথিবীর সিনেমা জগৎকে যেনো একটা ঝাঁকি দেন। সেপ্টেম্বর১১,এট ফাইভ ইন দ্য আফটারনুন এবং টুলেগড্ হর্স নামের সিনেমাগুলও সমানভাবে সিনেমা ক্রিটিকদের প্রসংশা কুড়িয়েছে। 

হায়ফা আল মনসুর: কবি আব্দুর রহমান মনসুরের বারো সন্তানের আটতম হায়ফার জন্ম ১০ আগস্ট ১৯৭৪। বাবার আগ্রহেই হায়ফা সিনেমার প্রতি আকৃষ্ট হোন। সৌদি আরবের মতো একটা কট্টর মুসলিমপ্রধান দেশের প্রথম নারী সিনেমা নির্মাতার নাম হায়ফা আল মনসুর। শুধু কি নারী নির্মাতা হিসেবেই প্রথম? না, বরং সৌদি আরবের সিনেমা নির্মানের ইতিহাসে হায়ফার নাম সর্বাগ্রে। কারণ তিনিই যে সৌদি আরবের মাটিতে দাড়িয়ে বলেছেন অ্যাকশন আর কাট! তাই হায়ফা শুধু একজন সিনেমা নির্মাতাই নন; বরং আধুনিক সিনেমাওয়ালাদের কাছে তিনি একজন জলজ্যান্ত ইতিহাসও বটে। সৌদি আরবে একজন নারীর সিনেমা তৈরির পেশন খুব একটা সহজতো নয়ই, বরং কঠিনতর চ্যালেঞ্জের বিষয়। অথচ হায়ফা সেই কাজটিই করে দেখালেন, কায়রোর আমেরিকান ইউনিভার্সিটি থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে কাজের জন্য সৌদি ফিরে আসেন। এবং সৌদিতে এসে দেখলেন নারীদের হিডেন লাইফ,পুরুষশ্রেনির চাপিয়ে দেয়া বাধ্যবাধকতা; যা তাকে ভীষণ পিড়া দেয়। ফলে সৌদিতে নারীদের এমন জীবনাচরণের উপর ভীত্তি করেই তিনি নির্মান করতে উদ্বুদ্ধ হোন‘ওয়াদজা’। পুরো সিনেমাটা খুব কৌশলে শ্যুট করেন সৌদির রাস্তায়। কারণ সৌদিতে সিনেমা শ্যুট করা নিষিদ্ধ। এমনকি ওয়াদজা সিনেমার শ্যুটিং যেখানে হয়েছে, সেখানটায় এখনো নিষেদাজ্ঞা অপরিবর্তিত আছে। ওয়াদজা মুক্তির পরই সমস্ত দুনিয়া সচকিত হয়ে উঠে হায়ফার এমন দু:সাহসি কাজে। বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক ফিল্মফেস্টিভালগুলোদে প্রদর্শিত হতে থাকে ছবিটি। আসতে থাকে অ্যাওয়ার্ড । ৮৬তম অস্কারের সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র কোটায় পুরষ্কার জেতে হায়ফার ওয়াদজা। এবং প্রথম সিনেমা নির্মান করেই অস্কারপ্রাপ্ত দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় সৌদি আরবের নাম। 

দীপা মেহতা: ভারতীয় বংশজাত একজন কানাডিয়ান নাগরিক। তিনি ইন্দো-কানাডিয়ান চলচ্চিত্র পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার হিসেবে পরিচিত। বিতর্কিত নির্মাতা হিসেবে তার নাম উচ্চারিত হলেও তিনি তার ‘ট্রিলোজি’ নির্মানের জন্য বিখ্যাত। তার ‘ইলিমেন্টস ত্রয়ী’হচ্ছে ফায়ার-(১৯৯৬), আর্থ(১৯৯৮), ওয়াটার(২০০৫)। দীপা মেহতা তার ছবিতে নারী হৃদয়ের ক্ষতকে যেনো আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেন। বিধবা নারীর সহমরণ, বাল্যবিবাহের প্রকোপ নিয়ে তিনি সফল কিছু কাজ করেছেন সিনেমার ভেতর দিয়ে। ফায়ার সিনেমায় সমকামিতা দেখানোর জন্য হয়েছেন ব্যাপক ভাবে সমালোচিত। তার মুক্তিপ্রাপ্ত শেষ সিনেমার নাম ‘মিডনাইট চিলড্রেন’; যা বিখ্যাত লেখক সালমান রুশদির উপন্যাসের সফল চিত্রায়ন। এ বছর মুক্তি পাওয়ার কথা ‘বিবা বয়েস’। চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য আজীবন সম্মাননাসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তিনি স্বীকৃত হয়েছেন। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিএল

Wordbridge School
Link copied!