• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পাঁচ বছর

পোশাক খাতের উন্নতি হলেও চ্যালেঞ্জ রয়েছে


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ২৬, ২০১৮, ১১:৫৫ পিএম
পোশাক খাতের উন্নতি হলেও চ্যালেঞ্জ রয়েছে

ঢাকা : রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর সমন্বিত উদ্যোগে তৈরি পোশাক খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে মনে করে দুর্নীতিবিরোধী জার্মানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ চ্যাপ্টার টিআইবি। তবে এ খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় এখনো ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করে সংস্থাটি। টিআইবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনাপরবর্তী সময়ে সরকার, উদ্যোক্তা ও ক্রেতাদের নেওয়া উদ্যোগের ৩৯ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। ৪১ শতাংশ উদ্যোগ বাস্তবায়নের কাজ চলছে। ২০ শতাংশ উদ্যোগের বাস্তবায়ন স্থবির অবস্থায় রয়েছে। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পাঁচ বছরপূর্তি উপলক্ষে টিআইবির তৈরি করা এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উলে­খ করা।

বৃহস্পতিবার (২৬ এপ্রিল) টিআইবির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন আয়োজক সংস্থার বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। এ সময় টিআইবির সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার ও গবেষণাটির তত্ত্বাবধায়ক মো. ওয়াহিদ আলম উপস্থিত ছিলেন। ‘তৈরি পোশাক খাতে সুশাসন : অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজমুল হুদা মিনা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মালিকপক্ষ ব্যবসা টিকিয়ে রাখার ওপর গুরুত্ব প্রদানসহ রফতানি প্রবৃদ্ধিকে প্রাধান্য দিচ্ছে। কিন্তু শ্রমিক অধিকার ও সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি পর্যাপ্ত গুরুত্ব পাচ্ছে না। সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি তৈরি পোশাক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তদারকি ও সমন্বয়ের জন্য দীর্ঘমেয়াদে একক কর্তৃপক্ষ গঠনের দাবি জানিয়েছে। সংস্থার পক্ষ থেকে আট দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।

সংবাদ সম্মেলনে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, রফতানি বৃদ্ধি ও ব্যবসা টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে মালিক পক্ষ অনেক কিছুই করছে। শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় তারা তেমন কিছুই করছে না। মালিকপক্ষের মানসিকতার কারণেই এখনো খাতটিতে সুশাসনের প্রকট ঘাটতি রয়েছে। খাতটিতে মালিকদের স্বার্থের পাশাপাশি শ্রমিকদেরও ব্যাপক স্বার্থ রয়েছে, তাই উভয় পক্ষকেই তৈরি পোশাক খাতের ওপর সুনজর দিতে হবে।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পোশাক শিল্পে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। এ খাতে অর্জিত অগ্রগতির সুফল থেকে শ্রমিকরা এখনো বঞ্চিত। শ্রম আইনে শ্রমিকদের ইউনিয়ন করার অধিকার দেওয়া হলেও নিবন্ধনপ্রাপ্ত শ্রমিক ইউনিয়ন শ্রমিকদের অধিকার কতটুকু রক্ষা করতে পারছে সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। মালিকপক্ষের নিয়ন্ত্রণে থাকা শ্রমিক ইউনিয়নগুলোই প্রাধান্য বিস্তার করছে। মুনাফা বৃদ্ধি, ব্যবসায়িক সুবিধা বজায় রাখা ও বিকাশ ঘটানোর দিকেই মালিকদের প্রাধান্য দিতে দেখা যায়।

রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের এখনো যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন ইফতেখারুজ্জামান। বিষয়টিকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলেও মনে করেন তিনি। এ বিষয়ে সরকার, মালিকপক্ষ এবং ক্রেতাদের ব্যর্থতা রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে হলে অবশ্যই তৈরি পোশাক খাতে কর্মপরিবেশের উন্নতি করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৭ সালের মে থেকে ২০১৮ সালের মার্চের মধ্যে গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পরবর্তী পাঁচ বছরে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সমন্বিত উদ্যোগের ফলে কারখানা নিরাপত্তা, তদারকি, শ্রমিকের মজুরি, সরকারি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার ক্ষেত্রে বেশকিছু অগ্রগতি লক্ষণীয়। তবে শ্রমিক অধিকার নিশ্চিতে আইনি সীমাবদ্ধতা এবং যৌথ দরকষাকষির পরিবেশ সৃষ্টিতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি রয়েছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর পোশাক খাতের সংস্কারের জন্য নেওয়া ১০২ উদ্যোগের মধ্যে ৪০টির বাস্তবায়ন কাজ শেষ হয়েছে। ৪২টি উদ্যোগের কাজ এখনো চলমান। অন্য ২০ উদ্যোগের বাস্তবায়ন কাজ চলছে খুবই ধীরগতিতে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ উঠে এসেছে গবেষণায়। পোশাক খাতের বিভিন্ন দুর্ঘটনার মামলায় শুনানির তারিখ পরিবর্তনের মাধ্যমে দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনে। শীর্ষ ১০০ ঋণখেলাপির তালিকায় ২৬টি প্রতিষ্ঠানই তৈরি পোশাক খাতভুক্ত। ৩২ শতাংশ পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্যোগের আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বিভিন্ন কারণে প্রায় ১ হাজার ২০০ পোশাক কারখানা বন্ধ হয়েছে। ফলে প্রায় ৪ লাখ শ্রমিক চাকরিচ্যুত হয়েছেন। এ ছাড়া আরসিসির সক্ষমতা নিরূপণের জন্য সমন্বিত পরিবীক্ষণ ব্যবস্থায় মালিকপক্ষের সংযুক্তিকরণ এবং নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ না রাখার ফলে মালিকপক্ষের অনৈতিক প্রভাব বিস্তারের ঝুঁকি রয়েছে।

গবেষণায় অধিকাংশ ছোট ও সাব-কন্ট্রাক্ট কারখানাগুলোয় ন্যূনতম মজুরি প্রদান না করা, ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির পর উৎপাদনের অতিরিক্ত টার্গেট নির্ধারণ, নিয়ম বহির্ভূতভাবে মজুরি কর্তন, অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা ২ ঘণ্টার পরিবর্তে ৪ ঘণ্টা করা, অনেক ক্ষেত্রে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টার অতিরিক্ত কর্মঘণ্টায় শ্রমিকদের কাজ করানো ইত্যাদি অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে পোশাক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কেন্দ্রীভূত তদারকি ও সমন্বয়ের জন্য দীর্ঘমেয়াদে একক কর্তৃপক্ষ গঠনের দাবি জানিয়েছে টিআইবি। এর পাশাপাশি ন্যূনতম মজুরি ও সংগঠন করার অধিকার, আইনে প্রাপ্য শ্রমিক অধিকার নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সমন্বিত উদ্যোগ, সাব-কন্ট্রাক্ট ও ক্ষুদ্র কারখানার কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতে বিভিন্ন অংশীজনের অংশগ্রহণে একটি তহবিল গঠন, বিভিন্ন দুর্ঘটনায় মামলার দ্রুত বিচার এবং শ্রম আদালতগুলোকে ট্রাইব্যুনালে রূপান্তরিত করার মাধ্যমে মামলায় গতি আনার দাবি জানানো হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!