• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর সামনেই আইভী-শামীমের বাহাস!


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ২৩, ২০১৬, ০৫:০৭ পিএম
প্রধানমন্ত্রীর সামনেই আইভী-শামীমের বাহাস!

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনেই একে অপরের প্রতি কটুবাক্য ও অভিযোগের তীর ছুঁড়েছেন নারায়ণগঞ্জের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে এ ঘটনা ঘটে।

আসন্ন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচন ও শামীম-আইভীর মধ্যে চলা বিভেদ নিরসনে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তাদের গণভবনে ডেকে পাঠান। মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) রাতে গণভবনে বৈঠকের সময় একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীর সামনে। 

তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে একে অপরের প্রতি আঙুল উঁচিয়েও কথা বলেন। তাদের এই আচরণে বিরক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও নারায়ণগঞ্জের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব কথা জানা গেছে।

গণভবনে এক ঘণ্টারও বেশি সময় চলে এই বৈঠক। বৈঠকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও নারায়ণগঞ্জে প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সদস্য শামীম ওসমান মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ আনেন। 

তবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে পরস্পর কাঁদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করে সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে কাজ করতে সংসদ সদস্য শামীম ওসমানসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

সূত্র জানায়, অভিযোগ আনেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের নেতারাও। অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ ও আইভীর যুক্তি খণ্ডনের মধ্যে বৈঠকের এক পর্যায়ে আইভী-শামীম দুজনই উত্তেজিত হয়ে পড়েন। 

শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে শামীম ওসমান বলেন, নেত্রী আইভী আপনার বিরুদ্ধে, আমার বিরুদ্ধে, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কথা বলে। তাকে মনোনয়ন দেয়া এবং তার পক্ষে নারায়ণগঞ্জের নেতাকর্মীদের নির্বাচনী কাজে নামানো কঠিন হয়ে পড়বে।

শামীম ওসমানের এমন অভিযোগের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বিরুদ্ধে কথা বললে সেটা আমি দেখব। তাছাড়া আইভী আমার বিরুদ্ধে, তোমার বিরুদ্ধে, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কথা বলে এসব আমি এই মুহূর্তে শুনতে চাই না।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ আইভীকে মনোনয়ন দিয়েছে আইভীর পক্ষে তোমাদের কাজ করতে হবে, এর বাইরে আর কোনও কথা আমি শুনবো না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফুটবল খেলায় গোল দিতে হলে স্ট্রাইকার লাগে। আমি খোঁজখবর নিয়েছি, নারায়ণগঞ্জে সেই স্ট্রাইকার হলো আইভী। এ জন্যই আইভীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

আইভীর বিরুদ্ধে কড়া অভিযোগ আনেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনও। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আইভী আমার বিরুদ্ধে কথা বললে সেটা আমি দেখবো। তোমরা কাঁদা ছোড়াছোড়ি না করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে এবং নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করবে এটাই আমি চাই।

আনোয়ার হোসেন বলেন, নেত্রী আমি আর নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করতে চাই না। আমি পদত্যাগ করতে চাই। আমাকে অনুমতি দিন। আমি বিদায় নিতে চাই। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, রিজাইন লেটার দাও। তারপর বিদায় দিয়ে দেব।

শামীম ওসমানসহ নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ একের পর এক আইভীকে দোষারোপ করে বক্তব্য রাখলে এবং শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আইভী কথা বলেছেন, এমন অভিযোগ আনলে আইভী তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে আইভী বলেন, ‘নেত্রী আমি আপনার বিরুদ্ধে কখনই কোনো কথা বলিনি। আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট।’

আইভী বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে একটি শ্রমিক সমাবেশে বক্তব্যে আমি বলেছি, জয় বাংলা শুধু আওয়ামী লীগের শ্লোগান নয়। জয় বাংলা বাঙালির শ্লোগান। আমি বলেছি, ওসমান পরিবার নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগকে কুক্ষিগত করতে চায়।’ 

এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, সত্যিই তো জয় বাংলা বাঙালির শ্লোগান। আইভী বলেন, ‘আমি নারায়ণগঞ্জে ত্বকী হত্যার প্রতিবাদ করেছি। আমি তখন শামীম ওসমানের পক্ষ নেইনি, এটাই আমার অপরাধ।’

আইভীর বিরুদ্ধে একে পর এক অভিযোগ আনতে থাকলে তিনি শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ঠিক আছে আপা মনোনয়ন আনোয়ার ভাইকে দেন। আমি নির্বাচন করবো না।’

বৈঠক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যখন আইভীর পক্ষে কাজ করতে সবাইকে নির্দেশ দেন তখন শামীম ওসমানসহ নারায়ণগঞ্জের নেতাকর্মীরা নৌকার পক্ষে কাজ করার অঙ্গীকার করেন। 

তখন শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে শামীম ওসমান বলেন, ‘আপা আমরা আপনার ছায়াতলে থাকতে চাই।’ জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগে আইভীকে বিজয়ী করে আনো তখন ছায়াতলে থাকবা।’

গণভবনে হাজির: বরফ গলবে এবার!

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!