• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ফরিদপুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ফাটল


ফরিদপুর প্রতিনিধি আগস্ট ১৬, ২০১৭, ০৮:০৩ পিএম
ফরিদপুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ফাটল

ফরিদপুর: পদ্মার পানি অস্বাভাবিক গতিতে বেড়ে যাওয়ায় ফরিদপুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। এমনকি ওই ফাটল দিয়ে পানি গড়িয়ে নামতে শুরু করেছে। এছাড়া পদ্মার তীর সংরক্ষণ বাঁধের প্রায় ৩০ ফুট অংশ ধসে পড়েছে।

বুধবার (১৬ আগষ্ট) সকাল ৬টার দিকে পদ্মার পানি বিপদসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। এদিকে গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ২৪ সেন্টিমিটার বেড়েছে।

ফরিদপুরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ বলে পরিচিত সদরের অম্বিকাপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর বাজার এলাকায় গোয়ালন্দ-তাড়াইল সড়কের নিচে ফাটল দেখা দিয়েছে। ওই ফাটল দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। মঙ্গলবার (১৫ আগষ্ট) সকাল থেকে পানিপ্রবাহের বিষয়টি এলাকাবাসীর নজরে আসলে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়। পরে ওই ফাটল মেরামতের উদ্যোগ নেয় ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। বুধবার (১৬ আগষ্ট) দুপুর পর্যন্ত এ পানিপ্রবাহ রোধ করা যায়নি, বরং পানিপ্রবাহ আগের তুলনায় বেড়ে গেছে।

স্থানীয়রা জানায়, জেলা সদরের ডিক্রিরচর ইউনিয়নের বালিয়াঘাট এলাকায় পদ্মার তীর সংরক্ষণ বাঁধের অন্তত ৩০ ফুট ধসে গেছে।

ওই এলাকার বাসিন্দা বিলকিস বেগম জানান, কখন পদ্মার পাড়ের আরো অংশ ভেঙে আমার বাড়ি-ঘর ধইসা পড়ে, সেই ভয়ে সারা রাইত ঘুমাইতে পারি না।

দুই নম্বর ওয়ার্ড আ.লীগ সহ সভাপতি ইউসুফ শেখ বলেন, গত দুদিনে নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধের অন্তত ৩০ ফুট ধসে গেছে। এতে ওই এলাকায় বসবাসরত ১৩টি পরিবার চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সুলতান মাহমুদ বলেন, মোহাম্মদপুর বাজারে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ফাটল মেরামতের চেষ্টা চলছে। ওই বাঁধের ৪০ মিটার অংশ বাঁশের পাইলিং দিয়ে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, বালিয়াঘাট এলাকায় নদীর তীরের সংরক্ষণ বাঁধের অংশবিশেষ ধসে পড়ার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তবে সরেজমিনে পরিদর্শন করে এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে ফরিদপুর সদরের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় সাত হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া চার শতাধিক বাড়িঘর, ২৬টি সড়ক বন্যার পানিতে নিমজ্জিত।

ফরিদপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রভাংশু সোম মহান বলেন, সদর উপজেলায় বুধবার থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। পানিতে নিমজ্জিত ও পানিবন্দী পারিবারসমূহের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশ পাওয়া গেলে ত্রাণ তৎপরতা শুরু করা হবে বলেও জানান তিনি।

অন্যদিকে জেলার সদরপুর উপজেলার পদ্মা-আড়িয়াল খাঁ নদের পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় দিয়ারা নারিকেলবাড়িয়া, চরমানাইর, চরনাসিরপুর ও ঢেউখালী ইউনিয়নের ২৬টি গ্রাম বন্যাকবলিত। পানি বাড়ার পাশাপাশি দুটি নদীতে দেখা দিয়েছে ভাঙন। এতে হুমকির মুখে চরমানাইর ইউনিয়নের চরনাদেরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চরবন্দর খোলা নাদেরিয়া মাদ্রাসা-মসজিদ। স্থানীয়দের সহয়তায় চরাঞ্চলের বড় শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

দিয়ারা নারিকেলবাড়িয়ার ইউপির চেয়ারম্যান মো. নাসির উদ্দিন জানান, ইউনিয়নের ২৫টি গ্রামের ৯০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে  ১২০টি পরিবার।

চরমানাইয়ের ইউপির চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী জানান, আড়িয়াল খাঁর তীব্র ভাঙনে ইউনিয়নের গিয়াসউদ্দিন ফকিরকান্দি, হাজারী হাজিরকান্দি, আদেল উদ্দিন মোল্যারকান্দিসহ ৪টি গ্রামে ১৫০টি পরিবার ভাঙন ও পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

ঢেউখালী ইউপির চেয়ারম্যান মো. ওমর ফারুক ব্যাপারী জানান, হঠাৎ করে নদীর পানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় নদীর পাড়ের কয়েকটি গ্রামে অনেক ক্ষতি হয়েছে। ইউনিয়নের রামসুন্দরডাঙ্গী, চরবলাশিয়া, চন্দ্রপাড়া, হাওলাদারকান্দি, মুন্সীরচর গ্রামে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ৩০০ পরিবার। পানিবন্দী ৪০০ পরিবার।

চরনাসিরপুরের ইউপির চেয়ারম্যান মো. আক্কাচ আলী জানান, ইউনিয়নের ৩৪টি গ্রাম বন্যাকবলিত। পানিবন্দী দুই হাজার পরিবার। নদীর ভাঙনে ২৫০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত।

সদপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আবু এহসান মিয়া জানান, বন্যা ও ভাঙনকবলিত ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। জরুরিভাবে বন্যাকবলিত মানুষের জন্য সাহায্য চেয়ে জরুরি বার্তা পাঠানো হয়েছে। এছাড়া জরুরি প্রয়োজনে চরনাসিরপুর ইউনিয়নের একটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

এদিকে বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় জেলা সদরের পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলমান দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। তাছাড়া সদর, চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলার ২৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধও ঘোষণা করা হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শিবপদ দে জানান, ফরিদপুর সদর, চরভদ্রাসন ও সদরপুরের ২৯টি স্কুল নিমজ্জিত হওয়ায় মঙ্গলবার (১৫ আগষ্ট) থেকে সেগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একইসঙ্গে জেলা সদরের পাঁচটি বিদ্যালয়ে চলমান দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!