• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাণ দিয়ে প্রমাণ দিলেন তারা!


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ১৪, ২০১৭, ০১:৫৫ পিএম
প্রাণ দিয়ে প্রমাণ দিলেন তারা!

ফাইল ছবি

ঢাকা: প্রবল বর্ষণ ও ঝড়ে জনজীবন বিচ্ছিন্ন হয়েছে পড়েছে পাহাড়ি তিন জেলা চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও বান্দববানের। পাহাড়ধসে রাস্তাঘাট ও বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। পাহাড়ধসে সর্বশেষ খবর অনুযায়ী ১৩৭জনের প্রাণহানি ঘটেছে; যার মধ্যে ২ সেনা কর্মকর্তাসহ ৪ সেনা সদস্যও রয়েছেন।

মঙ্গলবার (১৩ জুন) পাহাড়ধসে আটকা পড়া হাজার হাজার মানুষকে উদ্ধারে সকাল থেকে ব্যস্ত হয়ে পড়েন দমকল ও সেনা সদস্যরা। ভোরে রাঙামাটির মানিকছড়িতে একটি পাহাড় ধসে মাটি ও গাছ পড়ে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়ক বন্ধ হয়ে যায়। পরে তাৎক্ষণিকভাবে রাঙামাটি জোন সদরের নির্দেশে মানিকছড়ি আর্মি ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল ওই সড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক করতে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। কাজের মধ্যেই বেলা ১১টার দিকে পাহাড়ের একটি বড় অংশ উদ্ধারকারী দলের ওপর ধসে পড়ে। এতে তারা মূল সড়ক থেকে প্রায় ৩০ ফুট নিচে পড়ে যান। খবর পেয়ে একই ক্যাম্প থেকে আরও একটি উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুই কর্মকর্তাসহ চার সেনাসদস্যকে নিহত এবং ১০ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। আহতদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা সিএমএইচে নিয়ে আসা হয়। তবে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন এক সেনাসদস্য।

স্থানীয় আদিবাসীদের সঙ্গে সেনা সদস্যদের সম্পর্কের চড়াই-উৎড়াইয়ের খবর মাঝে মধ্যেই পাওয়া যায়। তার কারণ, আদিবাসীরা পাহাড়ে সেনাদের উপস্থিতি ভালো চোখে দেখেনা। ফলে মাঝে মাঝেই সেনাদের ওপর গুপ্ত হামলা চালাতেও দ্বিধাবোধ করে না। আর তাদের উদ্ধার করতে বা নিরাপত্তা দিতেই প্রাণ দিতে হলো চার সেনাকে। আরো একজন; আহত হয়েছেন ১০ সেনা সদস্য।

এ ঘটনার পর গতকালবিকালেই ঘটনাস্থলে উদ্ধার কার্যক্রম পরিদর্শন করেন সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক। তিনি হতাহত সব সেনাসদস্য ও তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।

নিহত সেনাসদস্যরা হলেন মেজর মোহাম্মদ মাহফুজুল হক, ক্যাপ্টেন মো. তানভীর সালাম শান্ত, করপোরাল মোহাম্মদ আজিজুল হক ও সৈনিক মো. শাহিন আলম। নিখোঁজ রয়েছেন সৈনিক মো. আজিজুর রহমান।

পাহাড়ধসে নিহত সেনাবাহিনীর মেজর মাহফুজের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের সিংগাইরে। তিনি উপজেলার তালেবপুর ইউনিয়নের ইরতা গ্রামের বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন ও বেনি বেগমের ছেলে। ৩৬ বছর বয়সী এই সেনা কর্মকর্তা ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে যোগদান করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত এবং পাঁচ বছর বয়সী এক ছেলে রয়েছে।

ক্যাপ্টেন মো. তানভীর সালাম শান্তর বাড়ি পটুয়াখালীর বউফল উপজেলার শিংরাকাঠি গ্রামে আবদুস সালাম মোল্লার ছেলে। পরিবারে দুই ভাই-বোনের মধে সে ছিলেন বড়। মাত্র ন’মাস আগে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন ক্যাপটেন তানভীর! বাবা-মায়ের সাথে পরিবারের সবাই ঢাকায় বসবাস করতেন। ২০০৯ সালে তিনি বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে যোগদান করেন। ২৭ বছর বয়সী এই সেনা কর্মকর্তা মাত্র ৯ মাস আগে বিয়ে করেছেন।

সেনাসদস্য করপোরাল মোহাম্মদ আজিজুল হকের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে। তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন ১৯৯৫ সালে। বিবাহিত এই সেনাসদস্যের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। নিহত অপর সেনাসদস্য মো. শাহিন আলমের বাড়ি বগুড়ার আদমদীঘি। ২০০৬ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়া এই সৈনিক এক ছেলের জনক। এ ছাড়া নিখোঁজ সৈনিক মো. আজিজুর রহমান ২০০৫ সালে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। মাদারীপুরের এ সেনাসদস্যের এক মেয়ে রয়েছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!