• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচণ্ড গরম ও লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ২২, ২০১৭, ১০:০৫ এএম
প্রচণ্ড গরম ও লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন

ঢাকা : রাজধানীসহ সারাদেশে প্রচণ্ড গরমের সঙ্গে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ব্যাহত হওয়া ছাড়াও অফিস আদালতে কাজকর্ম স্থবির হয়ে পড়েছে। হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ছে। শিশু-বৃদ্ধরা আক্রান্ত হচ্ছে নানা জটিল অসুখে।

দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে তাপপ্রবাহে নাভিশ্বাস অবস্থা। প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। এরই মধ্যে শহর ও গ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। এই বাড়তি চাহিদা পুরণ করতে পারছে না বিতরণ কোম্পানিগুলো। তাই শুরু হয়ে গেছে লোডশেডিংও।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত সপ্তাহে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি সপ্তাহে সে তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে। গতকাল রবিবার (২১ মে) যশোরে দেশের সর্বোচ্চ ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘গত শনিবার থেকে এই তাপপ্রবাহের কারণে অস্বস্তিকর গরম অনুভূত হচ্ছে। চলমান তাপপ্রবাহ আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি অন্যত্র ঝড়ো আবহাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে।’

আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাস অনুযায়ী, মে মাসে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এক থেকে দুটি তীব্র এবং অন্যত্র দুই থেকে তিনটি মৃদু বা মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

এদিকে ঢাকায় গত তিন দিন ধরে বৃষ্টির দেখা নেই। গত শনিবার ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অনেকেই রাতে গরমে ঘুমাতে পারছেন না। ফ্যানের বাতাসেও স্বস্তি আসছে না। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা। শ্রমজীবী মানুষের কষ্টটাও অন্যদের চেয়ে বেশি।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, ১৯৭২ সালের মে মাসের শেষে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর ১৯৯৫ সালের এপ্রিলে ৪৩ ডিগ্রি, ২০০৯ সালের এপ্রিলে ছিল ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বশেষ গত বছর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৫ ডিগ্রি সেলসিলাস। চলতি বছর এই তাপমাত্রা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা।

এদিকে গরমের কারণে বেড়ে গেছে বিদ্যুতের চাহিদা। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে না পারার কারণে রাজধানীর বেশকিছু এলাকায় শুরু হয়েছে লোডশেডিং। বাসাবোর বাসিন্দা নাজনিন আক্তার জানান, গত কয়েক দিন ধরেই সন্ধ্যার দিকে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। আসছে প্রায় এক ঘণ্টা পর। এই ঘটনা একবার নয়। সন্ধ্যার পর কয়েকবার আধা ঘণ্টা করেও বিদ্যুৎ চলে গিয়েছে। দীর্ঘদিন এ ধরনের বিদ্যুৎ বিভ্রাট না হওয়ার কারণে ভোগান্তি বেশি হচ্ছে।

মধুবাগের বাসিন্দা রাজন জানান, গত কয়েক দিনে প্রায় প্রতিদিনই একবার করে লোডশেডিং হচ্ছে। শীতের সময় এই সমস্যা না হলেও গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে এবার এই সমস্যা শুরু হয়ে গেল। পুরো গ্রীষ্মকাল তো এখনো পড়েই আছে। শান্তিনগর থেকে আজিজুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার থেকেই এই সমস্যা বেশি হচ্ছে। শুক্রবার দিনের বেলায় বেশ কয়েকবার বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিল। শনিবার, রোববার এমনকি আজ সোমবারও লোডশেডিং হয়েছে। তবে প্রতিবার এক ঘণ্টা করে নয়, কখনো কখনো আধা ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ ছিল না।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা ১২ হাজার ৩শ’ মেগাওয়াট। চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে পিক আওয়ারে সাড়ে ৮ হাজার মেগাওয়াটের উপরে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু, উৎপাদন হচ্ছে অনেক কম। গ্রীষ্ম মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ব্যাপক লোডশেডিং শুরু হয়। দিনে রাতে মিলে কোনো কোনো দিন ঢাকায় ৩-৪ বার বিদ্যুৎ যাওয়া আসা করছে। গত কয়েক দিন ধরে এ মাত্রা আরও বেড়েছে। দিনের বেলা তো বটেই মধ্যরাতেও লোডশেডিংয়ের কবলে নগরজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

এদিকে সোনালীনিউজ-এর আঞ্চলিক প্রতিনিধিরা জানান, বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। ফুঁসে উঠেছে সর্বস্তরের মানুষ। বিদ্যুৎনির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে গ্রাহকরা।

