• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রেমের টানে প্রাসাদ ছেড়ে বাংলাদেশে এসেছেন যারা


ফিচার ডেস্ক সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৭, ০২:০৬ পিএম
প্রেমের টানে প্রাসাদ ছেড়ে বাংলাদেশে এসেছেন যারা

ঢাকা: ভালবাসাকে নিজের করে পেতে প্রাসাদ ছাড়ে কুঁড়ে ঘরে উঠার উদাহরণ অনেক আছে। সম্প্রতি তো জাপানের রাজকুমারী তার প্রেমিকের জন্য প্রাসাদ ছেড়ে সাধারণ এক ফ্লাটে উঠেছেন। শুধু প্রেমিকা নয় অনেক প্রেমিকও এমন দৃষ্টান্ত রেখেছেন- তেমিন মালয়েশিয়ার এক রাজকুমারীকে পেতে ডাচ এক সাধারণ ছেলে মুসলিম হয়ে রাজকুমারীকে বিয়ে করেছেন। এতো গেল বিদেশিদের কথা। প্রেমিককে পেতে সাত সমুদ্র তের নদী পড়ি দিয়ে বাংলাদেশে জীর্ন কুঠিরে এসে ঠাঁই নিয়েছেন আনেক ধনীর দুলাল ও দুলহানিরা। 

ভাষা-সংস্কৃতি, ধর্ম-বর্ণসহ নানা সংস্কার ও ভেদাভেদ ভুলে শুধু প্রেমের টানে বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন তারা। ঘর ছেড়েছেন ভালোবাসার টানে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পরিচয়ে হাজার হাজার কিলোমিটার দূর থেকে উড়ে এসেছেন বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে। 

সখিপুরের ছেলে মনিরুল ও মালয়েশিয়ান তরুণী জুলিজা

মালয়েশিয়া থেকে টাঙ্গাইল

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে টাঙ্গাইলের ছেলে মনিরুলের সঙ্গে পরিচয়, এরপর প্রেম। অবশেষে এক মাসের ভ্রমণ ভিসায় মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে চলে আসেন মালয়েশিয়ান তরুণী জুলিজা। সখীপুর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কলেজ মোড়ের বাসায় পৌঁছান তারা। জুলিজা বয়স ২২ বছর আর তার বাবার নাম কামিস। জুলিজা গণমাধ্যমে জানান, তিনি পড়াশোনা শেষ করে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে বাবার বেকারির ব্যবসা পরিচালনা করেন। তিনি আরো জানান, ‘মনিরুলের কাছে এ দেশের প্রকৃতি সম্পর্কে জেনেছি। বাংলাদেশ ও মনিরুলকে দারুণ পছন্দ হয়েছে আমার। আমি খুব খুশি।’ তবে পারিবারিক কারণে মালয়েশিয়া ফিরে যান জুলিজা।

মিঠুন ও এলিজাবেথ

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঝিনাইদহ

ভালোবাসার টানে বাংলাদেশের ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার রাখালগাছী গ্রামে মিঠুন বিশ্বাসের বাড়িতে ছুটে আসেন মার্কিন তরুণী এলিজাবেথ এসলিক। এলিজাবেথের বাড়ি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের ওরিয়েন্ট এলাকায়। খ্রিস্টান ধর্মের বিধান অনুযায়ী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এলিজাবেথ ও মিঠুন। এলিজাবেথ গণমাধ্যমে বলেন, ‘সত্য ভালোবাসা সীমানা মানে না। মানে না জাত, ধর্ম, বর্ণ। ভালোবাসার জন্য মরণও আনন্দের। প্রেম মানুষকে মহান করে তোলে। সত্যিকারের মানুষ হতে শিক্ষা দেয়। ’ 

