• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রেমিক যুগল ও বখাটেদের দখলে গোপালগঞ্জ লেক পার্ক!


এম আরমান খান জয়, গোপালগঞ্জ জানুয়ারি ৯, ২০১৮, ০৮:০৭ পিএম
প্রেমিক যুগল ও বখাটেদের দখলে গোপালগঞ্জ লেক পার্ক!

গোপালগঞ্জ : ইট-পাথরের এই শহরে জীবনযুদ্ধে ব্যস্ত থাকেন প্রতিটি মানুষ। কাজের ফাঁকে একটু ফুরসত পেলে সবাই চান নিজের মতো করে কিছুটা সময় কাটাতে। পরিবার-পরিজন কিংবা কাছের মানুষের সঙ্গে নির্বিঘ্নে সময় কাটাতে মানুষ যান কোলাহলমুক্ত ও সবুজে ঘেরা কোনো পার্ক বা উদ্যানে। কিন্তু পার্ক বা বিনোদন কেন্দ্রে এসে অনেককেই বিনোদনের পরিবর্তে মুখোমুখি হতে হয় উটকো ঝামেলার। স্বস্তির বদলে মেলে বিরক্তি ও নিরাপত্তাহীনতা।

গোপালগঞ্জ শহরের মধ্যখানে উন্মুক্ত স্থানে নিঃশ্বাস নেয়ার জায়গা বিনোদনের প্রাণকেন্দ্র লঞ্চঘাট এলাকার লেকপার্ক। নির্মল পরিবেশে আনন্দময় সময় কাটানোর জন্য এলাকাটি দিন দিনই মানুষের পদভারে মুখরিত হচ্ছে। পরিবার-পরিজন ও শিশু-কিশোরদের নিয়ে সেখানে ছুটে আসেন চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিকসহ নানা পেশাজীবীর হাজারো মানুষ। যেন এক মহামিলনের উৎসবে মাতোয়ারা বিনোদনপ্রেমীরা।

রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় গোপালগঞ্জের লেক পার্ক। পার্কের বেঞ্চগুলোতে বিভিন্ন বয়সের মানুষকে বসে থাকতে দেখা যায়। পার্কে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের একটি বড় অংশ প্রেমিক যুগল। আবার প্রেমিক যুগলদের মধ্যে একটি বড় অংশ স্কুল-কলেজে পড়ুয়া তরুণ-তরুণী। এমনই এক প্রেমিক জুটির সঙ্গে কথা হয় সোনালীনিউজের প্রতিবেদক এম আরমান খান জয়ের। দুজনের পরনেই স্কুল ড্রেস ও কাঁধে ব্যাগ। তারা দুজনই গোপালগঞ্জের একটি স্কুল/কলেজের শিক্ষার্থী।

দুপুর সাড়ে ১২টা। পার্কের লেকের পাশে এক ছেলে ও এক মেয়েকে একসঙ্গে বসে থাকতে দেখা যায়। আর তাদের চারদিকে জটলা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তিন তরুণ। কোনো একটা বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি আঁচ করা যায়। কিছুক্ষণ পর তিন তরুণ সেখান থেকে চলে যায়। পরে ওই ছেলে ও মেয়ের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ। ছেলেটির ছদ্মনাম সেজাউল (২৩)। তিনি মুকসেদপুর উপজেলার বাসিন্দা। মেয়েটির নাম টুম্পা খাতুন (১৮)। সেজাউল এ প্রতিবেদককে বলেন, সোমবার দুজনেরই সুযোগ থাকায় একান্তে সময় কাটাতে গোপালগঞ্জ লেক পার্কে এসেছেন। দুজনে পাশাপাশি বসে কথা বলছিলেন। এই দৃশ্য দেখে ওই তিন যুবক তাদের কাছে এসে জিজ্ঞাসা করেন তারা কোথায় থাকেন। এরপরই বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দিয়ে ওই তিন তরুণ টাকা দাবি করেন। চিৎকার করে সবাইকে চাঁদাবাজির কথা বলে দেয়ার কথা বলার পর তিন তরুণ সেখান থেকে কেটে পড়েন বলে জানান ভুক্তভোগী এই প্রেমিকযুগল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লেক পার্কে অনেক সিন্ডিকেট রয়েছে। লেক পার্কের ভেতরে ছোলা ও বাদাম বিক্রেতা এক ব্যবসায়ী বলেন, পার্কের ভেতরে প্রায়ই বিভিন্ন অপকর্ম হয়। দিনের বেলা একটু কম হলেও সন্ধ্যার দিকে অপকর্ম বেড়ে যায়। এ সময় পার্কে অবস্থান করা মানুষজনকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে কিছু বখাটে। অনেক সময় জোর করে টাকা-পয়সাও ছিনিয়ে নেয়।

শুধু তাই নয় গোপালগঞ্জ লেকপার্ক এলাকার এই অনন্য সৌন্দর্যের মাঝেও চোখে পড়ে কিছু দুর্ভোগ ও অস্বাভাবিক পরিবেশ। উঠতি বয়সী ছেলেদের মোটরবাইক নিয়ে লেকের পাড়ের ভেতরে ভো ভো করে ছোটাছুটি, প্রকাশ্যে ধুমপান ও অসামাজিক কার্যকলাপের কারণে দর্শনার্থীদের প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ আর বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।

দর্শনার্থীদের অনেকেই অভিযোগ করেন, গোপালগঞ্জ লেকপার্ক খোলামেলা এলাকা ক্রমেই বখাটেদের দখলে চলে যাচ্ছে। তারা মোটরবাইকে বেপরোয়া গতি তুলে নারীদের উত্যক্ত করছে। প্রায়ই নারীরা নানা ধরনের হেনস্তার শিকার হয় এখানে। শিশুদের নিয়ে ঘুরতে এসে বিব্রত অবস্থায় পড়েন অভিভাবকরা। এখানে আগত অ্যাড. মেহেদী হাসান জানান, পার্কে ঘুরতে আসার আগের সেই পরিবেশ নেই। কারণ আমাদের সমাজে কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী এমনকি মাঝ বয়সীদের মাঝে পশ্চিমা সংস্কৃতির ভূত চেপে বসেছে। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে পার্কে। সঙ্গত কারণে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে পার্কে আসার আগের সেই পরিবেশ নেই। কিন্তু এসব প্রতিকারে প্রশাসন বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো ভূমিকা নেই।

দর্শনার্থীরা বলছেন, প্রতিদিন বিকাল বেলায় এখানে হাজার হাজার মানুষ আসেন একটু নির্মল আনন্দময় পরিবেশে সময় কাটাতে। সেটি যেন বখাটেপনার কারণে নষ্ট হয়ে না যায়, এ জন্যে প্রশাসন বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন।
   
সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!