• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রযুক্তির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে বুক ক্যাফে (ভিডিও)


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২১, ২০১৮, ০৮:৫৯ পিএম
প্রযুক্তির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে বুক ক্যাফে (ভিডিও)

ঢাকা: প্রযুক্তির আধুনিকায়ন আর যান্ত্রিকতার কোলাহলে বই পড়ার অভ্যাস বা সুযোগটি যেন হারিয়ে ফেলছে নগরবাসী। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম বই পড়ার অভ্যাস যেনো ভুলতে বসেছে। 

তাই বই পড়ার অভ্যাস ও বই সংগ্রহকে আরও আধুনিক ও সহজ করতে ঢাকায় গড়ে উঠেছে কয়েকটি বুক ক্যাফে। রাজধানীর শাহবাগ জাদুঘরের পাশে পাঠক সমাবেশের পর এ্যালিফ্যান্ট রোডে যাত্রা শুরু করেছে দীপনপুর। জাগৃতি প্রকাশনীর কর্ণধার দীপনের স্মৃতিকে ধরে রাখাতেই তার স্ত্রী রাজিয়া রহমান জলির উদ্যোগে দীপনপুরের যাত্রা। এরপর এসেছে বেঙ্গলবুক ও বাতিঘর। 

যেখানে এক ছাদের নীচেই পাঠক পেয়ে যাচ্ছেন মনকাড়া পরিবেশে বই পড়ার সব উপকরণ। আর মাঝে মাঝে লেখক-পাঠক আড্ডা। এছাড়া যখন পাঠকের মাঝে ক্লান্তি চলে আসবে তখন তা দূর করতে চা কিম্বা কফি বা হালকা নাস্তার সেরে নেয়ার ব্যবস্থাও আছে বুকক্যাফেতে। 

এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, মানুষ চিন্তাশীল প্রাণী। যদিও সবাই সমান চিন্তা করে না। মানুষ নিজের উন্নতির জন্য এই চিন্তাকে কাজে লাগিয়ে সমাজ, সংসার ও রাষ্ট্রে নিজেকে নিয়োজিত করে। চিন্তা না করে, কাজ না করে মানুষ চলতে পারবে না। মানুষ অন্য প্রাণীদের থেকে আলাদা। আর এই জায়গা থেকেই বইয়ের প্রচলন।
 
তিনি বলেন, সবাক ও নির্বাক চলচ্চিত্র, রেডিও টেলিভিশন আবিষ্কৃত হওয়ার পর এগুলো মানুষের চিন্তার জগৎ ও বইয়ের জগতে প্রভাব বিস্তার করেছে। বলা যায় ক্ষতিগ্রস্তও করেছে। গত ২৫ থেকে ৩০ বছরে  অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর প্রতি প্রথমে তরুণরা আকৃষ্ট হলেও পরবর্তীতে সব বয়সী মানুষই ঝুকেছে। এজন্য মানুষ এখন অনেকটাই বই থেকে সরে গেছে। 

আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, অনলাইন এক্টিভিটিস অনেক বিষয়েই উপকারে আসছে। কিন্তু এর ভেতর খারপ দিকগুলোও মানুষকে প্রভাবিত করে বিপদগামী করছে। মানুষ এর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে খুন খারাপী পর্যন্ত করছে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে বই হলো অনেক বড় অবলম্বন। আর সে লক্ষেই দীপনপুর তৈরি করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, দীপনের মৃতু্যর পর জাগৃতির দায়িত্ব তুলে নেয় তার স্ত্রী রাজিয়া রহমান জলি। তাকে এই কাছে উৎসাহ ও সহযোগিতা করে যাচ্ছি। এক পর্যায়ে সে দীপনপুর করার উদ্যোগ নেই। তবে দীপনপুরের সাথে জাগৃতিও আছে। এখানে বিশেষভাবে চিন্তাভিত্তিক জ্ঞানমূলক বই রাখা হয়েছে। বইয়ের যে দুটি ধারা বিনোদন ও চিন্তামূলক, এ দুই ধারার বই আছে  দীপনপুরে। তবে চিন্তামূলক বইয়ের প্রতি দীপনপুর বেশি গুরুত্ব দেয়।

জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনে বুকক্যাফে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন লেখকরাও। তারা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। 

বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক সালাম আজাদ বলেন- ইন্টারনেট, ফেসবুক বইয়ের জায়গা দখল করছে একথা ঠিক। তবে সুস্থ সমাজের চিন্তা করতে হলে বইয়ের বিকল্প নেই। বর্তমান তরুণ সমাজ জ্ঞানে বিজ্ঞানে অনেক এগিয়ে আছে। তাদের চিন্তা ও বিচক্ষণতাও রয়েছে। এই তরুণদের থেকে বহু লেখকের অনেক শেখা ও জানার আছে। বুকক্যাফের যে সংস্কৃতি এখন ঢাকায় শুরু হয়েছে এটি খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। বিশ্বের অনেক দেশে এরকম বুকক্যাফে আছে। এধরনের উদ্যোগে স্বাভাবিকভাবেই নতুন নতুন পাঠকের সৃষ্টি হবে এবং তরুণরা নেট সংস্কৃতির সাথে এই বইয়ের জগতকেও ভালোবাসবে।

ঢাকায় প্রথম বুক ক্যাফের উদ্যোক্তা, পাঠক সমাবেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাহিদুল ইসলাম বিজু জানান, পাঠক আগের চেয়ে কমে যাচ্ছে তা বলা যাবে না। পাঠক বাড়ছে। তবে এটি ঠিক যে তরঙ্গের এই যুগে মানুষ কিছুটা সময়ের জন্য হলেও ইন্টারনেট দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত হচ্ছে। তবে তার মানুষিক প্রশান্তির জন্য শেষে বইকেই খুঁজে নিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, যারা চিন্তাশীল তারা বই ছেড়ে কখনই যাবে না।

সোনালীনিউজ/জেএ

Wordbridge School
Link copied!