• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফারমার্স ব্যাংককে টাকা দিতে হচ্ছে রূপরেখা


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৮, ০৬:৫৭ পিএম
ফারমার্স ব্যাংককে টাকা দিতে হচ্ছে রূপরেখা

ঢাকা: অনিয়ম, দুর্নীতি, বেনামী ঋণ নিয়ে আত্মসাতসহ অসংখ্য অভিযোগ নিয়ে ডুবতে বসেছে দেশের নতুন প্রজন্মের ফারমার্স ব্যাংক। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর ছিলেন এই ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। তার নেতৃত্বেই হয়েছে সব দুর্নীতি।

এক পর্যায়ে পদত্যাগ করে চলে যান ব্যাংক থেকে। সেই ব্যাংক এখন মূলধন সংকটে ভুগছে। সরকারের নির্দেশে রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা মূলধন দেয়া হচ্ছে। এজন্য একটি রূপরেখা তৈরি হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি দেখভাল করছে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে একটি বৈঠকও হয়। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত না হলেও পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ব্যাংকটিকে ১১০০ কোটি টাকা সরবরাহ করবে চার ব্যাংক ও এক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়াত্ব সোনালী, জনতা, রুপালী ও অগ্রণী ব্যাংক এবং সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন বাংলাদেশ (আইসিবি) এ মূলধন সরবরাহ করবে।

দুর্নীতির দায় মাথায় নিয়ে ব্যাংক ছাড়েন সমালোচিত মহিউদ্দিন খান আলমগীর

এখন কোন প্রক্রিয়ায় তা সরবরাহ করা হবে, তা নিয়ে চলছে আলোচনা। যোগানদাতারা চান অর্থগুলো মূলধন হিসেবে যাক। কিন্তু ফারমার্স ব্যাংক চেয়েছে ঋণ হিসেবে। মূলধন হিসেবে নিলে ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদে তাদের প্রতিনিধি দিতে পারবে যোগানদাতারা। কিন্তু ফারমার্স ব্যাংক তা চাচ্ছে না বলে বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে।

কার্যক্রম শুরু করার চার বছরে ব্যাপক অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ দেয়ার পর এখন অনেকটা ডুবতে বসেছে ফারমার্স ব্যাংক। অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ দেয়ার চিত্র বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে বেরিয়ে আসে। এর ফলে ব্যাংকটির তীব্র তারল্য সঙ্কট দেখা দেয়। গ্রাহকদের টাকা দিতে পারছে না ব্যাংকটি। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকটির এমডিকে অপসারণ করে। একই সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়। কিন্তু এতেও তারল্য সঙ্কট কাটছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে বাধ্যতামূলক নগদ জমা (সিআরআর) রাখতে পারছে না তারা।

এ দিকে গ্রাহকের আমানতের অর্থ ফেরত দিতে না পারায় সাধারণ গ্রাহকের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সরকারি, বেসরকারি কোনো গ্রাহকের অর্থই ফেরত দিতে পারছে না ব্যাংকটি। সর্বশেষ গত ২২ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ফারমার্স ব্যাংকের ঢাকার বিভিন্ন শাখা জলবায়ু পরিবর্তন ফান্ডের মোট ৫০৮ কোটি ১৩ লাখ ২৯ হাজার টাকা ফেরত দিচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শরণাপন্ন হয়েছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে বিআইডব্লিউটিএ।

গত এক বছর ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে নগদ জমা (সিআরআর) রাখতে পারছে না ফারমার্স ব্যাংক। ক্রমাগতভাবে সিআরআর ঘাটতির ফলে ইতোমধ্যে ব্যাংকটির সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জরিমানার আদেশ দেয়া হয়েছে, যার ৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ফারমার্স ব্যাংকের বিরুদ্ধে একাধিক তদন্ত করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০১৩ সালের ৩ জুন ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই ঋণ নিয়মাচার পরিপালনে এবং ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় শিথিলতা দেখা দেয়। ফলে ব্যাংকটিতে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম সংঘটিত হতে থাকে। মোটা দাগে ১৩টি বিশেষ অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে ব্যাংকের নিজস্ব ঋণ নীতিমালা অনুসরণ না করে গ্রাহকদের ঋণসুবিধা প্রদান করা হয়েছে।

ঋণের অর্থের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত না করে গ্রাহকদের উদ্দেশ্যবহির্ভূত খাতে অর্থ স্থানান্তরের পরোক্ষ সহায়তা করা হয় ব্যাংক থেকে। অস্তিত্ববিহীন ও সাইনবোর্ডসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ঋণ অনুমোদন দেয়া হয়। ঋণ নিয়মাচার লঙ্ঘন করে ব্যাংকের পরিচালকসহ অন্য ব্যাংকের পরিচালকদের ঋণ প্রদান করা হয়। অপর্যাপ্ত ও ত্রুটিপূর্ণ জামানতের বিপরীতে ঋণ প্রদান ও খেলাপি গ্রাহকের বিপরীতে ঋণ প্রদান করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সূত্র জানিয়েছে, ফারমার্স ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন দেড় হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিশোধিত মূলধন রয়েছে ৪০০ কোটি টাকা। বাকি ১ হাজার ১ শ’ কোটি টাকা জোগান দেয়ার জন্য সরকারের ইঙ্গিত রয়েছে। কী প্রক্রিয়ায় এ তহবিলের জোগান দেয়া হবে সে বিষয়ে একটি রূপরেখা তৈরি করা হচ্ছে।

সোনালীনিউজ/তালেব

Wordbridge School
Link copied!