• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রাণঘাতী থ্যালাসেমিয়া, দেশে বাহক পৌনে দুই কোটি


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ৮, ২০১৮, ১০:৪২ পিএম
প্রাণঘাতী থ্যালাসেমিয়া, দেশে বাহক পৌনে দুই কোটি

ঢাকা : দেশে প্রাণঘাতী রোগ থ্যালাসেমিয়ার প্রকোপ ভয়াবহ হারে বাড়ছে। আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরাও। বর্তমানে অন্তত পৌনে দুই কোটি মানুষ এ রোগের বাহক। চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় সর্বস্ব হারাচ্ছে রোগীরা। রোগী ও রোগের বাহকের তুলনায় দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থাও অপ্রতুল। অধিকাংশ রোগী চিকিৎসা নিতে পারছে না টাকার অভাবে। ফলে এ রোগে মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

রোগটির অন্যতম চিকিৎসা রক্তবদল। হাসপাতালে রক্ত সঙ্কটে এ রোগে আক্রান্তদের আর্তনাদ বাড়ছে। লাল রক্তকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে চলছে কালো বাণিজ্য। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী হাতিয়ে নিচ্ছে রোগীদের টাকা। ভোগান্তির শিকার হচ্ছে রোগীরা। সরকারি হাসপাতাল ও ব্লাডব্যাংকগুলোতে গত এক বছর ধরে বিনামূল্যে বিতরণ বন্ধ আছে রক্ত সঞ্চালনের উপকরণ। পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ রক্ত সঞ্চালনের এসব উপকরণ গরিব রোগীদের কিনতে হচ্ছে। ফলে নিরাপদ রক্ত পাওয়ার ঝুঁকিও বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার (৮ মে) পালন হবে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, থ্যালাসেমিয়ার নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা দেশে নেই। যে হারে এ রোগ ও বাহকের সংখ্যা বাড়ছে, তা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচ মেটাতে রোগীরা সর্বস্ব হারাচ্ছে। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্তদের অভিভাবকের মাসিক আয়ের তথ্য পর্যালোচনা করে তারা বলেন, দেশের শতকরা ৪৪ শতাংশ রোগীর আয় ১০ হাজার টাকার নিচে। ২৯ শতাংশ রোগীর আয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে। ফলে ব্যয়বহুল এ রোগের চিকিৎসা খরচ অধিকাংশ অভিভাবক বহন করতে পারেন না। বাংলাদেশ সোসাইটি অব হেমাটোলজির এক জরিপে অভিভাবকদের আয়ের এ তথ্য উঠে এসেছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। রোগীদের নিয়মিত ওষুধ সেবন ও রক্ত নিতে হয়। দেশে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগীর পক্ষে তা নিয়মিত সম্ভব নয়। সচেতনতার মাধ্যমে রোগটির প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।’

বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্তদের সাধারণত প্রতি দুই সপ্তাহ পর নিয়মিত রক্ত নিতে হয়। অনেকেরই নিয়মিত রক্ত কেনার সামর্থ্য থাকে না। তারা রক্তদাতার ওপর নির্ভর করেন। আবার টাকা থাকলেও সব সময় রক্ত মেলে না।
তথ্যমতে, দেশে বছরে প্রায় ৯ লাখ ব্যাগ রক্ত পরিসঞ্চালন হয়। এর মধ্যে শতকরা ৬৯ ভাগ রক্ত আত্মীয়স্বজন থেকে আর ৩১ ভাগ স্বেচ্ছায় রক্তদাতার কাছ থেকে সংগ্রহ হয়।

থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত তিন লাখের বেশি শিশুকে প্রতি ২ থেকে ৪ সপ্তাহ পর রক্ত দিতে হয়। অস্ত্রোপচার ছাড়াও বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আহতদের জন্য রক্তের প্রয়োজন হয়। সংগৃহীত রক্তের ৬০ ভাগই ব্যয় হয় থ্যালাসেমিয়া রোগীদের চিকিৎসায়। বিভিন্ন প্রচারণার পরও বাড়ছে না স্বেচ্ছায় রক্তদাতার সংখ্যা। গত দশ বছরে শতকরা ১০ থেকে বেড়ে ৩১ ভাগে দাঁড়িয়েছে রক্তদাতার সংখ্যা। ফলে রক্তের সঙ্কট লেগে থাকে।

অন্যদিকে সরকারি হাসপাতাল ও ব্লাডব্যাংকগুলোতে রক্ত সঞ্চালনের উপকরণ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। দাতা সংস্থার সহায়তায় নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন কর্মসূচির আওতায় সরকার সরবরাহ করে এগুলো। তবে গত এক বছর ধরে সরবরাহ বন্ধ। সরকারি হাসপাতালসহ ২১৯টি ব্লাডব্যাংক ও পরিসঞ্চালন কেন্দ্রে রক্তের ব্যাগ, রি-এজেন্ট ও কিটসসহ প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাবে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই চলছে ঝুঁকিপূর্ণ রক্ত পরিসঞ্চালন। রোগী ও অভিভাবকদের বাইরে থেকে উপকরণ কেনা ছাড়া উপায় নেই। বাইরে থেকে কেনা উপকরণ মান ও স্বাস্থ্যসম্মত কী না, এ প্রশ্ন আছে বিশেষজ্ঞদের।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে এ দেশে থ্যালাসেমিয়ার প্রকোপ, আক্রান্ত ও রোগটি সম্পর্কে অসচেতনতা সম্পর্কে ভয়ানক তথ্য উঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, রোগটি সম্পর্কে জানে না দেশের শতকরা ৫১ ভাগ মানুষ। মোট জনসংখ্যার ১০ থেকে ১২ ভাগ মানুষ থ্যালাসেমিয়ার বাহক। এ হিসাবে মানুষের সংখ্যা দাঁড়ায় এক কোটি ৬০ লাখ থেকে এক কোটি ৯২ লাখ। প্রতি বছর এ রোগের বাহক হয়ে জন্ম নিচ্ছে ১২ হাজার শিশু।  বিশ্বে সব মিলিয়ে থ্যালাসেমিয়ার বাহক প্রায় ২৫ কোটি মানুষ।

সোসাইটি অব হেমাটোলজির দেয়া তথ্যমতে, দেশে থ্যালাসেমিয়ার মারাত্মক রোগীর সংখ্যা অন্তত ৬০ হাজার। দেশে প্রতি বছর অন্তত ৭ হাজার শিশু জন্ম নিচ্ছে ‘থ্যালাসেমিয়া মেজর’ ও ‘ই-বিটা থ্যালাসেমিয়া’ নিয়ে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, থ্যালাসেমিয়া বংশগত রোগ। সচেতনতার মাধ্যমে রোগটির নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!