রাজশাহী: তীব্র গরম আর বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন রাজশাহীবাসী। এই গরমে বিদ্যুতে লোডশেডিংয়ে শিশু কিশোর থেকে শুরু করে বয়:বৃদ্ধ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বিদ্যুৎ না থাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়া করার ক্ষেত্রে মারাত্বক ব্যাঘাত ঘটছে। বিদ্যুৎ কিছু সময়ের জন্য দেয়া হলেও দীর্ঘ সময় বিদ্যুতের লোডশেডিং চলে। ঘন ঘন বিদ্যুতের লোডশেডিং আর ভ্যাপসা গরম। বৃষ্টি না হওয়ায় রাজশাহীর আবহাওয়া আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। তীব্র গরম আর লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। বেশি সমস্যার মধ্যে পড়েছেন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষগুলো।

নগরীর টিকাপাড়ার এক বাসিন্দা বলেন, শনিবার ব্যাপক লোডশেডিং হয়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় বেশকয়েকবার লোডশেডিং হয়েছে। তিনি আরো বলেন, রাজশাহীতে বিদ্যুতের যে অবস্থা দেখছি এতো ঘনঘন লোডশেডিং আর সয্য করা যাচ্ছেনা ।

এ বিষয়ে রাজশাহী পিডিবির তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, রমজান মাসে যাতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায় সে জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিছু প্লান্টের কাজ চলছে তাই বিদ্যুতের কিছু লোডশেডিং হচ্ছে।

খুলনা : খুলনা ও সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় বিদ্যুতের আসা-যাওয়া আপাতত বন্ধ হচ্ছে না। কোন সুখবর নেই বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে। স্থানীয় উৎপাদন এবং ভারত থেকে আমদানি করেও চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। এর একটি বড় অংশ জাতীয় গ্রীডে চলে যাওয়ার কারণেই মূলত এ অঞ্চলে বিদ্যুৎ ঘাটতি হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে, জ্যৈষ্ঠের প্রচন্ড তাপদাহের মধ্যে বিদ্যুতের লুকোচুরি খেলায় জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ব্যাপক লোডশেডিং’র মধ্যে আবারও জরুরি লাইন সংরক্ষণ কাজের জন্য বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হচ্ছে। যা এ অঞ্চলবাসীর কাছে ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

ভৈরবে মেঘনা নদীর ওপর ঘোড়াশাল-ঈশ্বরদি সঞ্চালন লাইনের রিভার ক্রসিং টাওয়ার ভেঙ্গে পড়ার কারণে যেমন জাতীয় গ্রীড থেকে চাহিদামাফিক বিদ্যুৎ আনতে না আনতে পারায় লোডশেডিং হচ্ছে তেমনি জাতীয় গ্রীডে এ অঞ্চল থেকে বিদ্যুৎ নেয়াটাও লোডশেডিংয়ের আর একটি কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা উল্লেখ করেছেন।

এছাড়া আগামী মাহে রমজানকে সামনে রেখে খুলনার তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে চলছে ওভারহোলিং। এর ফলেও চাহিদামাফিক বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না। আর খুলনার মূল শহরে লোডশেডিংয়ের অন্যতম কারণ হচ্ছে একটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে অফিসিয়ালী বিদ্যুৎ সরবরাহ না করা।

বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রমজানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বর্তমানে কিছুটা সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। আর ঠিক এমন সময় প্রচন্ড গরমের কারণে বৈদ্যুতিক চাহিদা বেড়ে গেছে। একদিকে চাহিদা বেড়ে যাওয়া অপরদিকে উৎপাদন কমে যাওয়া এবং রিভার ক্রসিং টাওয়ার ভেঙ্গে যাওয়া এসব নানা কারণে লোডশেডিং চলছে ভয়াবহ আকারে। খুলনা রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট, ভেড়ামারার একটি এবং ভোলার একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বর্তমানে ওভারহোলিং চলছে উল্লেখ করে ওজোপাডিকোর একটি সূত্র জানায়, আগামী ২৪ মে থেকে এ তিনটি কেন্দ্র চালু হতে পারে। সুতরাং ২৪ মে’র আগে লোডশেডিং কমার সম্ভাবনা নেই বলেও সূত্রটি উল্লেখ করছে।

