• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফখরুলকে শিবির নেতার চ্যালেঞ্জ, লিটনকে শুভেচ্ছা!


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ৩০, ২০১৮, ০৪:০৫ পিএম
ফখরুলকে শিবির নেতার চ্যালেঞ্জ, লিটনকে শুভেচ্ছা!

ঢাকা: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জামায়াত ছাড়াই তারা জিততে পারবেন। কিন্তু রাজশাহীর শিবির নেতা আশরাফুল আলম ইমন পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গ ছাড়া বিএনপির পক্ষে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই আসা সম্ভব হবে না।

রাজশাহীর নতুন মেয়র হিসেবে আওয়ামী লীগের এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে আগাম শুভেচ্ছাও জানিয়ে রেখেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সাবেক এই সভাপতি। 

রাত পোহালে কাল ভোট। তারপর গণনা। মেয়র কে হলেন, সে ঘোষণা আসতে আসতে মধ্যরাত। কিন্তু বিএনপির ব্যর্থতা তুলে ধরে শিবির নেতার ১৫ জুলাইর দেয়া আগাম ঘোষণা, জিততে পারবেন না বুলবুল। আর এর পেছনে কারণ হিসেবে, বিএনপিকে সাবেক মেয়র বুলবুলের সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল সেই শিবির নেতা জামায়াতের সমর্থন না দেয়াকে তুলে ধরেছেন তিনি।

সোমবার যে তিন সিটি করপোরেশনে ভোট হচ্ছে তার মধ্যে সিলেটে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী ১৯ বছর ধরে জোটবদ্ধ বিএনপি ও জামায়াত। আর রাজশাহীতে কাউন্সিলর পদে বিএনপি ও জামায়াতের ১৪ প্রার্থী একে অপরকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। মেয়র পদে জামায়াতের প্রার্থী না থাকলেও তারা বিএনপির মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পাশে নেই। বহু চেষ্টা করেও জোটসঙ্গীকে প্রচারে নামাতে পারেনি প্রধান শরিক।

এর মধ্যে শিবির নেতা আশরাফুল আলম ইমনের ফেসবুক স্ট্যাটাস নতুন আলোচনা তৈরি করেছে রাজশাহীতে। তিনি লেখেন, ‘রাজশাহী বিএনপির ঘাঁটি হওয়া সত্বেও জামায়াতের সঙ্গবিহীন বুলবুল ভাই বিজয়ী হওয়া তো দূরের কথা, ঠিক মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে পারবেন কি না, তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। বিএনপির বর্তমান কার্যক্রমের ফলে অগ্রীম শুভেচ্ছা রাসিকের (রাজশাহী সিটি করপোরেশন) আগামী মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন ভাইকে।’
শিবির নেতার পেসবুক পোস্ট

ইমন তার ফেসবুকে ২০১৩ সালের নির্বাচনে বুলবুলের পক্ষে সাঁটানো নিজের একটি পোস্টারের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘২০১৩ সালের রাসিক নির্বাচনে রাবির গেটে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ভাইয়ের নির্বাচনী ব্যানার ও পোস্টার। সৌজন্যে রাবি শিবির সভাপতি হিসেবে আমার নাম আশরাফুল আলম ইমন লেখা। সেই সময় ছাত্রলীগ বুলবুল ভাইয়ের সকল ব্যানার ছিঁড়লেও এটা ছেঁড়ার সাহস পায়নি। (রাবির গেট ছাড়াও শহরের বিভিন্ন স্থানে শিবিরের উদ্যোগে ব্যানার-পোস্টার টাঙানো হয়)। এখন আমার প্রশ্ন, ২০১৩ সালে জামায়াত-শিবির বুলবুল ভাইয়ের নির্বাচনী মাঠে ছিল, অথচ এবার ২০১৮ সালে নাই কেন? এই ব্যর্থতা কার?’।

ইমনের এই ফেসবুক পোস্টের পর সেখানে নানা মন্তব্যের ঝড় তোলেন দেশের বিভিন্ন স্থানের জামায়াত-শিবিরের কর্মী সমর্থকরা। বিএনপির নেতাদেরকে নিয়ে ব্যাঙ্গোক্তিও করেন কেউ কেউ। এমনকি জোটের প্রধান শরিকের মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভীকে ‘মহিলা দলের নেতা’ বলেও সম্বোধন করেন একজন।

নীজ নাঈম নামে একজন লেখেন, ‘কোন ধার করা, ভাড়া করা ভাইকে শুভেচ্ছা জানাতে আর আগ্রহী না আমরা, আমরা আমাদের ভাইকেই শুভেচ্ছা জানাতে চাই।’

মো. আমিন নামে একজন লেখেন, ‘সকাল ১১টায় ভোট বয়কট করবে। ঘোষণা দিবে মহিলা দলের নেতা রিজভী।’

আবদুল ওয়াহিদ রায়হান লেখেন, ‘জামায়াত ছাড়া বিএনপি অচল, তাহা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে সিলেট ও রাজশাহীতে।’

রায়হানের কমেন্টে আবার একমত পোষণ করে রফিকুল ইসলাম সবুজ লেখেন, ‘আপনার কথার গভীরতা অনেক বেশি। আপনার কথা সঠিক।’ ‘

সরল কথা’ নামে একটি আইডি থেকে লেখা হয়েছে, ‘জোটের দল হিসেবে এটাই জামায়াত-শিবিরের রাজনৈতিক অবস্থান। মাঠে জামায়াত-শিবির সেটাই করছে।’

