• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘প্রীতম-প্রিয়ন্তী’ ক্ষুদ্র জাদুঘর ও দূর্লভ সংগ্রহশালা


নাটোর প্রতিনিধি এপ্রিল ১১, ২০১৭, ১০:৪৮ এএম
‘প্রীতম-প্রিয়ন্তী’ ক্ষুদ্র জাদুঘর ও দূর্লভ সংগ্রহশালা

নাটোর: জেলার চলনবিলের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সংগ্রহশালা ‘প্রীতম-প্রিয়ন্তী’ ক্ষুদ্র জাদুঘর ও পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সখের বশে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই সংগ্রহশালাটি ইতোমধ্যে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। প্রতিদিন উৎসুক দর্শনার্থীদের ভীড় বাড়ছে এসব নিদর্শন দেখার জন্য।

নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসদরের চাঁচকৈড় পুরানপাড়া মহল্লায় গুরুদাসপুরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ আয়নাল হক তালুকদারের মেজো ছেলে আবুল কালাম আজাদ ব্যক্তি উদ্যোগে এবং এলাকাবাসীর সহায়তায় ১৯৯৪ সাল থেকে সংগ্রহশালাটি গড়ে তোলেন।
মূলতঃ চলনবিল অঞ্চলের ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সংরক্ষনের ব্রত নিয়ে নিজ বাড়িতে ছোট্ট একটি কক্ষে এর যাত্রা শুরু হয়। নিদর্শনাবলীর সংগ্রহ বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে সংগ্রহশালার আয়তনও। ৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৯ ফুট প্রস্থের ৩টি কক্ষে বর্তমানে সংগ্রহশালার কার্যক্রম চলছে। এর আয়তন আরও বাড়ানো হবে বলে জানান আজাদ তালুকদার।

সংগৃহিত নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে ছয়টি পিতলের পাত্র। সেখানে রক্ষিত ধনদৌলত। মাঝখানে দুটি বিষধর সাপ পাহারা দিচ্ছে। কল্পকাহিনী সর্বস্ব ধনভান্ডার নয়। দেশ-বিদেশের মুদ্রা (কয়েন) দিয়ে সাজানো ধনভান্ডারে বসানো হয়েছে প্লাস্টিকের সাপ। নামকরণ করা হয়েছে রত্নভান্ডার। রত্নভান্ডারের আশেপাশে রয়েছে দেড়শ’ বছরের পুরানো হাতির দাঁত। সোয়াকেজি ওজনের সামুদ্রিক ঝিনুক। আধাকেজি ওজনের কড়িসহ নানা প্রাচীন নিদর্শন।

এছাড়াও ১৬৭টি দেশের নোট কয়েন, ছোট্ট কুরআন শরীফ, বিভিন্ন সময়ের স্বর্ণ রৌপ্য, তাম্র ও ধাতব মুদ্রা এবং বিভিন্ন ধরনের প্রস্তর ও পোড়ামাটির ভাস্কর্য রয়েছে এখানে। সোনার চামচ, রূপার গ্লাস, চাঁদির প্লেট ও মুকুট, পিতলের প্রাচীন বাটি, সিঁদুরদানীসহ রয়েছে নানা প্রকার প্রাচীন ঐতিহ্য।

নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজবাড়ির ঐতিহ্যবাহী জিনিসপত্রের মধ্যে মাটির তৈজসপত্র, পিতলের কলস, মূর্তি, শামুক, পাটের জুতা, পুরাতন কাঠের খড়ম, কলের গান, অধুনালুপ্ত, ঢেঁকি, নাঙ্গল ও নাঙ্গলের ইস্, মাথাল, কাঁড়্যাল, মুগুর, খাড়–পঞ্চমীও রয়েছে। তাছাড়া দেশি ফল গাছের পাতা ও বিভিন্ন জাতের মাছ দিয়ে প্রায় ৫০ আইটেমে লেখা আজাদের প্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদি এবং সেনাবাহিনীর যুদ্ধাবস্থার ম্যূরালও রয়েছে।

বিশ বছর ধরে দেশবিদেশ থেকে নানা নিদর্শন সংগ্রহ করে চলেছেন আজাদ তালুকদার। পেশায় গার্মেন্ট ব্যবসায়ী আজাদ তালুকদার। অর্থ থাকলেও সময়াভাবে ইচ্ছেমতো সংগ্রহশালাটি সমৃদ্ধ করতে পারেননি বলে জানান। মাঝপথে থেমে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার উৎসুক ছেলে মেয়ে প্রীতম ও প্রিয়ন্তীর আবদারে আবার শুরু করেন সংগ্রহশালার কার্যক্রম। শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য সংগ্রহশালাটি উন্মুক্ত রাখা হয়।

আজাদের বাবা আয়নাল হক তালুকদার বলেন, আজাদের এসব প্রাচীন নিদর্শন সংগ্রহ করা দেখে খেয়ালিপনা মনে হতো। অনেক টাকাও ব্যয় করেছে। এসব পাগলামির জন্য তাকে গালমন্দ শুনতে হয়েছে। আজাদ তবু থামেনি। এখন ওর সংগ্রহশালায় দর্শনার্থীদের ভীড় দেখে ভালোই লাগে।

গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনির হোসেন বলেন, নতুন এসেছি, বিষয়টি জানা নেই। অল্প সময়ের মধ্যেই সেখানে গিয়ে সংগ্রহশালা দেখবো এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যা যা করা যায় তা অব্যশই করবো।

চলনবিলসহ দেশ বিদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষন করাই সংগ্রহশালাটির প্রধান উদ্দেশ্য বলে আবুল কালাম আজাদ জানান।
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ সংগ্রহশালাটি আরও সমৃদ্ধ করা সম্ভব। আগামী প্রজম্ম অতিতের বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া নানা সামগ্রির নিদর্শন তার জাদুঘরে দেখে জানতে পারবে। এ ধরনের সংগ্রহশালা গড়ে তুলে ভবিষ্যতের সন্তানদের সচেতন ও শিক্ষায় উৎসাহিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ নেয়া দরকার।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!