অবশ্য শুক্রবার পিক আওয়ারে খুলনায় বিদ্যুৎ দেয়ার পরিবর্তে আন্তঃসংযোগের মাধ্যমে জাতীয় গ্রীডে ২৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নেয়া হয় উল্লেখ করে ওজোপাডিকোর কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সূত্রটি জানায়, এজন্য শুক্রবার পিক আওয়ারে পদ্মার এপারের একুশ জেলায় ৪৪৮ মেগাওয়াট লোডশেডিং ছিল। মোট ১৩৩৮.৮ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে গতকাল পিক আওয়ারে সরবরাহ হয় ৯০০ মেগাওয়াট।

কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ): জ্যৈষ্ঠের ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে মানুষ। এর পরও আবার লোডশেডিং। স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ অফিস থেকে মাইকে দৈনিক ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছে। তারপরও ঘণ্টায় ১০-১৫ বার বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করছে। এতে দিন দিন ফুঁসে উঠছে উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ। চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন উপজেলার প্রায় ৩ লাখ মানুষ। রাতের বেলা একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারছেন না। শিক্ষার্থীরা রাতের বেলা ঠিকমতো লেখাপড়া করতে পারছে না। উপজেলা সদরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে ওঠা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প-কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসা, ব্যাংকিং সেবা, শিক্ষা ও গৃহস্থালির কাজকর্ম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুৎনির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে চরম স্থবিরতা।

সন্ধ্যার পর পরই উপজেলা সদরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাট-বাজার জনশূন্য হয়ে পড়ছে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে টেলিভিশন, ফ্রিজ, মোটর, কম্পিউটার, বাল্পসহ যান্ত্রিক ও ইলেকট্রিক সামগ্রী নষ্ট হচ্ছে। বিদ্যুতের অভাবে রাতে চার্জ দিতে না পারায় উপজেলার অসংখ্য ইজিবাইক চালকরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। কাশিয়ানী জোনাল অফিসের ডিজিএম আবু বক্কর সিদ্দিকী বলেন, ‘বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে লোডশেডিং হচ্ছে। দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।’

বরগুনা: ঘন ঘন লোডশেডিং হওয়ায় বরগুনার মানুষ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পরিবেশ আন্দোলনের উদ্যোগে নিয়মিত বিদ্যুতের দাবিতে শুক্রবার রাতে বিক্ষোভ মিশিল ও বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও করা হয়। এ সময় বক্তব্য রাখেন সুখরঞ্জন শীল, মুশফিক আরিফ প্রমুখ।

ওসমানীনগর (সিলেট): ওসমানীনগর উপজেলায় বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে টানা ২৩ ঘণ্টা অন্ধকারে ছিল উপজেলাবাসী। শুক্রবার ভোর ৪টার দিকে হঠাৎ করে বিদ্যুৎ বিপর্যয় শুরু হলে ২৩ ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ আসে। গ্রাহকরা অভিযোগ করে বলেন, বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা ঝড়-তুফান ছাড়াই বৃষ্টি আর হালকা বাতাস হলেই বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে জনজীবনে অসহনীয় ভোগান্তি দেখা দিয়েছে। আর বাসাবাড়িতে পানির সংকট, রেফ্রিজারেশনে রাখা নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার পচে নষ্ট হয়ে যায়। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় ব্যবসায়ীদের আর্থিক লোকসান গুনতে হচ্ছে।

বিপাকে পড়েছেন ব্যাংকসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও। কয়েকজন গ্রাহক অভিযোগ করে বলেন, সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর কাশিকাপন জোনাল অফিসের মোবাইল নম্বরে কল দিলেও কল রিসিভ হয় না, মোবাইল বন্ধ থাকার অভিযোগ রয়েছে। কাশিকাপন জোনাল অফিসের ডিজিএম জহিরুল ইসলাম বলেন, সঞ্চালন লাইনে ত্রুটি থাকায় সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় তা মেরামত করার জন্য দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ ছিল।

আমতলী: ভ্যাপসা গরমের পাশাপাশি ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিভ্রাটে আমতলীর জনজীবনে বিপর্যস্ত অবস্থা নেমে এসেছে। প্রতিদিন গড়ে ৬-৭ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের নাম করে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় গ্রাহকরা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা ক্রমশ ফুঁসে উঠছে। শহর এলাকায় মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ যাওয়া-আসার মধ্যে রয়েছে। তারা তিন-চার ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না। বিদ্যুৎ না থাকায় প্রচ­ ভ্যাপসা গরমে শিশুসহ নারী ও বয়স্ক মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে। ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কারণে বিদ্যুৎনির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্য এখন বন্ধের উপক্রম হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পল্লী বিদ্যুৎ সমতির প্রকৌশলী বিশ্বাস জামাল হোসেন জানান, জাতীয় গ্রিডে সমস্যা, আমাদের করার কিছু নেই।