ওয়াশিংটনে থাকেন এলিজাবেথের বাবা রয় এসলিক ও মা সনিয়া এসলিক। পরিবারে আরো দুই ভাই আছে। ১৯৯৭ সালের ৭ জুলাই জন্ম তার। আর মিঠুন একটি এনজিওতে কাজ করেন। এর আগে দেড় বছর সিঙ্গাপুরে ছিলেন তিনি। ২০১৫ সালের মে মাসে ফেসবুকের মাধ্যমে মিঠুন ও এলিজাবেথের পরিচয় হয়। সেই থেকে চলে প্রেম নিবেদন। মিঠুন বিশ্বাস গণমাধ্যমে বলেন, ‘আড়াই বছরের সম্পর্কের পর আমরা সিদ্ধান্ত নিই বিয়ে করার। দুজনের পরিবারকেও তা জানাই। এতে আমার পরিবার কোনো আপত্তি না জানালেও এলিজাবেথের পরিবার বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ’

ইসহারি ও জহুরুল

মালয়েশিয়া থেকে চুয়াডাঙ্গা

জাত, ধর্ম, বর্ণ বা বয়স মানে না ভালোবাসা। কথাটা সত্যি প্রমাণ করে দিয়ে প্রেমের টানে সুসূর মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন ইসহারি নামের চল্লিশোর্ধ এক নারী। তিনি বাংলাদেশে এসে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ফরিদপুর গ্রামের ২৫ বছর বয়সী জহুরুল ইসলামের বাড়িতে উঠেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায় আলমডাঙ্গা উপজেলার ফরিদপুর গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে জহুরুল ইসলাম ২১ বছর বয়সে মালয়েশিয়ায় যান। সেখানে চার বছর অবস্থান করে অবশেষে দেশে ফিরে আসেন। এ সময়ই তার সঙ্গে পরিচয় হয় ইসহারির। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর জহুরুল দেশে ফিরে আসলে তার কিছুদিন পরই মালয়েশিয়া থেকে ছুটে আসেন চল্লিশোর্ধ্ব নারী ইসহারি। 

অনীক খান ও সুফিয়া খাতুন

থাইল্যান্ড থেকে নাটোর

প্রেমের টানে বাংলাদেশে ছুটে আসেন থাই-কন্যা সুফিয়া। বিয়ে করেন ভালোবাসার মানুষকে। নাটোরের আদালতে বিয়ের কাজটি সম্পন্ন করেন তারা। এই দম্পতি হলেন থাইল্যান্ডের সুপুত্তো ওরফে ওম ওরফে সুফিয়া খাতুন এবং বাংলাদেশের অনীক খান। সুপুত্তো ওরফে সুফিয়া খাতুন গণমাধ্যমে বলেন, ‘থাইল্যান্ডের সমাজে বহু বিবাহ একটা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি এটা পছন্দ করি না। তাই বিয়ে করছিলাম না। হঠাৎ করে ফেসবুকে বাংলাদেশের অনীকের সঙ্গে পরিচয় হয়। ওর সরলতা আমাকে মুগ্ধ করে। ধীরে ধীরে ওর প্রতি আমার আস্থা জন্মেছে। আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি।

বরিশালের সাইদুল আলম রুমানের স্ত্রী এমিলি পার

অস্ট্রেলিয়া থেকে বরিশাল

প্রেমের টানে সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে সপরিবারে বরিশালে এসে ধর্মান্তরিত হয়ে প্রেমিককে বিয়ে করার অনন্য নজির স্থাপন করেন অস্ট্রেলিয়ার তরুণী এমিলি পার। মনের মানুষকে পেতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তিনি। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বরিশালের সাইদুল আলম রুমানের স্ত্রী এমিলি পার এখন এমিলি আলম। বরিশাল মহানগরীর আলেকান্দা এলাকার মরহুম শামছুল আলম বাবুলের ছেলে সাইদুল আলম রুমানকে বিয়ে করতে পরিবারের ১৮ সদস্য নিয়ে বাংলাদেশে আসেন এমিলি। এমিলির পিতা মাতা, ভাই বোন, খালা খালু, ফুফু, ফুফাসহ ১৮ জন বরিশালে আসার পরপরই মুসলিম রীতি অনুযায়ী বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। এর আগে নগরীর হোটেল এরিনা থেকে রিকশায় চড়ে বরিশাল ক্লাব মিলনায়তনে বিবাহোত্তর অনুষ্ঠানে যান বধূ সাজে এমিলি। সে সময় তাদের বিয়ে খবর সারা দেশে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।

