• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচন্ড গরমে ঝালকাঠিতে ডায়রিয়ার প্রকোপ, স্যালাইন সংকট


ঝালকাঠি সংবাদদাতা মে ২৪, ২০১৭, ০১:৩৭ পিএম
প্রচন্ড গরমে ঝালকাঠিতে ডায়রিয়ার প্রকোপ, স্যালাইন সংকট

ঝালকাঠি : তীব্র তাপদাহে ঝালকাঠিতে ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সপ্তাহ খানেক যাবত প্রতিদিন গড়ে ২০/২২ জন করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে।

এছাড়াও জেলার চার উপজেলায় ইনডোর এবং আউটডোরে ৫ শতাধিক রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। আক্রান্তদের বেশির ভাগই শিশু ও বয়স্ক নারী। আইভি (শিরায় দেওয়ার) স্যালাইন ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে সংকট এবং অন্যান্য সরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত না থাকায় বাড়তি ঝামেলায় পড়েছেন রোগীরা।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ১ এপ্রিল থেকে ২২ মে পর্যন্ত ২৪০ জন, ১০ মে থেকে তাপদাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে।  ২২ মে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২২ জন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। নলছিটি, রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ৭ দিনে ৩ শতাধিক ব্যক্তি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়াও আউটডোর এবং আরো দু’শত লোকের বেশি চিকিৎসা নিয়েছে।

রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, সদর হাসপাতালে আইভি স্যালাইন সংকট থাকায় আমাদের সবকিছুই বাহির থেকে কিনতে হচ্ছে। আমরা এখান থেকে কোন ঔষধ বিনামূল্যে পাচ্ছি না। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে পর্যাপ্ত আইভি স্যালাইন নেই। সংকট আছে ডায়রিয়ার জন্য দরকারি অন্যান্য ওষুধপত্রেরও। এমনকি শিশুদের স্যালাইন দেওয়ার ‘ক্যানোলা’ও বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ। বলা হচ্ছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেবল খাবার স্যালাইনই বিতরণ করছে।

ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি পূর্বচাঁদকাঠি গাজীবাড়ি এলাকার ৫ সন্তানের জননী খাদিজা বেগম জানান, রোববার রাতে অসুস্থ হবার পরে স্বামী আব্দুল মান্নান হাওলাদার হাসপাতালে নিয়ে আসে। হাসপাতালের ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ, ডাক্তার আসেই না, ওষুধ পাই নাসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেন। কৃষ্ণকাঠি এলাকার কবিরাজ বাড়ি রোড এলাকার অটোচালক সবুর হোসেন জানান, মেয়ে নিয়ে রাতে আসছি। এখান থেকে কোন ওষুধ দেয় নাই। বাহির থেকে ৪০০ টাকার ঔষধ কিনে এনেছি। ডায়রিয়ার স্যালাইন যদি বাইরে থেকে কিনতে হয়, তাহলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দরকার কী?’

নলছিটি উপজেলার প্রতাপ এলাকার আলমগীর হোসেন জানান, আমার মা বুধবার রাত থেকে পাতলা পায়খানা শুরু হয়। বৃহস্পতিবার সকালে তাকে এখানে নিয়ে আসলে এখন পর্যন্ত কোন চিকিৎসক দেখতে আসেন নি। কিন্তু এখানে দায়িত্ব পালনকারী নার্সরা পর্যাপ্ত ঔষধ না থাকায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে, তারপরেও তারা দায়িত্বে অবহেলা করছেন না। শহরতলীর কৃষ্ণকাঠি এলাকার আয়শা তার ৮ মাস বয়সী কন্যা জিন্নাতকে নিয়ে আসে হাসপাতালে। তারও অভিযোগ স্যালাইন সংকট ও চিকিৎসক না আসা।  

এছাড়াও ৩ দিন পূর্বে ৬ মাস বয়সী শিশু সাব্বির আহমেদকে নিয়ে আসে তার মা খাদিজা বেগম। তিনি জানালেন নোংরা পরিবেশ, চিকিৎসক না আসা, ওষুধ না পাওয়া, বিদুৎ না থাকাসহ নানান সংকটের কথা।

কর্তব্যরত সেবিকা প্রণতি মৃধা জানান, মে মাসের শুরু থেকেই ডায়রিয়ার রোগী আসছে। তবে কয়েকদিন ধরে এতোবেশি রোগী আসছে যা প্রতিদিন গড়ে ২০/২২ জন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। আইভি স্যালাইন সংকট থাকায় প্রত্যেক রোগী ভর্তি হবার পরে একটি করে দেয়া হয়। এরপর বাড়তি লাগলে কিনতে হয়। খাবার স্যালাইন পর্যাপ্ত পরিমাণ আছে। চিকিৎসক সংকট থাকায় গুরুতর রোগী হলে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক এসে দেখে যান।

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ বদরুদ্দোজা মোঃ জোবায়ের বলেন, ‘প্রচন্ড গরমে ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের চাপ বেড়েছে। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে, বিশুদ্ধ পানি পান এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে ডায়রিয়া থেকে বাঁচা যায়। প্রাথমিকভাবে পাতলা পায়খানা শুরু হলে বিশুদ্ধ পানি, ডাবের পানি, তরল খাবার, ভাতের মাড়, স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। বেশি অসুস্থ হলে হাসপাতালে এসে ভর্তি হতে হবে।’

 ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. শ্যামল কৃষ্ণ হালদার বলেন, ‘আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে তাপদাহের এই সময়ে ডায়রিয়ার রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি মাসে ২৪০ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। গত ১ সপ্তাহের মধ্যে রোগীর চাপ অনেক বেড়েছে। আইভি স্যালাইন সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাছাড়া চিকিৎসক সংকট বরাবরই রয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!