আসিফ আল মাহমুদ লিখেছেন, ‘আমার মনে হয়, জোট করে আমাদের যতটা না লাভ হয়েছে তার চেয়ে ক্ষতি হয়েছে বেশি। আমার মনে হয়, এখন জোট থেকে বের হয়ে গেলেই ভালো হবে।’

এসএম আবুল বাশার লিখেছেন, ‘জামায়াত-শিবির শুধু ঢাল হিসাবে ব্যবহার হয়। কাজ শেষে ভুলে যায় সবাই।’

আলতাফ হোসাইন লিখেছেন, ‘রাজশাহীতে বিএনপি সব সময়ে নিজেকে একাই ১০০ মনে করে, যখন যেই নির্বাচনের হাওয়া বইতে লাগে তখন শুরু হয় জোট নেতাদের কদর। আসলে তারা কোন দিনই অভিভাবকের ভূমিকা পালন করতে পারে না।’

সাবেক আরেক শিবির নেতা বুলবুলের প্রতি ক্ষোভ ঝেড়ে লেখেন, ‘২০১৩ সালে বিজয়টা আমাদের কষ্টে অর্জিত ছিল। ক্যাম্পাস আর পাশ্ববর্তী এলাকা থেকে পুরো সিটিতে আমরাই প্রচারণা চালিয়েছি, আমরাই কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাহারা দিয়েছি। সর্বস্ব উজাড় করে সহযোগিতা করেছি। বিনিময়ে আমরাই নিজেরা নিজেদের মতো করে বিজয় উৎযাপন করেছি। যারা অন্যদের সহযোগিতাকে কাজে লাগাতে পারে না তাদের জন্য শুধু মৌন সমর্থন ছাড়া আর কী করা যেতে পারে?’

তবে ইমনের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমতও পোষণ করেছেন দু’একজন। তাদের মধ্যে গোলাম আজম নামে এক আইডি থেকে লেখা হয়, ‘কথাগুলো কি স্ববিরোধী হয়ে গেল না? যাদের দ্বারা আমরা আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের হারালাম তাদেরকে সাধুবাদ জানিয়ে অভিনন্দন কতটুকু যুক্তিসংগত? যেহেতু এখনো আমারা জোটের সাথে আছি, হয়তো মনমালিন্য হয়েছে এটার তো সুরাহ হতে পারে টুডে অর টুমোরো?’

ফেরদৌস শাওন লেখেন, ‘আগাম আওয়ামী প্রার্থীকে শুভেচ্ছা জানানো খুবই দৃষ্টিকটু ভাই।’

তবে শাওনের মন্তব্যের প্রতিউত্তরে আহমেদ আবদুল্লাহ নামে একজন লিখেছেন, ‘বাস্তবতাকে অস্বীকার করার মধ্যে কোনো কল্যাণ নাই। রাজশাহীতে বিএনপি প্রার্থী প্রচার প্রচারণা থেকে শুরু করে সব জায়গাতে পিছিয়ে আছে। এরপরও বিএনপি, জামায়াতের সাথে দূরত্ব রেখে চলছে। এখন পর্যন্ত কোন সমন্বয় কমিটি হয়নি। এ অবস্থায় নিশ্চিত আওয়ামী প্রার্থী বিজয়ী হতে চলেছে।’

রাজশাহী সিটিতে এবার শরিক দল বিএনপির কাছে নিজেদের প্রার্থীকে মেয়র পদে দাঁড় করানোর দাবি করেছিল। স্থানীয় জামায়াতের নেতারা এ নিয়ে প্রস্তুতিও নিয়েছিল। দলটির মহানগরের সেক্রেটারি সিদ্দিক হোসেনকে প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে তারা প্রচারও শুরু করেছিল। কারাবন্দী সিদ্দিকের মনোনয়ন তুলতে আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি শেষ পর্যন্ত তাদের ছাড় না দেওয়ায় সিদ্দিকের মনোনয়ন তোলা হয়নি।

এরপর বিএনপি প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে সমর্থন দিতে জামায়াতও নগরীর ১৪টি সাধারণ ও দুটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের জামায়াত সমর্থিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থন দাবি করেছিল।

কিন্তু দলীয় নেতাকর্মীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করিয়ে বিএনপি তাদের সমর্থন দিতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত জামায়াতের দাবি উঠেছিল, আগামী জাতীয় নির্বাচনে রাজশাহী-৩ আসনটি তাদেরকে ছেড়ে দিতে হবে। এটিও মেনে নেয়নি বিএনপি। ফলে রাজশাহীর জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির চরম মতানৈক্য দেখা দেয়।’

রাজশাহীতে জামায়াতের যথেষ্ট ভোট রয়েছে। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে জামায়াতই চ্যালেঞ্জ করেছিল। ওই নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হয়েছিল। আওয়ামী লীগ হয়েছিল তৃতীয়।

এবার সিটি নির্বাচনে জামায়াত বিএনপিকে ভোট না দিলে অন্য কাউকে দেওয়ারও সম্ভাবনা কম। তাই জামায়াত-শিবিরের অনেক কর্মী সমর্থকই এবার ভোট দিতে যাওয়ার ব্যাপারে অনীহার কথা জানিয়েছেন।

রাজশাহী সিটির ২০১৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে হারিয়ে মেয়র হয়েছিলেন বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। তার জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিল জামায়াত-শিবির। রাজশাহীতে শিবিরই ভোট কেন্দ্রে বিএনপির বড় ‘পাহারাদার’ হিসেবে পরিচিত। এবার নির্বাচনে জামায়াত-শিবির পাশে না থাকায় অনেকটাই দুশ্চিন্তায় আছে বিএনপি।

সোনালীনিউজ/জেএ

Wordbridge School
Link copied!