বরিশাল: তীব্র তাপদাহে ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছে বরিশালের জনজীবন। বিচ্ছিন্নভাবে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হলেও ভ্যাপসা গরম কিছুতেই কমছে না। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং। ফলে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে নাজুক হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক কাজকর্ম। দিনে যেমন রোদের খড়তাপ তেমনি রাতে বইছে গরম হাওয়া।

জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরে অফিসগামী মানুষ, শ্রমিক, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী এবং অল্প বয়সের শিশুরা গরম ও তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। হাসপাতালগুলোতে বৃদ্ধি পেয়েছে গরমে অসুস্থ হয়ে পড়া রোগীর সংখ্যা।

ইন্টারনেট সংযোগেও দেখা দিয়েছে বিভ্রাট। ফলে সংবাদকর্মীদের সংবাদ পাঠাতে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। আসছে রমজান মাসের ইফতার-তারাবি ও সেহরির সময় লোডশেডিং না দিয়ে সর্বত্র নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বরিশালবাসী প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

কাউখালী (পিরোজপুর): বিদ্যুত্ বিভ্রাটের প্রতিবাদে হারিকেন ও হাতপাখা হাতে শনিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১১টা পর্যন্ত পিরোজপুরের কাউখালী উত্তর বাজার সড়কে পুরাতন রাজস্ব অফিসের সামনে মানববন্ধন করেন গ্রাহকেরা।  উপজেলা উন্নয়ন পরিষদের উদ্যোগে নিয়মিত বিদ্যুতের ঘনঘন লোডশেডিং এর প্রতিবাদে ও পিরোজপুরের পল্লী বিদ্যুতের অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে হাতপাখা ও হারিকেন হাতে নিয়ে সর্বস্তরের জনগণ ঘণ্টাব্যাপী এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরে উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি আ. লতিফ খসরুর সভাপতিত্বে মানববন্ধন সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- উত্তর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. রেজাউল করিম রতন, ব্যবসায়ী আবু মো. ফরিদ, প্রভাষক মো. নজরুল ইসলাম বাবু, অরুণ কর্মকার প্রমুখ। এছাড়া মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন- কাউখালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সংস্কৃতিজন সুব্রত রায়।

রায়পুর (লক্ষীপুর): গত এক মাস ধরে মাঝারি ও ভারি বাতাস এবং বৃষ্টি শুরু হলেই রায়পুর উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এ রকম বাতাস ও বৃষ্টিতে ১০ থেকে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকার নজির রয়েছে শুধু পৌর শহরে। এতে গ্রাহকরা সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন। গত বুধবার রাত ১০টার দিকে মাঝারি বাতাস ও বৃষ্টি শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। শনিবার বেলা ১১টার দিকে শুধু পৌর শহরের বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া হয়েছে। এর আগেই আরও পাঁচদিন এর চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা দেখা দিয়েছে।

রায়পুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সুদাস চন্দ্র রক্ষিত বলেন, রায়পুরে ৯০ শতাংশ বিদ্যুত্ লাইন সুপারি বাগান, পানি ও গাছপালার ভেতর দিয়ে নির্মিত। এজন্য ঝড়ো হাওয়া বা বৃষ্টি হলে নিরাপত্তার কারণেই লাইন বন্ধ করতে হয়। তবে বড় কোনো কারণ ছাড়া দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকার অভিযোগ সঠিক নয়।

দুমকি (পটুয়াখালী): দুমকি উপজেলার চৌদ্দ হাজার পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহক ব্যাপক লোড শেডিংয়ের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে। ব্যাপক লোড শেডিংয়ে বিভিন্ন অফিস-আদালতে সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না। শিক্ষার্থীদের পড়াশুনায় ব্যাঘাত ঘটছে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে ছয় ঘন্টাও বিদ্যুৎ থাকছে না। বেশিরভাগ সময়ে রাতে দুই ঘন্টাও বিদ্যুৎ পাচ্ছে না ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। দুমকিতে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত হলেও ব্যাপক বিদ্যুৎ ঘাটতির জন্য কর্তৃপক্ষ জেনারেটরের মাধ্যমে অফিসিয়াল কাজ-কর্ম করছে।

অন্যান্য অফিসের কাজে ব্যাঘাত ঘটছে বলে জানা গেছে। এ বিষয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, বিদ্যুতের চাহিদা ৪০ মেগাওয়াট থাকলেও  পিক আওয়ারে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে ২০ মেগাওয়াটের কম। এ সমস্যা তিনমাস এভাবে থাকবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

 

Wordbridge School
Link copied!