• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘পেটের জ্বালা বড় জ্বালা’


নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি মার্চ ২৮, ২০১৭, ০৮:২০ পিএম
‘পেটের জ্বালা বড় জ্বালা’

নারায়ণগঞ্জ: “স্যার ৪ ভাগা শাক আছে নিয়ে যান ৪০ টাকা রাখুমনে, শরীরটা ভালো লাগতাছেনা রোদে মাথা ঘুরাইতাছে” করুণ সুরে বললেন ৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা শাক বিক্রেতা হাজেরা বেগম।

প্রতিদিনের মত মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) সকালেও বন্দর উপজেলার বাবুপাড়া এলাকার মোড়ে বসে শাক বিক্রির সময় হাজেরা বেগম এ কথা জানান।

তার সঙ্গে আলাপ কালে তিনি আরো বলেন, “বাবারে পেটের জ্বালা বড় জ্বালা। পেট কি আর বয়স বোঝে, সে চায় শুধু সময় মত খাওন। পেটের খাবার যোগাতে মানুষ মানুষকে খুন করতেও দ্বিধা করেনা। আর আমি না হয় একটু কষ্ট করে শাক বিক্রি করি। কাজ করে খাই ভিক্ষা তো করিনা।”

এ সময় তার কাছে জানতে চাইলাম আপনার স্বামী-সন্তান নেই, এই বয়সে শাক বিক্রি করেন কেন?

অশ্রুসিক্ত নয়নে তিনি জানান, তার স্বামী ৩৩ বছর আগে মারা গেছেন। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে আছে, তারা তাদের সংসার নিয়ে বেশ আছে। ছেলে-মেয়ে কেউই তার  কোন খবর নেয় না। তাই তিনি এই বৃদ্ধ বয়সে সব থাকতেও বোনের বাড়িতে বসবাস করছেন। বন্দরের রুপালী আবাসিক এলাকায় বোনের সঙ্গে বসবাস করেন। সেখানেই তার আহার জোটে।

 কিন্তু কত দিন আর বসে বসে বোনের ঘরে বিনে পয়সায় খাবেন। থাকার জন্য যে ঠাঁই দিয়েছে তাই তো অনেক। কজনই আজ বিনা স্বর্থে মাথা গুজার জায়গা দেয় যেখানে আপন সন্তনেরা কোন খোঁজ খবর নেয়না।

তবে তিনি বোনের কাছে বোঝা হয়ে থাকতে চাননা, তাই শেষ বয়সে উপার্জন হিসেবে শাক বিক্রিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। কেননা বয়সের ভারে কোন ভারি কাজ করতে পারেননা তাই শাক বিক্রি করেন। প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দেড়শ’ টাকা রোজগার করেন। তবে মাঝে মাঝে বেশিও বিক্রি করে থাকেন বলে জানান তিনি। কিন্তু কতদিনে এভাবে চলবে তা জানা নেই।

তিনি কারো কাছে হাত পাতেন না। তাই ভিক্ষাবৃত্তির মত পেশায় নিজেকে জড়ায়নি। তিনি এ পর্যন্ত কোন বৃদ্ধ ভাতাও পাননি। কোন দানশীল মহলও তার চোখের পানি মুছতে এগিয়ে আসেনি।

দানশীল ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরাতো শুধু তাদের ইমেজ বৃদ্ধিতে ব্যস্ত। তাদের জেলার এসব খেটে খাওয়া দুখিনি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মত সময় নেই। সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়ার মত কোন ব্যক্তি কিংবা সংস্থা নেই। এই কি আমাদের সমাজ, এই কি ডিজিটাল বাংলাদেশ।

জনপ্রতিনিধিরা আজ কোথায় আছে, তাদের কাজ তো জনগণের সুখে-দুঃখে এগিয়ে আসা। তারা তো নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। সমাজের বিবেক এই সময় কোথায় থাকে। যখন দাদি-নানির বয়সী ব্যাক্তিরা পেটের জ্বালায় রাস্তায় নামে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!