অস্ট্রেলিয়ার ক্যাথরিনা ও চন্দন

অস্ট্রেলিয়ার ক্যাথরিনা

অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনার সুবাদে বাংলাদেশি কাজী মারুফুজ্জামান চন্দনের সঙ্গে অস্ট্রেলীয় নারী ক্যাথির পরিচয়। পরিচয় থেকে প্রেম এবং প্রেমের টানেই সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে মাগুরায় এসে সংসার পেতেছেন আসান ক্যাথরিনা নামের এই নারী। মাগুরা শহরের কাজী মারুফুজ্জামান চন্দনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এই নারী। মেলবোর্নের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শ্রেণির শিক্ষার্থী। 

পোল্যান্ডের ক্যাটরিনা স্যান্ড্রার সঙ্গে শামীম

পোল্যান্ড থেকে ঢাকার রাজারবাগ

ক্যাটরিনা স্যান্ড্রা পোল্যান্ডের অধিবাসী। চাকরির সুবাদে আছেন লন্ডনে। বাবা মারা গেছেন। মা থাকেন পোল্যান্ডে। তার সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় ছেলেটি বাংলাদেশ থেকে লন্ডরে পড়তে আসা শামীম আহমদের সঙ্গে। তার পৈতৃক বাড়ি রাজারবাগ। বাবা সরকারি চাকরিজীবী। শামীম লন্ডনে পড়াশোনা করতে গিয়েছিল। সেখানে থাকা অবস্থাতেই ফেসবুকে পরিচয় হয় ক্যাটরিনার সঙ্গে। তারা শুধুই বন্ধু, তখনো কেউ কাউকেই দেখেনি।

এদিকে শামীমের জন্য লন্ডনে এইভাবে লুকিয়ে থাকা বিনা চাকরিতে আর সম্ভব হচ্ছিল না তাই সে দেশে ফেরার জন্য ওখানকার পুলিশের কাছে ধরা দেয়। এরপর ক্যারিনার চেষ্টাতে শামীমকে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এ বছর আগস্টে বাংলাদেশে চলে আসেন তিনি। শামীমের সঙ্গে ক্যাটরিনা স্যান্ড্রার বিয়ে হয় মুসলমান রীতিতে। 

মালয় মেয়ে ফাতেমা ও আশিকুর রহমান

মালয়েশিয়ার ফাতেমা

ভালোবাসার জন্য মালয়েশিয়ার মেয়ে ফাতেমা বিনতে আবদুর রহমান বাংলাদেশে আসেন। আশিকুর রহমান আশিকের সঙ্গে মালয়েশিয়ান তরুণী ফাতেমা হাজির হন ঢাকা জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট মাহবুব হাসান রানার চেম্বারে বিয়ের উদ্দেশে। ফাতেমাকে দেখে উপস্থিত অনেকে প্রথমে মনে করেছিলেন তিনি হয়তো আদিবাসী সম্প্রদায়ের মেয়ে। আশিকের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানার মন্দিবাগে। ফাতেমাকে সেখানেও নিয়ে যায় আশিক। ফাতেমা কুয়ালালামপুরের একটি কলেজের ছাত্রী। ৮ বছর আগে তিনি মালয়েশিয়া যান কাজের সন্ধানে। ২০১৩ সালে তার সঙ্গে ফাতেমার পরিচয় হয়।

ধর্মকান্ত সরকারকে বিয়ে করেন সিভেতলেনা

রাশিয়া থেকে শেরপুর

প্রেমের টানে শেরপুরে ছুটে আসেন রাশিয়ান এক তরুণী। প্রেমিকের নাম ধর্মকান্ত সরকার। রাশিয়ান ওই তরুণীর নাম সিভেতলেনা। ধর্মকান্ত সরকার শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সন্ন্যাসীভিটা গ্রামের ধীরেন্দ্র কান্ত সরকারের ছেলে। সনাতন ধর্ম মতে যজ্ঞ সম্পাদন করে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনা ও তত্ত্বাবধান করেন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ-ইস্কনের শেরপুর শাখার সদস্যরা। 

টিউ থিতু ও আলমগীরের ঘরে এখন ফুটফুটে সন্তান

ভিয়েতনাম থেকে চাঁদপুর

প্রেমের টানে বাংলাদেশে আসেন ভিয়েতনামী তরুণী। প্রেমিক চাঁদপুরের যুবক আলমগীর। তার বয়স ৩৫। প্রেমিকা টিউ থিতু। তার বয়স ৩০। ভিয়েতনামী এই কন্যা বাংলাদেশি যুবক আলমগীরকে ভালোবেসে এদেশে সংসার পেতেছেন। ভালোবাসার সূচনা হয়েছিল মালয়েশিয়ায়। আর এর  বাস্তবে পরিণতি ঘটে বাংলাদেশের মাটিতে। মানুষের বিড়ম্বনা এড়াতে দীর্ঘদিন থাকেন তারা লোক চক্ষুর আড়ালে। কিছুদিন আগে এই দম্পতি নিজেদের এলাকায় গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার পৌর শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের লদের বাড়ির মৃত মোবারক হোসেনের ছেলে মো. আলমগীর হোসেন ১০ বছর আগে জীবিকার প্রয়োজনে মালয়েশিয়ায় জোহরবারুতে পাড়ি জমান। সেখানে এক চাইনিজ কোম্পানিতে চাকরি করেন। ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে বাকান থানার ওয়েন তোং মহল্লায় টিউ থিতুর জন্ম। সেখানে বাবা মৃত চি ইউ তাই আর মা টিউ থিতু নিয়াত ও ৪ ভাই, ৩ বোনের মাঝে থেকে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা শেষ করেন তিনি।

লাল বেনারসি শাড়ি পরে বসেন বিয়ের পিঁড়িতে ডা. ইফা রায়ান

আয়ারল্যান্ড থেকে বিয়ানীবাজারে

ভালোবাসার টানে সুদূর আয়ারল্যান্ড থেকে ঢাকার বিয়ানীবাজারে ছুটে আসেন ডা. ইফা রায়ান। যথারীতি বাঙালি নারীর বেশেই লাল বেনারসি শাড়ি পরে বসেন বিয়ের পিঁড়িতে। বিয়ানীবাজার উপজেলার ঘুঙ্গাদিয়া গ্রামের বাসিন্দা তাজউদ্দিনের পুত্র মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে তার এ বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের অনুষ্ঠানে আয়ারল্যান্ড থেকে আসেন ইফার মা ক্যাটরিনা রায়ান, বাবা জন রায়ান ও ভাই অউন রায়ান। 

ব্রাজিল কন্যা জেইসা ওলিভেরিয়া সিলভা বিয়ের পিঁড়িতে বসেন বাস কন্ট্রাক্টর সঞ্জয়ের সঙ্গে

ব্রাজিল থেকে রাজবাড়ী

ফেসকুকে পরিচয় হয় ব্রাজিল কন্যা জেইসা ওলিভেরিয়া সিলভার সঙ্গে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার সঞ্জয়ের। এরপরই তাদের প্রেম। অবশেষে প্রেমিকতে পেতে নেইমারদের দেশ থেকে রাজবাড়ীতে আসেন সিলভা। এর আগে প্রায় দেড় বছর ধরে ফেসবুকে চলত তাদের যোগাযোগ। জেইসা ওলিভেরিয়া সিলভা ব্রাজিলের সাওপাউলোর বাসিন্দা। তিনি সেখানে সরকারি চাকরি করেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে সঞ্জয় ঘোষ রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের বাজার এলাকার বালাই ঘোষের ছেলে। সঞ্জয় শ্যামলী পরিবহনের ঢাকা-কলকাতা সার্ভিসে কর্মরত বলে জানা যায়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!